শুভঙ্কর বসু: তমলুক আদালত তার বিরুদ্ধে হওয়া খুনের মামলা প্রত্যাহারের আবেদনে ছাড়পত্র দিতেই আনিসুর রহমান নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে লিখেছিলেন, ‘আমি মুক্ত।আমি আসছি।’ কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ছবিটা বদলে গেল। তমলুক আদালতের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিয়ে আনিসুর রহমানকে ছেড়ে দেওয়া হলে ফের তাঁকে গ্রেপ্তারির নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)।
২০১৯ সালে পাঁশকুড়ায় দুর্গাপুজার সময় খুন হন তৃণমূল নেতা কুরবান শা। ঘটনায় গ্রেপ্তার হন তৃণমূল নেতা আনিসুর রহমান (Anisur Rahman)। তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র-সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু হয়। কিন্তু ঘটনা হল, কিছুদিন আগেই মামলা প্রত্যাহারের নির্দেশনামা জারি করে রাজ্য সরকার। সরকারি আইনজীবী সেই মতো তমলুক আদালতে মামলা প্রত্যাহারের আবেদন জানান। মঙ্গলবারই তাতে ছাড়পত্র দেয় তমলুক আদালত। এর মধ্যেই এদিন সকালে রাজ্য সরকারের ওই নির্দেশনামাকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় কুরবানের পরিবার।
বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যর এজলাসে মামলাটি শুনানির জন্য উঠলে সরকারি আইনজীবীর ভূমিকায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিচারপতি। ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজ্য সরকারের জারি করা নির্দেশনামা ও তমলুক আদালতের এদিনের নির্দেশ খারিজ করে আদালত পর্যবেক্ষণে জানায়, সুষ্ঠু বিচারের লক্ষ্যে রাজ্য সরকার মামলা প্রত্যাহারের আবেদন জানাতেই পারে। কিন্তু সেক্ষেত্রে কী কারণে মামলা প্রত্যাহার করা হচ্ছে তা স্পষ্ট করতে হবে। এটাই বিধি। কিন্তু এক্ষেত্রে কেন রাজ্য সরকার মামলা প্রত্যাহার করতে চাইছে তা স্পষ্ট নয়। এই পরিস্থিতিতে আদালত চোখ বন্ধ করে থাকতে পারে না।
[আরও পড়ুন: ভাঙড়ে ISF কর্মীর বাড়ি থেকে উদ্ধার বোমা-আগ্নেয়াস্ত্র, গ্রেপ্তার ৪]
এদিন কুরবানের পরিবারের তরফে আদালতে দাবি করা হয়, বিনা কারণে ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই মামলা প্রত্যাহার করতে চাইছে রাজ্য সরকার। আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হওয়ার পর থেকে একাধিকবার তিনি হাই কোর্টে জামিনের আবেদন জানিয়েছিলেন। প্রতিবারই সেই আবেদনের তীব্র বিরোধিতা করেছে রাজ্য। তাহলে এখন কোন কারণে মামলা প্রত্যাহার করা হচ্ছে? শুনানিতে এই প্রশ্ন ওঠে। এরপর তমলুক আদালতের সরকারি আইনজীবীর ভূমিকায় তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিচারপতি ভট্টাচার্য।পর্যবেক্ষণে তিনি জানান, মক্কেল হিসেবে সরকার কোনও নির্দেশিকা জারি করতেই পারে। কিন্তু সরকারি আইনজীবীর কাজ হল, আইনসঙ্গত যুক্তি দিয়ে বিচার ব্যবস্থার প্রথা অনুযায়ী তার মক্কেলকে বিষয়টি বোঝানো বা পরামর্শ দেওয়া এবং তার জ্ঞানকে বিকশিত করা। কিন্তু এক্ষেত্রে কোনওটাই সরকারি আইনজীবী করেননি। বরং একটি পোস্ট অফিস এর মতো কাজ করেছেন। পাশাপাশি নিম্ন আদালতের কার্যবিধিতে অসন্তুষ্ট হাইকোর্ট। উচ্চ আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে জেনেও কেন এমন নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিচারপতি ভট্টাচার্য। উল্লেখ্য, হাই কোর্টের এই নির্দেশের পরই কোলাঘাট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে আনিসুরকে।