শুভঙ্কর বসু: বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র (Babul Supriyo) বিরুদ্ধে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রর দায়ের করা অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশের দেওয়া চার্জশিট খারিজ করে দিল কলকাতা হাই কোর্ট। যদিও মহুয়া প্রয়োজনে ফের আদালতের দ্বারস্থ হতে পারবেন বলে বুধবার জানিয়ে দিয়েছেন বিচারপতি বিবেক চৌধুরি। আদালতের রায় বাবুলের পক্ষে গেলেও বিচারপতি মন্তব্য করেছেন, “একজন জনপ্রতিনিধি তাঁর আচরণে ভদ্র হবেন এটাই কাম্য। শুধু তাই নয়, মন্তব্য করার সময় তাঁকে অনেক সংযত থাকতে হয়। এক্ষেত্রে মহিলা সাংসদদের বিরুদ্ধে মন্ত্রীর করা ওই মন্তব্য অবশ্যই তার সম্মানহানি করেছে।” এছাড়াও বিচারপতি জানিয়ে দেন, আশা করা যাচ্ছে ভবিষ্যতে মন্তব্য করার ক্ষেত্রে তিনি আরও সতর্ক হবেন।
বছর তিনেক আগে একটি সর্বভারতীয় টিভি চ্যানেলে টক শো চলাকালী বক্তব্যে চলাকালীন প্রেক্ষিতে মহুয়া মৈত্রকে (Mahua Moitro) উদ্দেশ্য করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, “মহুয়া আর ইউ অন মহুয়া”, অর্থাৎ “মহুয়া তুমি কি মহুয়া খেয়ে আছো?” এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে আলিপুর থানায় বাবুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন তৃণমূল সাংসদ। যার প্রেক্ষিতে একজন মহিলার সম্মানহানির অভিযোগে বাবুল সুপ্রিয়কে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০৯ ধারায় অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেয় আদালত। উল্লেখ্য, ৫০৯ ধারাটি আদালত গ্রাহ্য অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। সেই চার্জশিটটি খারিজের দাবিতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বাবুল। এদিন রায়ে বিচারপতি জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী করা ওই মন্তব্যে একজন মহিলা সাংসদদের সম্মানহানি হলেও এক্ষেত্রে ৫০৯ ধারা প্রযোজ্য নয়। তাই চার্জশিটটি খারিজ হতে বাধ্য।
[আরও পড়ুন: করোনা সংক্রমণ রুখতে ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ, এবছর দর্শকহীন দুর্গাপুজো সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যারে]
মামলার শুনানি চলাকালীন বাবুলের আইনজীবী অয়ন ভট্টাচার্য দাবি করেন, টক শো চলাকালীন মন্ত্রী যে মন্তব্যটি করেছিলেন তাতে তিনি কোনোভাবেই মহুয়া সম্মানহানি করতে চাননি। গরমাগরম বাক্যালাপের মধ্যে মুখ ফসকে সেটি বেরিয়ে গিয়েছিল। অন্যদিকে, মহুয়াদেবীর আইনজীবী সব্যসাচী বন্দ্যোপাধ্যায় পালটা বলেন, ওই বক্তব্যের মাধ্যমে বাবুল সুপ্রিয় সরাসরি মহুয়াকে মদ্যপ বোঝাতে চেয়েছিলেন। যা কিনা সরাসরি তার মর্যাদাহানি করেছে। জনসমক্ষে তার মর্যাদাহানি হয়েছে। মহুয়া মৈত্রর করা ওই অভিযোগের ভিত্তিতেই এর আগে দু’বার বাবুল সুপ্রিয়কে তলব করেছিল পুলিশ। কিন্তু তিনি তদন্তকারীদের সামনে হাজির হননি। এরপর আলিপুর আদালতে ওই চার্জশিট পেশ করে পুলিশ।
১০ মার্চ আলিপুর আদালত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র বিরুদ্ধে জামিনযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। গ্রেপ্তারি এড়াতে কলকাতা হাই কোর্টের (Calcutta High Court) দ্বারস্থ হয়েছিলেন বাবুল। বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির আলিপুর আদালতের সেই গ্রেপ্তারের নির্দেশে স্থগিতাদেশ জারি করেন। এবার চার্জশিটটি খারিজ হয়ে যাওয়ায় বিষয়টি থেকে আপাতত পুরোপুরি নিষ্কৃতি পেলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। যদিও প্রয়োজনে মহুয়া মৈত্র ফের আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন। সেক্ষেত্রে আদালত স্বতন্ত্রভাবে বিচার প্রক্রিয়া চালাবে হাই কোর্টের এদিনের নির্দেশ তাতে অন্তরায় হবে না বলেও মামলার রায়ে জানিয়ে দিয়েছেন বিচারপতি চৌধুরি।