বাবুল হক, মালদহ: শীতের পিকনিকে চিকেনের চাহিদা মেটাচ্ছে বাংলাদেশের সোনালি মুরগি! দেশি মুরগি ভেবে কিনে নিয়ে ঠকছেন অনেকেই। আর এই বিষয়টিই এখন ভাবিয়ে তুলেছে প্রাণিসম্পদ বিকাশ দপ্তরের কর্তাদের। অভিযোগ, শীত পড়তেই মালদহের মহদিপুর সীমান্ত দিয়ে এবার চোরাপথে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ঢুকছে সোনালি মুরগি। যা ছেয়ে ফেলেছে মালদহের বাজার।
সোনালি মুরগি বিকোচ্ছে ইংলিশবাজার শহরেও। শুধু তা-ই নয়, প্রাণিসম্পদ বিকাশ দপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, “বাংলাদেশের কম দামি সোনালি মুরগির গোপনে চাষ হচ্ছে ইংলিশবাজার ব্লকের বেশ কয়েকটি পোলট্রি ফার্মে। তাঁদের কাছে সরকারি কোনও অনুমতি নেই। মানুষ প্রতারিত হচ্ছেন।” অভিযোগ, এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী দেশি মুরগির দামে কম দামি সোনালি মুরগি খোলা বাজারে বিক্রি করছেন। দেশি মুরগির মতো দেখতে হলেও স্বাদে ও গন্ধে পুরো ফিকে এই সোনালি মুরগি। বাংলাদেশ থেকে চোরাপথে ভারতে ঢুকেই এই পিকনিকের মরশুমে সোনালি মুরগি বাজার দাপাচ্ছে।
[আরও পড়ুন: ‘ইডির বিরুদ্ধে এখনই পুলিশি পদক্ষেপ নয়’, সন্দেশখালি কাণ্ডে নির্দেশ হাই কোর্টের]
এক মুরগি ব্যবসায়ী জানালেন, বাংলাদেশের এই সোনালি মুরগির বাচ্চার দাম প্রতি জোড়া ২৫ থেকে ৩০ টাকা। দেশি মুরগির বাচ্চার দাম এক জোড়া ৬০ থেকে ৭০ টাকা। ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় ভারতীয় মুরগি ব্যবসায়ীদের একাংশ তাঁদের পোলট্রি খামারে বাংলাদেশের সোনালি মুরগি চাষ করছেন। মালদহ শহর তো বটেই, ইংলিশবাজার, কালিয়াচক, বৈষ্ণবনগর, হবিবপুর, বামনগোলা এবং ওল্ড মালদহ ব্লকের সীমান্তবর্তী এলাকায় কিছু ফার্মে এই মুরগি পালন করা হচ্ছে। শহরের মিরচকের এক মুরগি ব্যবসায়ীর অভিযোগ, সস্তায় বাংলাদেশের সোনালি মুরগির বাচ্চা কিনে ভারতে প্রতিপালন করে তা ‘দেশি’ বলে বিক্রি করা হচ্ছে। তাতে দেশি মুরগির ব্যবসা লাটে উঠেছে। স্থানীয় মুরগি ব্যবসায়ীরা মার খাচ্ছেন। তবে স্বাদে দেশি মুরগির মতো সুস্বাদু নয় সোনালি মুরগি। সাধারণ মানুষ প্রতারিত হচ্ছেন। কোনওভাবে রং দেখে এই সোনালি মুরগি চেনার উপায় নেই। বাজার ছেয়ে গিয়েছে নকল মুরগিতে।
গৌড়রোডের এক ব্যবসায়ী নুর হোসেন বলেন, “আপনার থেকে দাম নেওয়া হবে দেশি মুরগির, কিন্তু আপনাকে দেওয়া হবে নকল অর্থাৎ সোনালি প্রজাতির মুরগি। এই মুরগি দেখতে একেবারেই দেশি মুরগির মতো। সহজে ফারাক বোঝা অসম্ভব।” এই মরশুমে বাজারে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে দেশি মুরগির মাংস। চাহিদা অনুযায়ী বাজারে তেমন যোগানের ঘাটতি রয়েছে দেশি মুরগির। এই সুযোগকেও কাজে লাগিয়েছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। তাঁরা দেদার বিক্রি করছেন সোনালি মুরগি।
[আরও পড়ুন: হাই কোর্টে ধাক্কা, গ্রেপ্তারি ঠেকাতে এবার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ নিশীথ]
জেলা প্রাণিসম্পদ বিকাশ দপ্তরের এক আধিকারিক উৎপল কর্মকার জানান, দেশি মুরগি খোলা জায়গায় ঘুরে ঘুরে বড় হয়। তাই এই মুরগি বৃদ্ধি পেতে অনেক দিন সময় লাগে। দেশি মুরগির মাংস কম হয়। হাড় শক্ত হবে। কিন্তু সোনালি মুরগিতে সেইসব নেই। তিনি জানান, বর্তমানে মালদহের বিভিন্ন ফার্মে গোপনে চাষ হচ্ছে সোনালি মুরগির। দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে মুরগির ওজন ১ কেজি করা হচ্ছে। বয়লার মুরগির মতো এদের প্রোটিন জাতীয় খাবার খাওয়ানো হচ্ছে। এই মুরগির মাংস নরম, হাড় নরম। ভারতে এই মুরগির চাষ করার কোনও অনুমতি এখনও পর্যন্ত সরকারিভাবে দেওয়া হয়নি। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চুপিচুপি এই মুরগি চাষ করছেন। দেশি মুরগি বলে বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছেন। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন? প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, “চোরাপথ বন্ধ রাখার দায়িত্ব বিএসএফের। প্রতারণা রুখবে পুলিশ। এ নিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন থাকার বার্তা প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের তরফে দেওয়া হচ্ছে।”