গোবিন্দ রায়: রাজ্যে ১০০ দিনের কর্ম নিশ্চয়তা প্রকল্পে টাকা বন্ধ নিয়ে এবার হাই কোর্টে প্রশ্নের মুখে পড়ল কেন্দ্র সরকার। একশো দিনের কাজ নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তার স্বপক্ষে তথ্য-প্রমাণ কই? সোমবার এই সংক্রান্ত মামলায় সেই প্রশ্নই তুলল হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি হিরন্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ। এনিয়ে তদন্তে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কি না, বা এবিষয়ে তদন্তের কোনও ব্যবস্থা আছে কিনা আদালতে উপস্থিত কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেলের কাছে তাও জানতে চেয়েছে আদালত। আজ মঙ্গলবার এই মামলার শুনানি রয়েছে।
রাজ্য সরকারের হিসাব বলছে, ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে কেন্দ্রের কাছে। কেন্দ্র টাকা মেটাচ্ছে না বলে অভিযোগ রাজ্যের। পালটা কেন্দ্রের দাবি, রাজ্যে ১০০ দিনের কাজে প্রচুর দুর্নীতি হয়েছে। তাই টাকা দেওয়া হচ্ছে না। সম্প্রতি এই টাকা বন্ধের বিরোধিতা করে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয় হাই কোর্টে। মামলা করেছিল ক্ষেত মজদুর সংগঠন। এদিন মামলার শুনানিতে কেন্দ্রের দাবি, ২০২১-২০২২ অর্থবর্ষে রাজ্য খরচের কোনও নথি না দেওয়ায় কেন্দ্র এই প্রকল্পে টাকা পাঠানো বন্ধ করেছিল।
[আরও পড়ুন: ‘বিশ্বভারতীর উপাচার্যের মেয়াদ বৃদ্ধি করবেন না’, রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি শান্তিনিকেতনের বাসিন্দাদের]
এই শুনে অসন্তোষ প্রকাশ করে ডিভিশন বেঞ্চের বক্তব্য, “রাজ্য যে কেন্দ্রের টাকা নয়ছয় করেছে, তারা যে রাস্তা তৈরি করেনি, ব্রিজ তৈরি করেনি, টাকা নিয়ে দুর্নীতি করেছে, তার স্বপক্ষে কেন্দ্রের কাছে কোনও প্রমাণ আছে কি!” রাজ্য এই প্রকল্পের কার্যকারিতার একটা রিপোর্ট দিয়েছে। সেটা খতিয়ে দেখার ব্যবস্থা আছে কিনা এদিন কেন্দ্রের কাছে তাও জানতে চায় আদালত।
যদিও তার জবাব দিয়ে কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল অশোক চক্রবর্তী জানান, “রাজ্যজুড়ে প্রচুর ভুয়ো জব কার্ড পাওয়া যাওয়ার পর কেন্দ্র ফান্ড বন্ধ করেছে।” পালটা তাঁর প্রশ্ন, “একটা ট্রেড ইউনিয়ন (খেতমজুর) জনস্বার্থ মামলা দায়ের করে এইভাবে ফান্ড রিলিজ করার দাবি জানাতে পারে কি ?” মামলাকরীদের তরফে আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যের দাবি, “অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেলের বক্তব্যের কোনও ভিত্তি নেই। যারা মামলা করেছে তাঁরা খেতমজুর। বেঁচে থাকতে তাঁরা প্রশ্ন তুলতেই পারে।”
[আরও পড়ুন: লোকসভা ভোটের আগেই CAA কার্যকর হবে, মতুয়াগড়ে ফের প্রতিশ্রুতি সুকান্তর]
জবাবে অশোক চক্রবর্তী দাবি করেন, “রাজ্য আগে খতিয়ে দেখুক যাদের জব কার্ড দেওয়া হয়েছে সেগুলো ভুয়ো কিনা।” ডিভিশন বেঞ্চের বক্তব্য, “ভুয়োগুলোর কথা যদি বাদও দেওয়া হয়, তাহলে ১ হাজার জেনুইন জব কার্ড হোল্ডার আসল হলে তাহলে তাদের টাকা বন্ধ থাকবে কেন?” আদালতের পর্যবেক্ষণ, “শ্রমিকদের টাকা দেওয়া যেমন রাজ্যের দায়িত্ব, কেন্দ্রের দায়িত্ব ফান্ড দেওয়া। এটা শুধু রাজ্যের দায়িত্ব নয়।”