গোবিন্দ রায়: গরু পাচারের অভিযোগ তো আগেই ছিল। মাঝে মধ্যেই রাজ্যের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে পাচারের সময় বিরল প্রজাতির পশুপাখি ধরা পড়ার খবর উঠে আসে শিরোনামে। এরই মধ্যে এবার এরাজ্য থেকে ভিন রাজ্যে, প্রতিবেশী দেশে হাতি পাচারের অভিযোগ উঠল কলকাতা হাই কোর্টে। যা নিয়ে রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। রাজ্যের প্রায় ২৬টি থেকে ২৮টি হাতি অন্য দেশে নাহলে অন্য রাজ্যে পাচার হয়ে গিয়েছে। একটি মামলার সাপেক্ষে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য জমা পড়েছে।
‘‘বিরাট আকারের সেই ডাইনোসর আজ আর পৃথিবীতে নেই। তারপর সবচেয়ে স্থূলকায় প্রাণী একমাত্র হাতিই টিকে আছে। সেই হাতি কি না এখন পাচার হয়ে যাচ্ছে!’’ –এমনই মন্তব্যে বিস্মিত হাই কোর্টের বিচারপতি অরিন্দম মুখোপাধ্যায় ও রবি কৃষান কাপুরের ডিভিশন বেঞ্চ। এনিয়ে হলফনামাও তলব করেছে আদালত। ২৭ সেপ্টেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানি। আদালতের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে ডিভিশন বেঞ্চের দুই বিচারপতির আরও মত, ‘‘সম্প্রতি অস্কার জিতে নিয়েছে ‘এলিফ্যান্ট হুইসপারার্স’। কার্তিকি গঞ্জালভেস পরিচালিত ভারতের প্রথম অস্কারজয়ী তথ্যচিত্রে তুলে ধরা হয়েছে হাতির সঙ্গে মানুষের নিবিড় সম্পর্কের কথা। যেখানে একটি দলছুট হাতিছানাকে এক দম্পতির সন্তানের মতো লালনপালনের কাহিনি তুলে ধরা হয়েছে, সেখানে হাতিকে দিয়ে বেগার খাটিয়ে নিচ্ছে একদল মানুষ!’’
[আরও পড়ুন: ‘কাজ কম, মাইনে বেশি, তাই টাকা দিয়ে শিক্ষকের চাকরি কেনা’, সৌগত রায়ের মন্তব্যে বিতর্ক]
তবে কোথা থেকে আসছে এই হাতি? আর পাচারই বা হচ্ছে কোথায়? কেপ ফাউন্ডেশন নামে একটি পশুপ্রেমী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার আনা জনস্বার্থ মামলায় সংস্থার আইনজীবী বিশ্বনাথ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘‘এরাজ্য-সহ একাধিক রাজ্যে এখন সার্কাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফলে সার্কাসের ওই হাতি বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। এনিয়ে অনুসন্ধানও চালিয়েছে ওই সংস্থা। তাঁদের দাবি, ঘুরপথে হাতি পাচারের সময় ধরা পড়লে যুক্তি দেখানো হচ্ছে, ‘হাতি মেরে সাথী’। হাতিগুলিকে কত যত্নআত্তি করে প্রতিপালন করা হচ্ছে তা দেখানো হচ্ছে। কিন্তু আদপে হাতিগুলিকে দিয়ে খাটানো হচ্ছে।’’
‘বন্যপ্রাণী সুরক্ষা আইন ১৯৭২’ অনুযায়ী, সকল বন্যপ্রাণী সরকারের সম্পদ। আর্থিক বিবেচনা বা অন্য কোনও লাভজনক কাজের জন্য বন্যপ্রাণকে ব্যবহার করা যায় না। সেখানে বন্দি হাতি এক ব্যক্তির থেকে অন্যের কাছে বিক্রি, কেনা বা স্থানান্তরও করা যায় না। অর্থাৎ হাতি যে রাজ্যের হয়ে নথিবদ্ধ থাকে তাকে আর অন্য রাজ্যে বিক্রি করা যায় না। এক কথায়, হাতি রাজ্যের সম্পত্তি। কিন্তু কে শোনে কার কথা। আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে হাতি আপাতত পাচার হয়ে যাচ্ছে ভিন রাজ্যে।
মামলায় ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আদালতের হস্তক্ষেপ চেয়ে এমন তিনটি হাতিকে ফেরত চেয়েছে যারা এক সময় এরাজ্যে ছিল। বর্তমানে হাতিগুলির ঠিকানা প্রতিবেশী রাজ্য বিহার। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার আইনজীবী জানিয়েছেন, এ রাজ্যের সার্কাস কোম্পানি নটরাজ তাদের তিনটি হাতি বিক্রি করে দেয়। যাদের বিহারে এক আশ্রম থেকে পাওয়া যায়। ওই আশ্রম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তাঁরা হাতিগুলি উপহার পেয়েছেন। হাতি তাঁদের আশ্রমে যত্নের সঙ্গেই রাখা আছে। সুপ্রিম কোর্টে আশ্রম কর্তৃপক্ষ মামলা দায়ের করলে আশ্রমের বক্তব্য শুনতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে সংস্থার দাবি, হাতিদের কিনে নিয়ে গিয়ে তাদের দিয়ে বিভিন্ন কাজ করানো হয়। তাদের বক্তব্য, হাতি বিক্রি করা যায় না। এমনকী উপহারও দেওয়া যায় না।