স্টাফ রিপোর্টার: একদিকে ভূয়সী প্রশংসা। অন্যদিকে বকেয়া টাকা বরাদ্দ। বাংলার মিড-ডে মিল প্রকল্পকে গোটা দেশে মডেল বানানোর ডাক দিল কেন্দ্র। দিল্লিতে কেন্দ্র-রাজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠকের পর কেন্দ্রের আধিকারিকদের স্পষ্ট পর্যবেক্ষণ, গোটা দেশে বাংলার মডেলই অনুসরণ করা উচিত। রাজ্যের এই সাফল্যের কথা উল্লেখ করে শুক্রবার এক্স হ্যান্ডলে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু লেখেন, ‘‘গতকাল দিল্লিতে কেন্দ্র-রাজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মিড ডে মিল প্রোগ্রাম এবং তা চালানোর মডেলকে ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে! মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমাদের সরকারের উন্নয়নের মডেল আরও একবার প্রমাণিত হল।’’
মিড ডে মিল নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বারবার সরব হয়েছে বঙ্গ বিজেপি। গেরুয়া শিবিরের সেই সব অভিযোগ খতিয়ে দেখতে দফায় দফায় মিড-ডে মিল নিয়ে তদন্ত করতে রাজ্যে এসেছে কেন্দ্রীয় দলও। এদিন মন্ত্রী সেই প্রসঙ্গও টেনে আনেন। লেখেন, ‘‘কিছুদিন আগের কেন্দ্রীয় দলের অপপ্রচার এবং বিরোধী কুৎসা আবার একবার ভুল প্রমাণিত হল! অশোকস্তম্ভের তলার লেখাটাই আবার প্রতিষ্ঠিত হল।’’ এখানেই শেষ নয়, বাংলার মিড-ডে মিলের মডেল বিরোধীদের কুৎসা উড়িয়ে যেভাবে প্রশংসা আদায় করে নিয়েছে তাকে ‘সত্যের জয়’ বলেই অভিহিত করেছেন ব্রাত্য। হ্যাশটাগ দিয়েছেন ‘সত্যমেব জয়তে’।
[আরও পড়ুন: ১৫ মিনিটে ৩ হাজার লোক জড়ো করেন শাহজাহান! ‘প্রভাবশালী’ যুক্তিতে খারিজ আগাম জামিনের আর্জি]
প্রশংসার পাশাপাশি রাজ্যকে নতুন করে এই খাতে টাকাও বরাদ্দ করেছে কেন্দ্র। শিক্ষা দপ্তর সূত্রের খবর, ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে সমগ্র শিক্ষা মিশন প্রকল্পে ৩৬০০ কোটি টাকা মঞ্জুর করা হয়েছে। এবং বর্তমান অর্থবর্ষে তৃতীয় ইনস্টলমেন্টে কেন্দ্রের শেয়ার হিসাবে ৪৮৫ কোটি টাকা পাচ্ছে রাজ্য। স্কুলের পরিকাঠামো ও মিড-ডে মিলের ব্যয় নির্বাহে খরচ হবে এই টাকা। নবান্নের এক আধিকারিক জানালেন, বিজেপির রাজ্য নেতাদের আপত্তি সত্ত্বেও রাজ্যকে টাকা বরাদ্দ কেন্দ্রের। লোকসভা ভোটের আগে এটাই সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয়!
আসলে সমগ্র শিক্ষা মিশনের মিড-ডে মিল প্রকল্পকে এমন কায়দায় বাস্তবায়িত করেছে রাজ্য যে কর্মসংস্থানের নতুন নতুন দিক খুলে গিয়েছে।
যেমন দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপের কথাই ধরা যাক। কাকদ্বীপ পঞ্চায়েত সমিতির অধীনে প্রায় তিন হাজার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে প্রায় ৩৫ হাজার মহিলা যুক্ত। মহিলারা এতদিন নিজেদের উদ্যোগে হাঁস, মুরগি পালন করতেন। কেউ সবজি ও মাশরুম চাষ করেন। কিন্তু তাঁদের উৎপাদিত পণ্য বাজারে বিক্রি করতে সমস্যা হচ্ছিল। পঞ্চায়েত সমিতি মারফৎ স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সেই সব উৎপাদিত পণ্য সরাসরি কিনে নিচ্ছে ৪০০টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র ১৫২টি প্রাথমিক ও ৪৫টি জুনিয়র ও উচ্চ বিদ্যালয়।
মিড ডে মিলের সূত্র ধরে অনেক স্কুল সবজি চাষও শুরু করেছে। যেমন হুগলির গোঘাট হাইস্কুলের কথাই ধরা যাক। এখানকার শিক্ষক-শিক্ষিকারা স্কুলেই কিচেন গার্ডেন করে মরশুমি সবজি ফলাচ্ছেন। সম্পূর্ণ জৈব উপায়ে ফলানো সেই সবজি দিয়ে তৈরি মিড-ডে মিল ছাত্র-ছাত্রীদের খাওয়ানো হচ্ছে। এমন উদাহরণ অনেক রয়েছে। রাজ্যের এমন উদ্ভাবনী মনোভাবই প্রশংসিত হয়েছে সচিব পর্যায়ের বৈঠকে। যা নিয়ে তৃণমূলের কটাক্ষ, বাংলার টাকা আটকে রাখা যে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক বিষয় তা আরও একবার প্রমাণ হয়ে গেল।