গোবিন্দ রায়: মাতৃত্বকালীন ছুটি নিয়ে ফারাক করা যায় না। স্থায়ী এবং অস্থায়ী উভয়ই সমান সংখ্যাক মাতৃত্বকালীন ছুটি পাওয়ার যোগ্য। বুধবার এক মামলার প্রেক্ষিতে এমনটা মন্তব্য করল কলকাতা হাইকোর্ট। কে স্থায়ী, কে অস্থায়ী কর্মী মাতৃত্বকালীন ছুটির(Maternity Leave) ক্ষেত্রে তা শর্ত হতে পারে না। তেমনি করা হলে যা হবে কর্মীর নাগরিক অধিকার কেড়ে নেওয়া। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার এক চুক্তিভিত্তিক কর্মীর মাতৃত্বকালীন ছুটিতে অনুমতি দিয়ে আদাালত তার এই পর্যবেক্ষণের কথা জানিয়েছে হাই কোর্ট। দীর্ঘ শুনানির পর এই মামলায় রায় দিতে গিয়ে হাই কোর্টের(Calcutta HC) বিচারপতি রাজা বসু চৌধুরী বলেন, “মাতৃত্বকালীন ছুটির বিষয়ে দুধরনের কর্মীর মধ্যে এই পার্থক্য মেনে নেওয়া যায় না। এটা যদি মেনে নেওয়া হয় তা সামাজিক ন্যায় বিচারের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হবে।”
২০১১ সালে অস্থায়ী কর্মী হিসাবে চাকরিতে যোগ দেন নীতা কুমারী। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর ১৮০ দিন মাতৃত্বকালীন ছুটির জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয়, যেহেতু তিনি অস্থায়ী কর্মী তাই তাঁকে ওই ছুটি দেওয়া যাবে না। কর্তৃপক্ষের এই বক্তব্যকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তিনি কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। তাঁর দুই আইনজীবী রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গাইডলাইন তুলে ধরে বলেন, সেই গাইডলাইন অনুযায়ী তাঁদের মক্কেলের ছুটি পাওয়ার অধিকার রয়েছে। সেই সঙ্গে তাঁরা আদালতে দাবি করেন, মাতৃত্বকালীন ছুটির ক্ষেত্রে যদি দুই মহিলার সমান অধিকার রয়েছে। যদি একজনকে বঞ্চনা করা হয়, তবে তা সমাজের ক্ষেত্রে বৈষম্যের উদাহরণ তৈরি করবে।
[আরও পড়ুন: সাদা জুতো পায়ে, শাহজাহান যায়! আদালতে রাজকীয় মেজাজে প্রবেশ সন্দেশখালির ‘বাদশা’র]
রির্জাভ ব্যাঙ্কের আইনজীবী অবশ্য আদালতে জানান, আদালতে মামলা না করে তিনি অন্যভাবে ছুটি নিতে পারতেন। কিন্তু আদালত এই দাবিকে মানতে নারাজ, তার কথায় চুক্তির চাকরিতে মেডিক্যাল লিভ-সহ অন্য ছুটি থাকলে মাতৃত্বকালীন ছুটিও দিতে হবে। এটা না দেওয়া মানে একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকারহরণ করা। আদালতের পর্যবেক্ষণে, মাতৃত্বকালীন ছুটির সুযোগ বিশ্বজনীন। এটির থেকে অস্থায়ী কমীকে বঞ্চিত করা মানে তাঁকে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত করা। এর ফলে কর্মরতা মহিলাদের মধ্যে একটি শ্রেণি প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে। এই ধরনের ঘটনা দেশের ভবিষ্যতের পক্ষে ক্ষতিকর। কারণ মা ও শিশুর স্বাস্থ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দেশের বিকাশে।