অভিরূপ দাস: পেটের মধ্যে নড়াচড়া করছিল একরত্তি। সময় হয়ে এসেছিল তার ভূমিষ্ঠ হওয়ার। এদিকে করোনা (Corona Virus) আক্রান্ত মা ভেন্টিলেশনে। ফুসফুসের যা অবস্থা তাতে ফুসফুস সচল রাখার যন্ত্র থেকে বের করে স্ত্রীরোগ ওয়ার্ডের অস্ত্রোপচার কক্ষে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব। তবে উপায়? সন্তানকে বাঁচাতে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটের (CCU) পাশেই অস্থায়ী অপারেশন থিয়েটার (Operation Theatre) তৈরি করলেন চিকিৎসকরা। মুহূর্তে চলে এল ডিলে রিট্র্যাকটর, নিডল হোল্ডার, টিস্যু ফরসেপ। অল্প সময়ের মধ্যেই ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট হয়ে গেল সি সেকশন সার্জারির অপারেশন থিয়েটার। যা দেখে রোগীর পরিবারের লোকেরা বলছেন এমনটা শুধু আলাদিনের বইতেই পড়েছি।
জুন মাসের প্রথম সপ্তাহেই কোভিড (COVID-19) পজিটিভ হয়েছিলেন রাখি মণ্ডল বিশ্বাস (৩২)। বনগাঁর বনগ্রামের বাসিন্দা রাখিদেবীর রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা দ্রুত নামছিল। প্রথমে তাঁকে ভরতি হয়েছিলেন বনগাঁ হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছিল না। একসময় অক্সিজেন স্যাচুরেশন লেভেল ৭০ হয়ে যায়। গত ১২ জুন বনগাঁ থেকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরিত করা হয় তাঁকে। সন্তানসম্ভবা মহিলা করোনা আক্রান্ত হলে বিপদ দ্বিগুণ। কারণ এ সময় শরীরে অক্সিজেনের প্রয়োজনীয়তা বাড়ে। এদিকে করোনা আক্রান্ত রোগীর রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কম। চিন্তায় পরে যান চিকিৎসকরা।
[আরও পড়ুন: BJP’র প্রতিষ্ঠাতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করবে তৃণমূল সরকার, তুঙ্গে জল্পনা]
রাখিদেবীরর চিকিৎসার জন্য চার সদস্যের মেডিক্যাল টিম তৈরি হয়। যেখানে ছিলেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের স্ত্রীরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. পার্থ মুখোপাধ্যায়, অ্যানাস্থেশিয়া বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. অসীম কুণ্ডু। ছিলেন স্পেশ্যাল নিউবর্ন কেয়ার ইউনিট এবং হেমাটোলজি বিভাগের চিকিৎসকরা। ডা. পার্থ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, এটি ওই তরুণীর সেকেন্ড প্রেগন্যান্সি। ফলে সবদিক বিবেচনা করে আমাদের এগোতে হচ্ছিল।
গত শনিবার দিন চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন, আর দেরি করা ঠিক হবে না। সময় নষ্ট হলে নবজাতকের ক্ষতি হতে পারে। সেইমতো সোমবার সি সেকশন অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু কে জানত রবিবার অপেক্ষা করে আছে নতুন বিপদ। ২০ জুন রাখীদেবীর অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৬২ তে পৌঁছে যায়। তাঁকে ভেন্টিলেশনে দিতে হয়। সেখান থেকে বের করে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়ায় জীবনের ঝুঁকি ছিল মারাত্মক।
সোমবার চিকিৎসকরা রাখি মণ্ডল বিশ্বাসের পরিবারের লোকেদের অস্ত্রোপচারে কনসেন্ট বা অনুমতি দেওয়ার কথা বলেন। রোগীর পরিবারের অনুমতি পাওয়ার পরেই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় শুরু হয় কাজ। অল্প সময়ের মধ্যে কোভিড ওয়ার্ডের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটেই গড়ে ওঠে অপারেশন থিয়েটার। সেখানেই সোমবার কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন রাখি মণ্ডল বিশ্বাস। এখনও তাঁর অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৬০ এর আশপাশে। নবজাতক শিশুও রয়েছে সিক নিউবর্ন কেয়ার ইউনিটে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের সুপার ডা. মানব নন্দী জানিয়েছেন, সন্তানসম্ভবা করোনা রোগীকে বাঁচাতে কয়েক ঘন্টার মধ্যে অপারেশন থিয়েটার তৈরি করার ঘটনা রাজ্যে তো বটেই দেশের মধ্যেও প্রথম।