গোবিন্দ রায়: লালন শেখের মৃত্যু মামলায় সিআইডি তদন্তে অনাস্থা প্রকাশ সিবিআইয়ের। শুক্রবার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আইনজীবী কলকাতা হাই কোর্টে রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের বিরুদ্ধে ক্ষোভপ্রকাশ করে। আর তারপরই সিআইডি’র কাছ থেকে কেস ডায়েরি তলব করলেন বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত।
সিবিআই আদালতে জানায়, সিআইডি একদিনও তদন্ত করলে তথ্যপ্রমাণ লোপাট হয়ে যাবে। বিচারপতি বলেন, “আশঙ্কার কোনও কারণ নেই। সত্যি লুকনো যাবে না। মামলার কেস ডায়েরি দেখতে চেয়েছি। সোমবার বেলা ১১টা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।” এরপর সিবিআইয়ের তরফে দাবি করা হয়, রক্ষাকবচ থাকা সত্ত্বেও তাদের অযথা হেনস্তা করছে সিআইডি। পালটা বিচারপতি বলেন, “আপনার অফিসার রক্ষাকবচ তো রয়েছে।” আগামী সোমবার মামলার পরবর্তী শুনানি।
[আরও পড়ুন: কলকাতার নামী হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে রোগীর শ্লীলতাহানি! তদন্তে পুলিশ]
৩৯ বছর বয়সি লালন, গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। রামপুরহাট উচ্চবিদ্যালয় থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েন তিনি। খুব অল্প বয়সেই সংসারের জোয়াল কাঁধে তুলে নেন। শুরু করে বিরিয়ানির দোকান। কিছুদিনের মধ্যে ব্যবসার উন্নতি হয়। দোকান বন্ধক রেখে বাসের ব্যবসায় যুক্ত হয় লালন। সঙ্গে শুরু হয় গ্রামে চড়া সুদের কারবার। উল্লেখ্য, বগটুই গ্রামে এই চড়া সুদের ব্যবসা এখনও রমরমিয়ে চলে। টাকা জমতেই নেমে পড়ে রাজনীতিতে। ২০১৩ সালে এলাকার পঞ্চায়েত নির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী আঙ্গুর শেখের সমর্থক ছিলেন লালন।
শোনা যায়, তাঁকে টাকাপয়সার জোগানও দিতেন লালন। তৃণমূলের প্রার্থী তখন ভাদু শেখের স্ত্রী টেবিলা বিবি। রাজনৈতিক কারণে ভাদুর সঙ্গে বিবাদ শুরু হয় লালনের। জয়ী হন লালন ঘনিষ্ঠ কংগ্রেস প্রার্থী। জয়ী হতেই লালনের দাপটে তিন বছর গ্রাম ছাড়া থাকে ভাদু শেখ। তিন বছর পার হতেই গ্রামের এক অশান্তিতে ভাদু আর লালন জোট বাঁধে। লালন তৃণমূলের সৈনিক হয়ে ওঠে। লালনের বিরুদ্ধে জমি দখল, তোলাবাজি-সহ নানা অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ ওঠে। ২০১৮ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভাদু শেখ পঞ্চায়েতে জয়ী হয়ে উপপ্রধানের দায়িত্ব পান। ভাদু-লালন দু’জনে হরিহর আত্মা হয়ে ওঠেন। দু’জন দু’জনের ছায়াসঙ্গী হয়ে যান। লালন-ভাদু জুটি নজরে পরে অনুব্রত মণ্ডলের।
গত ২১ মার্চ ভাদু শেখকে তার বাড়ির সামনে খুন হতে হয়। খুনের সময়ও ভাদু লালনের কাছে ছিল। ভাদু খুনের পালটা বগটুই গ্রামে গণহত্যা চলে। এমনকি পরেরদিন সকালেও গ্রামে যেতে সাংবাদিকদের বাধা দেয় লালন। ন’মাস পরে ৩ ডিসেম্বর ঝাড়খণ্ড থেকে গ্রেপ্তার হন লালন। তার ৯দিনের মাথায় সিবিআই হেফাজতে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় লালনের। নিহতের স্ত্রীর দাবি, খুন করা হয়েছে লালনকে। বিষয়টি খতিয়ে দেখছে সিআইডি।