তরুণকান্তি দাস, খেরাগড়: তিনি রাজা। রাজরক্ত বইছে তাঁর শিরায় শিরায়। তাই বউয়ের কাছ থেকে ‘ছুটকারা’ পাওয়ার জন্য ১১ কোটি টাকা দিয়েছেন তিনি। ‘ডিভোর্স’-র জন্য গিনেস বুকে নাম তোলার সুযোগ থাকত, তাহলে নিশ্চিতভাবেই নাম উঠত তাঁর। এপার থেকে ওপারে হেঁটে যেতে হাঁফ ধরে যাবে এমন প্রাসাদ। কমল নিবাসের বৈঠকখানায় বসে হাসতে হাসতে নিজেই বললেন সে কথা।
বলতেই পারেন। এইসব তাঁকেই মানায়। বৈঠকখানায় একের পর এক ফ্রেমবন্দি পূর্বপুরুষ। কিছু তৈলচিত্র, যখন ছত্তিশগড়ের জন্ম তো দূর, সাদা-কালো ছবির অস্তিত্বও ছিল কল্পনামাত্র। তাও আবার রাজধানী শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে খয়রাগড়ে, পঞ্চম রাজাসাহেব হিসেবে জ্বলজ্বল করছে দেবব্রত সিংয়ের নাম। রাজ ঘরানা, কংগ্রেস অনুগামী– ভারতীয় রাজনীতির এই প্রচলিত স্রোতেই গা ভাসিয়েছেন তিনি। অবিভক্ত মধ্যপ্রদেশের রাজ্যসভার সাংসদ কংগ্রেসের দু’বারের বিধায়ক। তিনি এখন ছত্তিশগড়ের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অজিত যোগীর দলে। বিধানসভার ভোটে রাজ্যের সবচেয়ে ধনী প্রার্থী । রাজ-এস্টেট ছাড়া তাঁর ব্যক্তিগত সম্পত্তি পরিমাণ প্রায় ১২০ কোটি টাকা।
[নমাজের সময় হাতে রাখা যাবে না নেলপলিশ! নয়া ফতোয়ায় চরমে বিতর্ক]
কিন্তু ডিভোর্স কেন? সেখানেও রাজনীতির সাপলুডো খেলা। নাগবংশী ডায়েনস্টির তৃতীয় রাজা বীরেন্দ্রবাহাদুর সিং ছিলেন চার বারের বিধায়ক। দুন স্কুলে রাজীব গান্ধীর সঙ্গে পড়েছেন আর এক রাজা শিবেন্দ্র বাহাদুর। যিনি তিনবার সাংসদও হয়েছিলেন। অর্থাৎ কংগ্রেসের সঙ্গে এই রাজ পরিবারের সম্পর্কের দীর্ঘদিনের। তাই সেই পথে হাঁটতে অসুবিধা হয়নি দেবব্রতর। ঝড়টা উঠল ২০০৭-এ। সেবার স্ত্রী পদ্মাসীনকে বিধানসভা ভোটে দাঁড় করিয়ে নিজে সাংসদ হতে চেয়েছিলেন দেবব্রত। কিন্তু স্বপ্ন অধরা থেকে গেল। উলটে সংসারে ঢুকল রাজনৈতিক অবিশ্বাসের বিষ। সঙ্গী হল কিছু ব্যক্তিগত বিষয়। যার জল গড়াল আদালত পর্যন্ত। রাজ পরিবারের বিষয় বলেই একাধিক রাজার হস্তক্ষেপে রফাসূত্র মেনে নিজের মেয়েকে কাছে রাখলেন দেবব্রত। স্ত্রীর কাছে চলে গেল ছেলে আর্যব্রত। চারকোটি টাকা দামের দিল্লির বাংলো এবং প্রায় সাতকোটি টাকার নগদ মূল্য চোকাতে হল। গয়নার হিসেব কখনও রাজবাড়ির খাতায় লেখা থাকে না এটা মনে করিয়ে দেওয়াই ভাল।
সেই রাজা দেবব্রত এবারও লড়ছেন। মাস পয়লায় ছেলের জন্য ৫০ হাজার টাকা পাঠাতে হয়েছে শর্তমাফিক। আর ভোটের খরচ? সে হিসেব কে রাখে। তিনি রাজা শুধু মনেই তো নয়, শরীরেও। শুধু ২০১৬-র ডিসেম্বর থেকে স্ত্রী সঙ্গে নেই, এই যা। তাতে কিছুই এসে যায় না। তাঁর প্রচারের স্টাইল অনেকটা মালদহের প্রয়াত নেতা আবদুল গনিখান চৌধুরির মতো। ভোটের আগে খান দুয়েক সভায় গিয়ে বলবেন, ‘আমি এলাম’। সবাই উঠে দাঁড়িয়ে বলবেন, ‘আসার কোনও প্রয়োজন ছিল না। আমরাই তো যেতাম,’ তিনি ফিরে যাবেন কমল নিবাসের বৈঠকখানায়। এটাই ছিল রেওয়াজ। এবার অঙ্ক কি কঠিন! তাই তিনি সভা করছেন। এ লড়াই রাজার। যাঁর মনে রাজত্ব হারানোর ভয় ভরপুর। আর যাইহোক নিজেকেই জিততে হবে এবার। দেখাতে হবে রাজপরিবারে খেরাগড়ের আনুগত্য অটুট কি না।