গোবিন্দ রায়: যদিদং হৃদয়ং মম, তদস্তু হৃদয়ং তব। বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হওয়া শুধু লোকাচার নয়, একজন অপরজনের সব সময়ের ভাল-মন্দের সাথী হওয়ারও অঙ্গীকার। আর সেই চলে আসা রীতিকেই আরও একবার মনে করিয়ে দিল কলকাতা হাই কোর্ট (Calcutta High Court)। একজন পুরুষ যখন একটি মেয়েকে সাতপাকে ঘুরে বিয়ে করেছেন, তাঁর ভাত-কাপড়ের দায়িত্ব নিয়েছেন, সে দায় অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই, এমনকী বিচ্ছেদ হয়ে গেলেও। এমনই পর্যবেক্ষণ প্রকাশ করে প্রাক্তন স্বামীকে প্রাক্তন স্ত্রীর যাবতীয় প্রাপ্য মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাই কোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ।
চিৎপুর থানা এলাকার ওই বিচ্ছেদ মামলায় বাদীপক্ষের কোঁসুলি সন্দীপন দাস, ইন্দ্রজিৎ দাশগুপ্তরা জানান, ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে হিন্দু শাস্ত্রমতেই বিয়ে হয়েছিল কৃষ্ণেন্দু ও কাকলির (নাম পরিবর্তিত)। বছর ঘুরতেই অশান্তি, ক্রমে তা চরমে পৌঁছয়। অত্যাচার সইতে না পেরে এক সময় বাড়ি ছাড়েন কাকলি। দিন গুজরানের জন্য স্বামীর থেকে খোরপোশ দাবি করেন তিনি। কাকলির খোরপোশ বাবদ মাসে মাসে তিন হাজার টাকা দেওয়ার জন্য কৃষ্ণেন্দুকে নির্দেশ দিয়েছিল আলিপুর আদালত। আইনজীবীদের অভিযোগ, সেই ইস্তক কৃষ্ণেন্দু নিখোঁজ। এক-দু’দিন নয়, খোরপোশের দায় এড়াতে দীর্ঘ ছ’বছর তিনি পলাতক ছিলেন। এমনকী, অভিযোগ, চিৎপুরের বাসিন্দা কৃষ্ণেন্দু ভিটেমাটি সব বেচে দিয়ে চম্পট দেন।
[আরও পড়ুন: পঙ্কজ রায়ের বাড়িতে পরিচারিকাকে মারধর, ভরতি করাতে হল হাসপাতালে]
এমতাবস্থায় ২০১৭ সালে তাঁর বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করে নিম্ন আদালত। কোনও লাভ হয়নি। কৃষ্ণেন্দুর সন্ধান না পেয়ে একসময় হাল ছেড়ে দেয় চিৎপুর থানা। বাধ্য হয়েই পলাতক স্বামীকে খুঁজে বার করতে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন কাকলি। মামলায় গত বছর তদন্তভার যায় কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের হাতে। শেষমেশ দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবনে কৃষ্ণেন্দুর হদিশ মেলে, তাঁকে আটক করা হয়। বিচারপতির নির্দেশমতো তাঁকে পেশ করা হয় আদালতে।
[আরও পড়ুন: প্রাক্তনীর পর ছাত্র, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ার রহস্যমৃত্যুর ঘটনায় গ্রেপ্তার আরও ২]
সেখানেই অভিযুক্তকে কাঠগড়ায় তুলে বৈবাহিক সম্পর্কের দায়িত্ব পালনের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন বিচারপতি ঘোষ। আদালতের নির্দেশে প্রাক্তন স্ত্রীর খোরপোশ বাবদ এক কালীন ৫৫ হাজার টাকা দিয়েছেন কৃষ্ণেন্দু। কথা দিয়েছেন, বাকি টাকাও মেটাবেন। ‘‘আদালতের উপরে আস্থা রাখলে ফল পাওয়া যায়।’’– ছলছল নয়নে বলছেন কাকলি।