সৌরভ মাজি, বর্ধমান: রাস্তায় চকোলেটের মতো দেখতে কিছু একটা কুড়িয়ে পেয়েছিল খুদে। সেটা বন্ধুকে খেতে দেওয়াই কাল। চকোলেট ভেবে বিষাক্ত সামগ্রী খেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষে।
বুধবার স্কুলে যাওয়ার সময় চকোলেটের মতো দেখতে কিছু একটা কুড়িয়ে পেয়েছিল এক পড়ুয়া। প্যাকেট খুলে সেটা কয়েকজনকে খেতে দিয়েছিল। কয়েকজন তাতে বাজে গন্ধ পাওয়ায় তারা সেটা ফেলে দেয়। কিন্তু তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র বিনয় মণ্ডল এক টুকরো খেয়ে ফেলে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার সকালে স্কুলে পৌঁছনোর পরই বমি শুরু হয় বিনয়ের। সেই সময় প্রধান শিক্ষক শুভাশিসরঞ্জন দত্ত ওই ছাত্রের মুখ জল দিয়ে ধুয়ে দেন। মনে করেছিলেন গ্যাস-অম্বল হয়েছে। ক্লাস শুরুর পরও বমি করতে থাকে। তখন তিনি ওই পড়ুয়ার বাড়িতে খবর পাঠান। কিন্তু তারা আসার আগে ঘন ঘন বমি শুরু হওয়ায় প্রধান শিক্ষক ও আর এক শিক্ষিকা বিনয়কে টোটো করে স্থানীয় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। সেখানকার চিকিৎসক পরীক্ষা করে বর্ধমানে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। পরে পরিবারের লোকজন গিয়ে ওই পড়ুয়াকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভরতি করেন। সেখানেই গভীর রাতে মৃত্যু হয় শিশুটির।
[আরও পড়ুন: অধীরের আবেদনে সাড়া লাল পার্টির, সাগরদিঘি উপনির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থীকে সমর্থন বামেদের]
প্রধান শিক্ষক বৃহস্পতিবার জানান, তাঁরা পরে জানতে পারেন স্কুলের এক ছাত্র রাস্তায় একটা ছোট প্যাকেট কুড়িয়ে পায়। সেটি স্কুলে নিয়ে আসে। তাতে চকলেটের মতো দেখতে কিছু ছিল। কয়েকজনকে তা খেতে বলে। কিন্তু তাতে একটা বাজে গন্ধ থাকায় কয়েকজন সেটা খায়নি। কিন্তু বিনয় কিছুটা খেয়ে ফেলে। প্রধান শিক্ষক বলেন, “আমরা পরে জানতে পেরেছি চালে যাতে পোকা না ধরে তার জন্য যে কীটনাশক ব্যবহার করা হয় প্যাকেটে সেটাই ছিল। কিন্তু পড়ুয়ারা তা জানত না।” যে ছাত্রটি কুড়িয়ে পেয়েছিল তার মা-দিদাও স্কুলে আসেন। কিন্তু ওই শিশুও জানত না যে, ওই সামগ্রীতে বিষ রয়েছে।
আকস্মিক ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় শোকের ছায়া গ্রামে। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত পুলিশে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। বর্ধমান সদর দক্ষিণের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক সুপ্রভাত চক্রবর্তী জানান, কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি। তবুও এই বিষয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে বিস্তারিত খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। খণ্ডঘোষের বিডিও সত্যজিৎ কুমার জানান, স্কুল পরিদর্শককে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। কীটনাশক কোথা থেকে এসেছে, কারও কাছে তা থেকে গিয়েছে কি না তা দেখার জন্য বলা হয়েছে।