শুভঙ্কর বসু: নোনতা বা টক-ঝাল। কোনওটা আবার বেজায় ঝাল। কোনওটা আবার টক-ঝাল-মিষ্টি। মশলাদার, খাস্তা, মুচমুচে।
চানাচুর নামে যেন গোটা দেশ ফিদা! জিভে জল আনা এমনতরো হরেক কিসিমের চানাচুর বাঙালির হট ফেভারিট স্ন্যাক্স। মুড়ির সঙ্গতে, চায়ের টেবিলে বা সান্ধ্য পানীয়ের আসরে এসব চানাচুরের অবাধ এন্ট্রি।
কিন্তু ঘুণাক্ষরেও ভেবেছেন কি, শখ করে নামী ব্র্যান্ডের যে চানাচুর কিনে উৎফুল্ল চিত্তে বাড়ি ফিরছেন, আদপে তা কতটা ‘আসল’? কতটা নিরাপদ? ভেজালের বিষ নেই তো তাতে?
[খাবার চেয়ে ধাবার কর্মীদের কটূক্তি, মত্ত যুবকদের তাণ্ডব]
এতদিন সে সব নিয়ে মাথা না ঘামালেও এখন থেকে ঘামানোটা আবশ্যিক। কারণ রাজ্যের কাছে রিপোর্ট রয়েছে যে, রাজ্য জুড়ে ইতিউতি ছড়িয়ে রয়েছে এমন কয়েক হাজার জাল স্ন্যাক্স তৈরির কারখানা। চানাচুর থেকে শুরু করে নানা ধরনের স্ন্যাক্স জাতীয় খাবার তৈরি হচ্ছে এই ধরনের কারখানাগুলিতে। তারপর লেবেল চড়িয়ে সেগুলি ছড়িয়ে পড়ছে শহর ও শহরতলির বাজারগুলিতে। আর কোনও ধরনের ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে এই ধরনের কারাখানাগুলি। ফলে এসব খেয়ে তিলে তিলে স্বাস্থ্যের অবনতি হলেও অভিযোগের কোনও জায়গা নেই।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফলতায় এমনই এক জাল চানাচুর তৈরির কারখানার হদিশ মিললেও সেটি বন্ধ করতে কালঘাম ছুটে গিয়েছে রাজ্য সরকারের। রীতিমতো বিষয়টি হাই কোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য সব কিছু জানার পর অবিলম্বে এই কারবার বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।
অভিযোগ, ২০১০ সাল থেকে ফলতার ফতেপুর এলাকায় স্ত্রী রাখী হালদারের নামে একটি চানাচুর কারখানা চালাচ্ছেন রাজেশ হালদার নামে এক ব্যক্তি। দীর্ঘদিন ধরে সেটি চললেও কারখানাটির না আছে কোনও ফুড সেফটি লাইসেন্স, না আছে দূষণ নিয়ন্ত্রণ সার্টিফিকেট কিংবা ফায়ার লাইসেন্স। অথচ প্রতিদিন কারখানায় গড়ে উৎপাদন হচ্ছে প্রায় আড়াইশো কিলো চানাচুর। তারপর তা ছড়িয়ে পড়ছে স্থানীয় বাজারে।
[সাংবাদিকদের মার, হিন্দু সংহতির সভাপতি তপন ঘোষের পুলিশ হেফাজত]
কারখানাটি সম্পর্কে অভিযোগ জমা পড়ার পরই তদন্তে নামে রাজ্য। দেখা যায় সত্যিই কোনও লাইসেন্স নেই। তৎক্ষণাৎ রাজেশ হালদারকে ওই কারখানা বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হলেও তিনি তা শোনেননি। এরপরই এ বিষয়ে আদালতে একটি মামলা হয়। বিচারপতি দেবাংশু বসাকের এজলাসে সেই মামলার শুনানির সময় রাজেশের আইনজীবী দাবি করেন, কারখানাটি চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় নথি তাঁর কাছে রয়েছে। এরপরই জেলাশাসককে তদন্তের নির্দেশ দেন বিচারপতি বসাক। বৃহস্পতিবার মামলাটির শুনানিতে অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি জিষ্ণু চৌধুরি ও জুনিয়র কাউন্সিল সায়েদা ফৌজানা হোসেন দাবি করেন, “বিনা লাইসেন্সেই এতদিন ধরে চলছে কারখানাটি। জেলাশাসক তদন্ত করে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তা সত্ত্বেও ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।” এ কথা শোনার পরই রাজেশের আইনজীবীকে বিচারপতি বলেন, “এতে মানুষের স্বাস্থ্যের বিষয়টি জড়িত অবিলম্বে কারখানাটি বন্ধ করতে হবে।”
The post জনস্বাস্থ্য নিয়ে ছিনিমিনি, ‘বিষ’ চানাচুর বন্ধে নির্দেশ হাই কোর্টের appeared first on Sangbad Pratidin.