শুভঙ্কর বসু: আদালত কক্ষে সওয়াল-জবাব শেষ। কোভিড আবহে শর্তসাপেক্ষে গঙ্গাসাগর মেলা (Gangasagar Mela) করার অনুমোদন দিল কলকাতা হাই কোর্ট। তবে সপ্তাহব্যাপী মেলা চালাতে হলে শর্ত পুরোপুরি মানতে হবে বলে কড়া বার্তা দিয়েছেন হাই কোর্টের (Calcutta HC) প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব। রায়দান পর্বে তিনি এও জানান, মেলা বন্ধ করছে না আদালত। তবে শর্তপূরণ হচ্ছে কি না, তার জন্য একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গড়ে দিয়েছেন তিনি। যদি কোনও শর্ত ভাঙা হয়, তৎক্ষণাৎ মেলা বন্ধের নির্দেশ দিতে পিছপা হবে না উচ্চ আদালত।
বিধি মেনে গঙ্গাসাগর মেলা করতে চায় রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবার আদালতে সওয়াল-জবাবের সময় রাজ্যের তরফে অ্যাডভোকেট জেনারেল (AG) এমনই জানিয়েছিলেন। তার পালটা জবাবে মামলাকারীরা প্রশ্ন তুলেছিলেন, কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব যদি বন্ধ হয় তাহলে কেন গঙ্গাসাগর মেলা হবে? দু’পক্ষের সওয়াল-জবাবের পর ওইদিন রায়দান স্থগিত হয়ে যায়। এরপর শুক্রবার প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি কেসাং ডোমা ভুটিয়ার ডিভিশন বেঞ্চে জানিয়ে দেন, মেলা বন্ধ হচ্ছে না। তবে রাজ্য সরকার যে সব বিধি মেনে মেলা করার কথা আদালতে জানিয়েছে, সেসব যেন কাঁটায় কাঁটায় মেনে চলা হয়। একঝলকে দেখে নিন সেসব শর্ত –
- ১৯৭৬ সালে ‘গঙ্গাসাগর মেলা আইন’ ৩ নং ধারা অনুযায়ী, সাগরদ্বীপকে ‘নোটিফায়েড জোন’ হিসেবে ঘোষণা করতে হবে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে।
- গঙ্গাসাগর মেলায় বিধিনিষেধ মানার জন্য ২ জানুয়ারি রাজ্য যেসব প্রস্তাব দিয়েছিল, তার প্রত্যেকটি যথাযথভাবে মেনে চলা হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করবেন স্বরাষ্ট্রসচিব।
- স্বরাষ্ট্রসচিবের নেতৃত্বে গঙ্গাসাগর মেলায় ভিড় এড়ানো নিয়ে এবং সমস্ত ব্যবস্থাপনা নিয়ে সংবাদমাধ্যমগুলিতে বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে, যাতে মানুষ এ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য পান। অযথা আতঙ্ক এড়িয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মেলায় অংশগ্রহণে উৎসাহ করার জন্য বিজ্ঞাপন দিতে হবে।
- সমস্ত মেনে চলা হচ্ছে কি না, তার জন্য ৩ সদস্যের একটি কমিটি গড়ে দেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধির নেতৃত্বে তৈরি কমিটিতে থাকবেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বা তাঁর নির্বাচিত কোনও প্রতিনিধি এবং রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বা তাঁর নির্বাচিত প্রতিনিধি। এই তিন সদস্যের কমিটি নিয়মকানুন কড়া পর্যবেক্ষণে রাখবেন। যদি বিধি লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে মনে হয় এবং মেলা বন্ধের সুপারিশ করে এই কমিটি, তাহলে তৎক্ষণাৎ হাই কোর্ট মেলা বন্ধ করে দিতে পারে।
[আরও পড়ুন: ‘মোদির নিরাপত্তায় গলদ বিরলতম ঘটনা, লজ্জায় পড়তে পারে দেশ’, সুপ্রিম কোর্টে বলল কেন্দ্র]
গঙ্গাসাগর মেলায় বিধিনিষেধ সম্পর্কে রাজ্যের প্রস্তাব নিয়ে অ্যাডভোকেট জেনারেল জানিয়েছিলেন, সাগরে রোটেশনের ভিত্তিতে স্নান ও দর্শনের ব্যবস্থা করছে রাজ্য। পরিস্থিতি অন্যদিকে মোড় নিলে গোটা এলাকাকেই কন্টেইনমেন্ট জোন ঘোষণা করা হবে। র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে জোর দিচ্ছে রাজ্য। আগত পূণ্যার্থীদের সকলের পরীক্ষা হবে। মেলা প্রাঙ্গণে থাকছে গ্রিন করিডোর। সেফ হোম থেকে হাসপাতালের ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে। ই- স্নান, ই- দর্শনে জোর দেওয়া হচ্ছে।
[আরও পড়ুন: ‘কেন্দ্রের গাইডলাইনই জানেন না রাজ্যপাল’, প্রধানমন্ত্রীর সামনেই ধনকড়কে তোপ মমতার]
তবে মেলার শুরুর আগেই থাবা বসিয়েছে করোনা ভাইরাস (Coronavirus)। বাবুঘাটের ট্রানজিট ক্যাম্পে RT-PCR টেস্টে ৬ জনের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে বলে খবর। এই ক্যাম্প থেকেই গঙ্গাসাগরের উদ্দেশে রওনা দেন পুণ্যার্থীরা।