প্রায় সারাবছরই বিভিন্ন প্রকার কপি পাওয়া যায়। ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকোলি ইত্যাদির চাহিদাও সারাবছরই থাকে। অসময়ে কপি চাষ করে কৃষক লাভবান হলেও বিভিন্ন কারণে লোকসান হওয়ার আশঙ্কাও থাকে প্রবল। বিশেষ করে শীতের আগে ‘জলদি কপি’ চাষে, অধিক গরম ও ঘন বর্ষার কারণে বীজতলা ও মূল জমিতে বিভিন্ন ধরনের রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। একই সমস্যা দেখা যায় শীতকালীন কপি চাষেও। ফসল সংরক্ষণের সমস্ত অগ্রিম প্রস্তুতি ছাড়াও সঠিক সময়ে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে ফলন ও বাজার মূল্য কমে যায়। বেড়ে যায় উৎপাদন খরচও। লিখেছেন বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের গবেষক গোপাল চৌধুরী। পড়ুন প্রথম পর্ব।
১) চারা ধসা বা ঢলে পড়া এবং শিকড় ও গোড়া পচা রোগের কারণ ও লক্ষণ:
ছত্রাক পিথিয়াম ডিবেরিয়্যানাম-এর আক্রমণের ফলে এই রোগের সৃষ্টি হয়। বীজতলায় জল জমার কারণে এই রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। ঠান্ডা ও মেঘলা আবহাওয়া, বৃষ্টিপাত, অতিরিক্ত আর্দ্রতা, ভেজা ও দৃঢ় মাটি ইত্যাদি পরিস্থিতি এই রোগের বৃদ্ধির পক্ষে অনুকূল। অঙ্কুরিত চারার মাটি সংলগ্ন অংশ নরম ও বাদামি হয়ে পচে যায়। এমনকি গোড়া এবং শিকড়ও পচে যায়। যার ফলে চারার মাটির উপরের অংশ ঢলে পড়ে।
প্রতিকার
ক) জৈবসার যুক্ত বেলে-দোআঁশ মাটিতে বীজতলা তৈরি করতে হবে।
খ) কোনও অবস্থাতেই মাটিতে জল জমতে দেওয়া যাবে না। অতিরিক্ত জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে হবে।
গ) বপনের আগে জৈব প্রতিকারক ছত্রাক ট্রাইকোডার্মা ভিরিডি (৩-৪ গ্রাম/কেজি বীজ) অথবা ক্যাপটান বা থাইরাম (২ গ্রাম/কেজি বীজ) দিয়ে বীজ শোধন করে নিতে হবে।
ঘ) চারা বের হবার পর লক্ষণ দেখা দিলে থায়োফ্যানেট মিথাইল (২ গ্রাম) বা ব্লাইটক্স (৪ গ্রাম) বা মেটাল্যাক্সিল (১.৫ গ্রাম) প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে।
[আরও পড়ুন: শীতের মরশুমে চন্দ্রমল্লিকা চাষে প্রচুর লাভের সুযোগ, ফুলের রোগ দমনে কী পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের?]
২) সাদা ছাতা বা ডাউনি মিলডিউ রোগের কারণ ও লক্ষণ:
পেরোনোস্পোরা প্যারাসাইটিকা নামক ছত্রাকের আক্রমণের ফলে এই রোগ সৃষ্টি হয়। বীজতলা ও মূল জমি, দুই জায়গাতেই এই রোগের লক্ষণ দেখা যায়। উচ্চ আর্দ্রতা, কুয়াশা, মাঝে মাঝে হালকা বৃষ্টি ও শিশিরপাত এই রোগ সৃষ্টি ও ছত্রাকের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। পাতার উপরে হলুদ হলুদ ভেজা ছোপ দেখা যায় এবং পাতার নীচের দিকে ওই ছোপের বিপরীতে ছত্রাকের সাদাটে অংশ (ছাতা) দেখা যায়। ধীরে ধীরে পাতায় পচন ধরতে শুরু হয়। গাছের বৃদ্ধি কমে যায়, ফলন হ্রাস পায় ও বাজার মূল্য কমে যায়।
প্রতিকার
ক) আগাছা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, ও গাছের সঠিক ঘনত্ব বজায় রাখতে হবে।
খ) খেয়াল রাখতে হবে যাতে জল না জমে ও পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল করে।
গ) সুপারিশ মাত্রায় সার প্রয়োগ করতে হবে ও মাত্রাতিরিক্ত নাইট্রোজেন জাতীয় সার প্রয়োগ থেকে বিরত থাকতে হবে।
ঘ) এই রোগকে প্রতিরোধ করতে ক্যাপটান বা থাইরাম (২ গ্রাম/ কেজি বীজ) দিয়ে বীজ শোধন করতে হবে।ঙ) আক্রান্ত হলে গাছে মেটাল্যাক্সিল এম + ম্যানকোজেব (২.৫ গ্রাম) বা কপার অক্সিক্লোরাইড ৫০% (৪ গ্রাম) বা অ্যাজোক্সিস্ট্রোবিন (১ মিলি) বা অ্যাজোক্সিস্ট্রোবিন + টেবুকোনাজোল (১ মিলি) প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে।
৩) কালো শিরা বা একপেশে রোগের কারণ ও লক্ষণ
ব্যাকটিরিয়াজনিত এই রোগের আক্রমণে বীজতলার চারার পাতা প্রথমে হলদে ও পরে কালো হয়ে ঝরে যায়। বাড়ন্ত গাছের পাতার কিনারা থেকে ভিতরের দিকে ফ্যাকাশে ও হলদে হয়ে তেকোণা ক্ষতের সৃষ্টি করে। ফ্যাকাশে অংশ শুকিয়ে যায় এবং শিরা ও উপ-শিরাগুলি প্রথমে বাদামি ও পরে কালো হয়ে পচে যায়। গাছের একদিকের পাতা আক্রান্ত হলেও অন্যদিকের পাতাগুলি ভাল থাকে। এজন্য এই রোগকে একপেশে রোগ বলে।
প্রতিকার
ক) বপন করার আগে স্ট্রেপ্টোসাইক্লিন (১ গ্রাম ১০ লিটার জলে) দিয়ে কিংবা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ৩০ মিনিট ধরে ভিজিয়ে রেখে বীজ শোধন করে নিতে হবে।
খ) আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলতে হবে।
গ) সংক্রমণ দেখা দিলে গাছে ১০ লিটার জলে ১ গ্রাম স্ট্রেপ্টোসাইক্লিন ও ২ গ্রাম কপার অক্সিক্লোরাইড গুলে স্প্রে করতে হবে।