সুকুমার সরকার, ঢাকা: বাংলাদেশের (Bangladesh) স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে খাদ্যপণ্যের প্রথম চালান হিসেবে ‘প্রাণ গ্রুপ’-এর ২৫ হাজার বাক্স লিচি ড্রিংকস নিয়ে ভারতের উদ্দেশে রওনা হয়েছে পণ্যবোঝাই জাহাজ। মঙ্গলবার নরসিংদীর পলাশে অবস্থিত প্রাণ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক থেকে রওয়ানা হয়েছে জাহাজটি। এটি সরাসরি কলকাতা বন্দরের টিটি শেডে গিয়ে পৌঁছাবে।
[আরও পড়ুন: কেমন আছে রোহিঙ্গারা? পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ভাসানচর পরিদর্শনে রাষ্ট্রসংঘের প্রতিনিধিরা]
বাংলাদেশের নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। ভারতে প্রাণ বর্তমানে দেড় শতাধিক পণ্য রপ্তানি করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পণ্য হলো- ফ্রুট ড্রিংকস, চিপস, স্ন্যাকস, বিস্কুট, ক্যান্ডি, সস, কেচাপ, নুডলস, সস, জেলি ও মশলা। পণ্যবোঝাই জাহাজটি ঢাকার অদূরে নরসিংদীর শীতলক্ষ্যা থেকে যাত্রা শুরু করে দুপুর ১টায়। জাহাজটি নারায়ণগঞ্জ, খুলনার শেখবাড়িয়া হয়ে কলকাতা বন্দরে গিয়ে পৌঁছাবে। ৭১০ কিলোমিটার দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে জাহাজটির গন্তব্যে পৌঁছাতে ৩-৪ দিন সময় লাগবে। সংশ্লিষ্ট আধিকারিকরা জানান, সড়কপথের চেয়ে নৌপথে পণ্য পরিবহণে খরচ অন্তত ৩০ শতাংশ কম। সড়কপথে অনেক জায়গায় রাস্তা খারাপ হওয়ায় পণ্য নষ্ট কিংবা পণ্যের গুণগত মান নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে। কিন্তু নৌপথ এক্ষেত্রে নিরাপদ। ট্রাকে পণ্য পরিবহণে একাধিকবার লোডিং ও আনলোডিংয়ের প্রয়োজন পড়ে। এতে পণ্যের গুণগত মান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু নৌপথে পণ্য পরিবহণে পণ্যের গুণগতমান ভাল থাকে।
রপ্তানি সংশ্লিষ্ট মনে করেন, সড়কপথে পণ্য পাঠানোর জন্য অনেক ট্রাক লাগে যা ব্যবস্থা করতে রফতানিকারকদের বেশ বেগ পেতে হয়। এছাড়া ট্রাকভাড়াও বিভিন্ন সময় ওঠানামা করে। এতে খরচ বেড়ে যায়। কিন্তু নৌপথে একটি বার্জে একসঙ্গে অনেক পণ্য পাঠানো যায়। নদীপথে অবকাঠামোগত কোনও সমস্যা থাকলে তার সমাধান করে এই পথে পণ্য রপ্তানি করলে নিঃসন্দেহে দেশের বাণিজ্য বাড়বে এবং উভয় দেশ এর মাধ্যমে উপকৃত হবে। প্রাণ গ্রুপ-এর আধিকারিকরা জানিয়েছেন, প্রতিবেশী দেশ ভারতে সংস্থাটির রপ্তানি শুরু হয় ১৯৯৭ সালে। তখন পার্শ্ববর্তী রাজ্য ত্রিপুরায় যায় প্রাণ চানাচুর। সেখান থেকে এখন ভারতের ২৮টি রাজ্যের প্রতিটিতেই প্রাণ পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। প্রাণ গ্রুপ-এর পণ্য যায় ভারতের অসম, পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর প্রদেশ, বিহার, ত্রিপুরা, গুজরাট, পাঞ্জাব, তামিলনাড়ু ও কেরলে। তারা জানান, ১৩০ কোটি মানুষের দেশ ভারতে প্রাণ পণ্যের বিশাল বাজার রয়েছে। প্রতিবেশী দেশ হওয়ায় ভারতের আবহাওয়া, মানুষের খাদ্যাভ্যাস-সহ বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশিদের সঙ্গে অনেক মিল রয়েছে। এবং সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে দেশটিতে বাংলাদেশের খাদ্যপণ্যের চাহিদা বাড়িয়ে তোলার সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ ও ভারতের ‘সেভেন সিস্টারস’ নামে পরিচিত উত্তর-পূর্বের সাত রাজ্যে বাংলাদেশে উৎপাদিত প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
এদিকে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, নদী-সুমদ্রপথেই অর্থনীতির নয়া ভিত গড়ছে বর্তমান সরকার। যা গত ১২ বছরে প্রমাণিত হয়েছে। অভ্যন্তরীণ নৌপথ ড্রেজিং করে সচল রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। ৯৫ ভাগ পণ্য পরিবহন হয় নদী-সুমদ্রপথে। করোনা মহামারির মধ্যে সমস্ত পথ বন্ধ থাকলেও নৌপথ কিন্তু বন্ধ হয়নি।