নব্যেন্দু হাজরা ও অভিরূপ দাস: এতদিন যা বলতে ঢোক গিলত নতুন বর, চল্লিশ পেরনো ‘যুবক’ তাই অনায়াসে লিখে দিল দৈনিকে। ‘সেক্স দুর্বল।’ বিয়ের বিজ্ঞাপনে পাত্রী চাই কলামে তাঁর খোলামেলা স্বীকারোক্তি, বিয়ের পর যৌন সুখ দিতে পারব না। কিন্ত বাবা হতে চান তিনি। তাই টেস্ট টিউব বেবি নিতে আগ্রহী এমন পাত্রীকেই জীবনসঙ্গী করতে চান। ডিভোর্সি হলেও আপত্তি নেই।
[ নমাজে নেতৃত্ব দিয়ে হুমকির মুখে দেশের প্রথম মহিলা ইমাম ]
এ লেখা দেখেই বিষম খেয়েছে রক্ষণশীলরা। তবে এ কথাও মেনে নিয়েছেন যে, ক্রমশ সাহসী হচ্ছে সমাজ। চারদেওয়ালের অন্দরে চেপে রাখা কথাও এবার ফলাও করে বিজ্ঞাপনে লিখে দিতে পিছপা হচ্ছে না মধ্যবিত্ত গেরস্থ। বিজ্ঞাপন থেকেই জানা যাচ্ছে, যৌনক্ষমতায় অক্ষম বলেই তাঁর প্রথম স্ত্রী তাঁকে ছেড়ে চলে গিয়েছেন। কিন্ত সংসার করার অদম্য ইচ্ছে আজও কাজ করে শ্যামল খাসনবিসের (নাম পরিবর্তিত) মধ্যে। চান বাবা হতে। রাখঢাক না করেই তাই খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন। তবে এবার নিজের অক্ষমতা জানিয়েই।
[ সাপের বিষ থেকে মুক্তি আয়ুর্বেদেই, নজির গড়ে পদ্মশ্রী পেলেন ‘জঙ্গলের ঠাকুমা’ ]
সোজাসাপটা বলে দিয়েছেন, ‘সেক্স দুর্বল। ধুমপান করেন, এমনকী হতাশা কাটাতে অ্যান্টি ডিপ্রেসনের ওষুধও খান। অনূর্ধ্ব ৩৪, টেস্ট টিউব বেবি নিতে আগ্রহী পাত্রী চান তিনি। ডিভোর্সি হলেও চলবে।’ মনোবিদ দোলা মজুমদার মনে করছেন, যৌন দুর্বলতা থেকেই এই ব্যক্তির মনে জাল ছড়িয়েছে হতাশা। তাঁর কথায়, “যৌন দুর্বলতার পিছনে মনস্তত্ত্ব অনেকটাই দায়ী। অনেক সময় ছোটবেলার কোনও বিশেষ ঘটনা এমন আঘাত দেয় যা সারাটা জীবন পিছু করে। দেখা যায় মনের সে অন্ধকার কেটে গেলেই জীবন পুরনো ট্র্যাকে ফিরে এসেছে।”
[ পদ্মশ্রী নিতে অস্বীকার, প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠি সন্ন্যাসীর ]
সম্প্রতি বলিউডে এই বিষয়েই হয়ে গিয়েছে ‘শুভ মঙ্গল সাবধান’এর মতো সিনেমা। সিনেমায় দিল্লির ছেলে মুদিতের সঙ্গে সুগন্ধার বিয়ে হয়ে যায় ঠিকই। কিন্ত তারপর সুগন্ধা আবিষ্কার করে মুদিতের ‘জেন্টস প্রবলেম’ রয়েছে। চিকিৎসার পরিভাষায় যাকে বলে ইরেকটাইল ডিসফাংশন। মুদিতের মতোই ইরেকটাইল ডিসফাংশনের শিকার হাজারও ছেলে। তারমধ্যে দিনে দিনে বাড়ছে কাজের চাপ। বাড়ছে রাত জাগার অভ্যেস। সঙ্গে মানসিক অস্থিরতা। আর এসবের ভিড়েই কমছে যৌন ক্ষমতা। অন্তত চিকিৎসকরা তাই বলছেন। ফি বছরই গাইনোকলজিস্টের চেম্বারে বাড়ছে ভিড়। মহিলা এবং পুরুষ উভয়েরই কমে আসছে যৌন ক্ষমতা। বিয়ের পরও শারীরিক সুখ দিতে পারছেন না উভয়কে। ফলে বাড়ছে দাম্পত্য সমস্যা। পরকীয়া। অনেকে তো বিয়ে করতেই ভয় পাচ্ছেন! যদি সবাই জেনে যায় লুকনো অসুখের কথা! বহু বিয়ে ভেঙেও যাচ্ছে শুধু এই কারণেই। নতুন প্রজন্মে তার ঝুড়ি ঝুড়ি উদাহরণ। আগে লোকে সংসার ভাঙার ভয়ে এসব কথা বলত না। মুখ বুজে থাকত। কিন্ত এখন সেসবের ধার ধরছে না কেউই। ফলে বাড়ছে ডিভোর্সের সংখ্যাও।
[চাকরি পেয়েও ভেন্ডরের দায়িত্বে, অবৈধ ১৯টি স্টল ভাঙল রেল]
শহরের মেডিসিন বিভাগের বিশিষ্ট চিকিৎসক ডঃ অরিন্দম বিশ্বাসের কথায়, “যত বেশি আমরা কর্পোরেট লাইফে অভ্যস্ত হচ্ছি, তত এই ধরনের যৌন সমস্যা বাড়ছে। ব্যস্ত জীবনের ক্রমবর্ধমান স্ট্রেসের দোসর এই সমস্ত সমস্যা। যৌন মিলনের ইচ্ছাও কমে যাচ্ছে। আর এই সমস্যা শুধু পুরুষদের নয়, মহিলাদের ক্ষেত্রেও হচ্ছে।” বিশিষ্ট গাইনোকলজিস্ট অরূপ লাহা যদিও কাগজে ফলাও করে এই বিজ্ঞাপনের পিছনে বিতর্কই দেখছেন । তাঁর বক্তব্য, “মানুষের জীবনে স্ট্রেস বাড়ছে। আজকাল অনেক বয়স পর্যন্ত যৌন সক্ষম থাকতে চাইছেন অনেকেই। আজ থেকে ৩০ বছর আগে ৪৭ বছরের কোনও যুবক খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দেবে ভাবা যেত না।”
মনোবিদ দোলা মজুমদার যদিও মনে করছেন ক্রমশ জেন ওয়াইয়ের এই ধরনের অসুখে আক্রান্ত হওয়ার পিছনে অনেকটাই দায়ী নেটদুনিয়াও। “আজকাল সকলের হাতে স্মার্ট ফোন। খোলামকুচির মতো পর্ন সাইট দেখছে অনেকেই। পর্ন দেখার আসক্তি থেকেও মনে বাসা বাঁধতে পারে এমন অসুখ।” দীর্ঘ কাউন্সেলিং যৌন দুর্বলতা কাটতে পারে বলেই মনে করছেন তিনি।
The post পাত্রী চাই কিন্তু যৌনসুখ দিতে অক্ষম, সাহসী পাত্রের বিজ্ঞাপনে হইচই appeared first on Sangbad Pratidin.