ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: রোগ ধরা পড়েছে। চিকিৎসাও সফল হয়েছে। নতুন উদ্যমে তাই আগামী ২২ জুলাই, সোমবার দুপুর ২.৪৩ মিনিট নাগাদ ফের উড়ান শুরু করতে চলেছে চন্দ্রযান-২। বৃহস্পতিবার চন্দ্রযান-২ উৎক্ষেপণের নতুন দিন ক্ষণের ঘোষণা করল ইসরো।
তবে এর আগে গত ১৫ জুলাই উৎক্ষেপণের কথা থাকলেও একেবারে শেষ মুহূর্তে যাত্রা স্থগিত করেছিল ভারতের ‘বাহুবলী’ যান। কারণ হিসাবে তখনই যান্ত্রিক ত্রুটির দিকে আঙুল তুলেছিল ইসরো। জানিয়েছিল, রকেট থেকে তরল গ্যাস নির্গমন হওয়ার কারণেই ডানা মেলার ঠিক ৫৬ মিনিট ২৪ সেকেন্ড আগে স্থগিত করা হয়েছে জিওসিনক্রোনাস স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল মার্ক থ্রি-র অভিযান। তবে তার পাশাপাশি এই আশ্বাসও দিয়েছিল যে, অভিযান স্থগিত করা মানেই তা বাতিলের খাতায় ফেলে দেওয়া নয়। বরং চলতি মাসের শেষের দিকেই ফের উড়ানের চেষ্টা করা হবে। আর বাস্তবে ঘটলও ঠিক তাই। ‘চাঁদমামার দেশে’ দ্বিতীয় চন্দ্রযানের অভিযান ‘স্থগিত’ ঘোষণার চার দিনের মাথাতেই সামনে এল বহু-প্রতীক্ষিত এই উড়ানের নয়া সময়সূচি।
জানা গিয়েছে, আগামী ২২ জুলাই, দুপুরে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ কেন্দ্রের দ্বিতীয় লঞ্চপ্যাড থেকে উৎক্ষেপণ করা হবে চন্দ্রযান-২। শুধু তাই নয়। গত ১৫ জুলাই উৎক্ষেপণ করার আগে রকেটে জ্বালানি ভরার ক্ষেত্রে যে সমস্যা দেখা গিয়েছিল, তা পুরোপুরি মিটে গিয়েছে। আর তাই আগামী রবিবার যাত্রা শুরু করার পর ৩১ জুলাই চাঁদের লুনার ট্রান্সফার অরবিটে ঢুকে পড়বে দ্বিতীয় চন্দ্রযান। এর ফলে পূর্ব নির্ধারিত ৬ সেপ্টেম্বরই চাঁদের মাটিতে অবতরণ করতে পারবে ল্যান্ডার বিক্রম এবং রোভার প্রজ্ঞান। তা না হয় হল। কিন্তু ১৫ জুলাই ঠিক যে কারণে অভিযান আচমকাই রদ করে দেওয়া হয়েছিল, তার পুনরাবৃত্তি ২২ তারিখ ঘটবে না, সেই গ্যারান্টি কে দেবে? জ্বালানি তথা তরল গ্যাস যদি ফের ‘লিক’ করে? যদি ওড়ার পর পুরনো ব্যারাম আবার মাথা চাড়া দেয়? সেক্ষেত্রে মোকাবিলার উপায় কী? সৌভাগ্যবশত, এ সবের উত্তর আগে থেকেই তৈরি করে রেখেছেন ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার বিজ্ঞানীরা। কারণ, আগের বারের ‘ব্যর্থতা’ থেকেই শিক্ষা নিয়েছেন তাঁরা।
[আরও পড়ুন: ম্যারাথন মহাকাশ অভিযানের পথে ভারত, চন্দ্রযান ৩-এর প্রস্তুতিও শেষ ইসরোর]
আর একবার আসল রোগ ধরে ফেলার পর তা সারিয়ে ফেলার মোক্ষম উপায়টিও বের করে ফেলেছেন তাঁরা। জানা গিয়েছে, একটি নয়। সমস্যা সমাধানের দু’দুটি বিকল্প রয়েছে বিজ্ঞানীদের হাতে। এক, মঙ্গলবার রাতে রকেটের হিলিয়াম গ্যাস বোতলের একটি ‘নিপল জয়েন্ট’-এ যে সমস্যার কথা জানানো হয়েছিল (বৈজ্ঞানিকদের পরিভাষায় যার নাম রিজিড জয়েন্ট) তা ঠিক করতে গেলে জয়েন্টটিকে ‘সিল’ করে অতিরিক্ত ঠান্ডা (মাইনাস ১৮৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস) থেকে আলাদা করে রাখতে হবে। দুই, রকেটের যন্ত্রাংশগুলিকে বিচ্ছিন্ন না করেই মেরামত করতে হবে ইঞ্জিনটিকে। বিজ্ঞানীদের দাবি, এই দুই কৌশলের মধ্যে দ্বিতীয়টি অপেক্ষাকৃত কঠিন। বিজ্ঞানীদের আরও দাবি, ক্রায়োজেনিক ইঞ্জিনে এই ধরনের ‘রিজিড জয়েন্ট’ সচরাচর রুশ মহাকাশ গবেষণায় দেখা যায়। এ থেকে সাধারণত জ্বালানি ‘লিক’ করে না। কিন্তু কোনও কারণে ‘লিক’ করলে পুরনোটিকে সরিয়ে নতুন ‘জয়েন্ট’ তৈরি করতে হয়। মার্কিন মহাকাশ গবেষণায় অবশ্য এই সমস্যা হয় না। কারণ মার্কিনরা ব্যবহার করেন ‘ফ্লেক্সিবল জয়েন্ট’। যা বিকল হলে সারিয়ে তোলা সম্ভব।
The post জল্পনার অবসান, ২২ জুলাই ফের অভিযানে নামতে চলেছে চন্দ্রযান-২ appeared first on Sangbad Pratidin.