সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বৈবাহিক ধর্ষণের অপরাধকরণের আর্জি জানিয়ে জমা পড়া পিটিশনের বিরোধিতা করল কেন্দ্র। সুপ্রিম কোর্টে মোদি সরকার জানিয়ে দিল, বৈবাহিক ধর্ষণ যতটা আইনি বিষয়, তার চেয়ে অনেক বেশি সামাজিক উদ্বেগের কারণ। তাই এই বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নানা ধরনের মত শোনা উচিত।
কেন্দ্রের দাবি, ভারতে বিবাহকে পারস্পরিক বাধ্যবাধকতার একটি প্রতিষ্ঠান হিসাবে বিবেচনা করা হয়। বিয়ের পর যৌনতায় মহিলাদের সম্মতির বিষয়টির ক্ষেত্রে শাস্তিদানের দিকটি আলাদা। পাশাপাশি প্রশাসনের যুক্তি, বৈবাহিক নির্যাতনের ক্ষেত্রে বর্তমান আইনের অধীনে পর্যাপ্ত আইনি প্রতিকার ইতিমধ্যেই রয়েছে।
লক্ষণীয়ভাবে, বৈবাহিক ধর্ষণ নিয়ে আইন প্রণয়নের মতো বিতর্কিত বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার ধারাবাহিকভাবে নীরবতা পালন করতে থাকায়, পদক্ষেপ করে সুপ্রিম কোর্ট। বর্তমান আইনে সাবালিকা স্ত্রীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাঁর সঙ্গে বলপূর্বক যৌন সম্পর্ক স্থাপনের অভিযোগে স্বামীরা সচরাচর ছাড় পেয়ে থাকেন। একেই চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আদালতে অনেক অভিযোগ জমা পড়েছিল। এদিন সেই আর্জিরই বিরোধিতা করল কেন্দ্র। সেই সঙ্গে তাদের আর্জি, বৈবাহিক ধর্ষণকে কোনওভাবে অপরাধকরণ করার ক্ষেত্রে সেই সিদ্ধান্ত যেন আদালতে নয় আইনসভায় ঠিক হয়। কেননা এই সিদ্ধান্তের সামাজিক প্রতিক্রিয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে।
প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টে যে সমস্ত পিটিশন দাখিল করা হয়েছিল, তাতে বর্তমানে বাতিল ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারা অনুযায়ী ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে কোনও স্ত্রীর সঙ্গে তঁার ইচ্ছার বিরুদ্ধে স্বামীর যৌনক্রিয়াকে ধর্ষণ বলে গণ্য করা হবে না। এমনকী নতুন প্রবর্তিত ন্যায় সংহিতাতেও বিষয়টিতে একইভাবে স্বামীকে ছাড়ের কথা রয়েছে।
বৈবাহিক ধর্ষণ প্রসঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে কর্নাটক ও দিল্লি হাই কোর্টের দুই রায়ে দেশজুড়ে হয় ব্যাপক আলোচনা। কর্নাটক হাই কোর্ট এক রায়ে জানায়, যুগে যুগে স্বামীর পোশাক পরিধানকারী পুরুষ নিজেদের স্ত্রীর দেহ, মন ও আত্মার শাসক হিসাবে দেখে আসছে। প্রচলিত এই চিন্তাধারা ও প্রথা মুছে ফেলা উচিত। এই পুরনো, পশ্চাদপসরণমূলক এবং পূর্বকল্পিত ধারণার উপর ভিত্তি করেই এই ধরনের ঘটনাগুলি দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। এই ধরনের অসাম্যের অস্তিত্ব নিয়ে চিন্তা করার দায়িত্ব আইন প্রণেতাদের। স্বামী বলেই জোরপূর্বক মিলনে লিপ্ত হওয়া যায় না। আবার দিল্লি হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ এই বিষয়ে বিভক্ত রায় দেয়।