অর্ণব আইচ: প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর আপ্তসহায়কের ‘চেম্বারে’ হয়েছিল এসএসসি কমিটির বৈঠক। শিক্ষক নিয়োগের আগে ওই বৈঠকের ব্যাপারে তথ্য হাতে আসার পর তা নিয়ে ইতিমধ্যেই সিবিআই জেরা করেছে পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee) ও এসএসসির ধৃত কর্তাদের। এই ব্যাপারে আরও তথ্য জানতে জেরা করা হচ্ছে এসএসসির প্রাক্তন কর্তা তথা উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুবীরেশ ভট্টাচার্যকে।
বৃহস্পতিবার এসএসসির প্রাক্তন মুখ্য উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিংহ, অভিযুক্ত প্রদীপ সিং ও প্রসন্ন রায়ের সঙ্গে আলিপুরে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে তোলা হয়। ধৃতদের আইনজীবী জামিনের আবেদন করে বলেন, বহুদিন ধরেই তাঁরা হেফাজতে রয়েছেন। তাঁদের কাছ থেকে তদন্তে নতুন কিছু পাওয়ার নেই। তাই তাঁদের জামিন দেওয়া হোক। সিবিআইয়ের আইনজীবী আদালতে জানান, ধৃতরা ষড়যন্ত্রের অংশ। তাঁদের সুপারিশ পত্রের মাধ্যমেই শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে। তাঁদের কাছ থেকে এখনও বহু তথ্য পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে তাঁদের ৫ অক্টোবর পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।
[আরও পড়ুন: দুর্ঘটনায় সিভিক ভলান্টিয়ার-সহ ৩ জনের মৃত্যুতে উত্তাল উলুবেড়িয়া, দেহ রাস্তায় রেখে বিক্ষোভে সহকর্মীরা]
সিবিআইয়ের সূত্র জানিয়েছে, নগদ টাকা দিলেই হাতে হাতে নিয়োগপত্র দেওয়া হত ভুয়ো চাকরিপ্রার্থীদের। এই ব্যাপারে বেশ কিছু তথ্য ও প্রমাণ সিবিআইয়ের হাতে এসেছে। তারই ভিত্তিতে চলছে তদন্ত। ইতিমধ্যেই অভিযোগপত্রের সূত্র ধরে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য এসেছে যে, শান্তিপ্রসাদ সিনহা (Santiprasad Sinha) নিয়োগ নিয়ে বৈঠক ডেকেছিলেন। সেই বৈঠকটি তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আপ্তসহায়কের চেম্বার তথা অফিসে হয়। অথচ এসএসসির নিজস্ব একটি বাড়ি আছে। সেখানে বৈঠক হওয়ার জন্য আলাদা জায়গা রয়েছে। সিবিআইয়ের অভিযোগ, আসল চাকরিপ্রার্থীদের বঞ্চিত করে কীভাবে এজেন্টদের মাধ্যমে টাকা নিয়ে ভুয়ো প্রার্থীদের চাকরি দেওয়া হবে, সেই ছকের ব্লুপ্রিন্ট যাতে বাইরে না বের হয়, তার জন্য এসএসসির মুখ্য উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিংহ এসএসসির অন্য কর্তাদের নিয়ে আর নিজেদের অফিসে বৈঠক করেননি। সেই বৈঠকটি মন্ত্রীর আপ্তসহায়কের অফিসে হয়। জেরার মুখে একাধিকবার পার্থ চট্টোপাধ্যায় সিবিআইয়ের কাছে দাবি করেছেন যে, এসএসসির কমিটির কর্তারা কীভাবে দুর্নীতি করেছেন, সেই সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না।
কিন্তু সিবিআই আধিকারিকদের মতে, মন্ত্রীর আপ্তসহায়কের অফিসে বৈঠক হবে, আর মন্ত্রী কিছুই জানবেন না, তা প্রায় অসম্ভব। ওই বৈঠকে কারা কারা উপস্থিত ছিলেন ও সেখানে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, তা নিয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অন্য ধৃতদের জেরা করা হয়। তাঁদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য নিয়ে সুবীরেশ ভট্টাচার্যকেও নিজাম প্যালেসে সিবিআই আধিকারিকরা জেরা করেন। সিবিআইয়ের দাবি, ধৃতদের বক্তবেব্যের অসঙ্গতি রয়েছে। তাঁরা বেশ কিছু তথ্য চেপে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ। এ ছাড়াও নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে দ্বিতীয়বারের জন্য বৈঠক হয়েছে বলে সিবিআইয়ের কাছে তথ্য ও অভিযোগ এসেছে। যদিও জেরার সময় এই বৈঠক নিয়েও জেরায় মিলেছে অসঙ্গতি। এই তথ্যগুলির সপক্ষে আরও তথ্য ও প্রমাণ খোঁজা হচ্ছে। শিক্ষা দফতরের আরও কয়েকজন কর্মী ও আধিকারিককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলে জানিয়েছে সিবিআই (SSC)।