গোবিন্দ রায়: আগেই চূড়ান্ত মেধাতালিকা বা প্যানেলের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল হাই কোর্ট। এবার চাকরিহারাদের থেকেও যারা একেবারে চাকরি না পেয়ে দীর্ঘদিন গাছতলায় আন্দোলন করছে তাঁদের অবস্থা আরও করুণ বলেই মত প্রকাশ করল হাই কোর্ট। তুলনামূলক বিচারে আন্দোলনকারীদের ছুরিতেই বেশি ধার বলেই মন্তব্য করলেন এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলার নিষ্পত্তিতে গঠিত বিশেষ বেঞ্চের বিচারপতি দেবাংশু বসাকের।
একইসঙ্গে, মঙ্গলবার এসএসসিতে এক সময়ের চাকরিহারা ও পরে আদালতের নির্দেশে চাকরি ফেরত পাওয়াদের একাংশের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার নথি নিয়ে যে প্রশ্ন তুলে ছিল। তা নস্যাৎ করে দিল ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, “খুনের মামলায় মৃতদেহ থেকে খোয়া যাওয়া সোনার গয়না পুলিশ উদ্ধার করে তদন্তে বা নিম্ন আদালতে বিচার প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করে। যদি কোন সংস্থা বন্ধ হয়ে যায়, বা বিক্রি হয়ে যায় তাহলে সেই সংস্থার কোন প্রাক্তন আধিকারিকের থেকে উদ্ধার হওয়া সামগ্রী তদন্তে ব্যবহার করা যাবে না কেন ?” প্রসঙ্গত, গত দিন কল্যাণের সওয়াল ছিল, “গাজিয়াবাদের ‘নাইসা’র অফিস থেকে কোন হার্ডডিস্ক উদ্ধার হয়নি, হয়েছে ওই সংস্থার প্রাক্তন এক আধিকারিকের বাড়ি থেকে।” আরও দাবি, “যে ব্যক্তির হেফাজত থেকে হার্ড ডিস্ক উদ্ধার হয়েছে তিনি তো বর্তমানে ওই সংস্থার সঙ্গে যুক্তই নন। তিনি প্রাক্তন কর্মী।”
[আরও পড়ুন: ১৬ ছক্কায় ফিন অ্যালেনের বিশ্বরেকর্ড, কিউয়ি ঝড়ে উড়ে গেল পাকিস্তান]
এদিকে চাকরি যাওয়া নিয়ে স্কুল সার্ভিস কমিশনের এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিতর্কিত চাকরি প্রাপকরা। তাঁদের আইনজীবী অনিন্দ্য মিত্রের দাবি, “নিয়োগপত্র পাওয়ার পর কমিশনের কোন এক্তিয়ারই নেই তা প্রত্যাহার করার। নিয়োগপত্র পাওয়ার পরেই অস্তিত্ব হারায় সুপারিশপত্রের। ওই অস্তিত্বহীন সুপারিশপত্র কী করে প্রত্যাহার করে স্কুল সার্ভিস কমিশন? আর সেই সুপারিশপত্র প্রত্যাহারের নির্দেশই বা কী করে দেয় আদালত ?” এর প্রেক্ষিতে বিচারপতি বসাক জানতে চান, “যদি সুপারিশপত্র দেওয়ার পর যদি কমিশন মনে করে যে সুপারিশপত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে তারা কোনও ভুল করেছেন তাহলে কী করা উচিত ?” আইনজীবীর দাবি, “সেক্ষেত্রে কমিশন সেই ব্যক্তির নিয়োগকারী সংস্থাকে চিঠি লিখে জানাতে পারে যে সুপারিশ পত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে ভুল হয়েছে এবং নিয়োগকারী সংস্থা সেই মর্মে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করুক।” তার প্রেক্ষিতে আদালতের পর্যবেক্ষণ, “আপনারা তো তবু চাকরিতে বহাল আছেন, বেতন পাচ্ছেন। তাঁদের কথা ভাবুন যারা রাস্তায় বসে আছে, চাকরি নেই। র্যাঙ্ক জাম্প, ভুয়ো নিয়োগ, চাকরি বিক্রি, প্যানেলের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার পরে নিয়োগ এইসব অভিযোগ এই মামলায় আছে।” এর পরেই যারা চাকরি হারিয়েছেন, এবং যারা চাকরি না পেয়ে ধর্নায় আছেন তাদের তুল্যমূল্য তুলনা টেনে বিচারপতি বসাক বলেন, “যদি একটা ছুরির দুদিক দিয়েই কাটা যায় এবং সেই ছুরির একদিকে আন্দোলনকারীরা এবং অন্যদিকে বিতর্কিত চাকরিপ্রাপকরা থাকেন তাহলে যেদিকে আন্দোলনকারীরা আছেন সেদিকের ধার বেশি। তারা আপনাদের থেকেও বেশি গরীব। তারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।”