সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়: দু’পক্ষের আইনজীবীর জমজমাট সওয়াল জবাব চলাকালীন সর্বক্ষণ কোর্ট লক-আপে দাঁড়িয়ে চরম উৎকণ্ঠায় রইল শেক্সপিয়র সরণির সেই ভয়ানক জাগুয়ার দুর্ঘটনা কাণ্ডের ধৃত অভিযুক্ত আরসালান পারভেজ। লক-আপের সামনে এসে কখনও বাবা আখতার পারভেজ, কখনও বাড়ির লোকজন, আবার কখনও আরসালান রেস্তেরাঁ চেন সংস্থার কর্মীরা এসে সান্ত্বনা দিয়ে গেলেন পারভেজকে। কিন্তু তাতেও কাটল না তার উৎকণ্ঠা। সওয়াল জবাবের পর তাকে আগামী ২৯ আগস্ট পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিলেন ব্যাঙ্কশাল আদালতের বিচারক অলকানন্দা সরকার। এই রায় শোনার পরও সেই উৎকণ্ঠা নিয়েই লক-আপ ছাড়ল আরসালান পারভেজ।
আরও পড়ুন:পথ সুরক্ষার সচেতনতায় জোর, নবদম্পতিকে হেলমেট উপহার পুলিশের
রবিবার দুপুর প্রায় দুটো। ছুটির দিন থাকা সত্ত্বেও জাগুয়ার কাণ্ডের মামলার রায় শোনার জন্য ব্যাঙ্কশাল আদালতে ক্রমশ ভিড় জমেছে। এরই মাঝে এই কাণ্ডের ধৃত মূল অভিযুক্ত তথা রেস্তরাঁর চেন সংস্থার মালিক আখতারের ছোট ছেলে পারভেজকে নিয়ে আসা হয় এই আদালতে। তার পরনে ছিল টি-শার্ট, প্যান্ট ও স্নিকার। রাখা হয় কোর্ট লক-আপে। সেখানে তার চোখে-মুখে চরম উৎকণ্ঠা প্রকাশ পায়। কোর্ট লক-আপে ধৃত আরসালান পারভেজকে রাখা হয় অন্যান্য আসামিদের সঙ্গেই।
মামলার শুরুতেই সরকার পক্ষের আইনজীবী বিচারক অলকানন্দা সরকারকে সওয়ালে জানান, “এইভাবে দুরন্ত গতিতে গাড়ি চালালে যে কোনও সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটবে তা অভিযুক্ত জানত। জানা সত্ত্বেও এই বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে দু’টি প্রাণ কেড়ে নিল সে। তাছাড়া দুরন্ত গতিতে গাড়ি চালিয়ে সে সিগন্যাল ভেঙে প্রচণ্ড জোরে প্রথমে ধাক্কা মারে একটি মার্সিডিজ বেঞ্জকে। ধাক্কার তীব্রতা এতটাই ছিল যে সেই মার্সিডিজ বেঞ্জ প্রায় ২০ ফুট দূরে ছিটকে যায়। এরপর মার্সিডিজ বেঞ্জ ধাক্কা দেয় ফুটপাতে থাকা শেক্সপিয়র সরণি থানার পুলিশ কিয়স্ককে। তাতেই মৃত্যু হয় দুই বাংলাদেশি পর্যটকের। গাড়ির গতি যে মারাত্মক ছিল তা ঘটনা দেখেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। সেই কারণেই ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারা অনুযায়ী ধৃত আরসালান পারভেজের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা দায়ের করা হয়েছে। পাশাপাশি পুলিশের কিয়স্ক ভাঙায় তার বিরুদ্ধে সরকারি সম্পত্তি নষ্টের মামলাও দায়ের করা হয়েছে।”
আসামি পক্ষের আইনজীবী সওয়ালে জানান, “ধৃত আরসালান পারভেজের জাগুয়ার গাড়িতে দুই বাংলাদেশি পর্যটকের মৃত্যু হয়নি। মৃত্যু হয়েছে মার্সিডিজ বেঞ্জের ধাক্কায়। সেক্ষেত্রে ধৃত আরসালান পারভেজের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা দায়ের হয় কীভাবে? তাছাড়া দুর্ঘটনার সময় মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছিল। সেই বৃষ্টিতে ট্রাফিক সিগন্যাল দেখে গাড়ি চালানো সম্ভব নয়।” এর উত্তরে সরকারি আইনজীবী জানান, “বৃষ্টিতেই তো আরও ভাল করে সিগন্যাল মেনে ধীরে ধীরে গাড়ি চালাতে হয়। এক্ষেত্রে ধৃত তা করেনি।” দু’পক্ষের এই সওয়াল জবাব শোনার পরই বিচারক ধৃত আরসালান পারভেজকে পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে আরসালান রেস্তরাঁ চেনের ম্যানেজার মহম্মদ মুস্তাফা জানান, “পারভেজ অত্যন্ত ভাল ছেলে। সে বিদেশে পড়াশোনা করেছে। পড়াশোনা সেরে কলকাতায় ফিরে সে বাবার ব্যবসা দেখাশোনা করত। দুর্ঘটনার আগে সে ছিল এই সংস্থার তারাতলার কাউন্টারে। সেখানে হিসেবনিকেশ করে রাতে বাড়ি ফিরছিল। রাত হয়ে গিয়েছে বলে তাড়াতাড়ি করে সে গাড়ি চালাচ্ছিল। এই দ্রুতটাই কাল হল তার।
[আরও পড়ুন:প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে বন্দির উপর হামলা, গুরুতর আহত কুখ্যাত দুষ্কৃতী]
The post পুলিশ হেফাজতে সর্বক্ষণ ছেলের পাশে মা, আরসালানকে সান্ত্বনা পরিবারের appeared first on Sangbad Pratidin.