অভিরূপ দাস: তাঁদের ভয়ে তটস্থ দুষ্কৃতীরা। অথচ ঘরে তাঁদের কথা শুনছে না সন্তানরা। সারাদিন মোবাইল নিয়ে ডুবে। নেশা কাটাতে ঘুরতে নিয়ে গিয়েছিলেন কেউ কেউ। লাভ হয়নি। সেখানেও মোবাইল গেমেই আশক্ত একরত্তিরা। বন্ধুকে মেসেজ করবে না সমুদ্র দেখবে? মা বাবার মাথায় হাত। বুধবার জলসম্পদ ভবনে পশ্চিমবঙ্গ মহিলা কমিশন আয়োজিত এক সেমিনারে নিজেদের অভাব অভিযোগ জানালেন মহিলা পুলিশরা। হাজির ছিলেন মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়। নারী শিশু সমাজ কল্যাণ দপ্তরের সচিব সঙ্ঘমিত্রা ঘোষ, মনোবিদ চিকিৎসক ডা. জয় রঞ্জন রাম।
৪১ জন মহিলা পুলিশ কর্মচারী হাজির ছিলেন এই অনুষ্ঠানে। সেখানে কারও অভিযোগ, ছেলে সারাদিন মোবাইলে কার্টুন দেখে। কার্টুনের চরিত্র অনুকরণ করে স্কুলের বন্ধু বান্ধবদের মারছে। পেশায় মহিলা একরত্তির মা জানিয়েছেন, ভূতের গল্প বলি। সাইকেল কিনে দিয়েছি। কিন্তু মোবাইলের নেশা ছাড়ছে না। কারও অভিযোগ, ‘‘ছেলের বয়স পাঁচ বছর। মোবাইল থেকে চোখ সরায় না। বলি যেটা খেতে ভালবাসো সেটাই কিনে আনবো। কিন্তু তা সত্ত্বেও মোবাইল ছাড়ছে না।’’ মনোবিদ জয়রঞ্জন রামের কথায়, দুষ্কৃতী ধরতে পারদর্শী হলেও সন্তানকে মোবাইল ছাড়াতে সঠিক পন্থা নিতে পারছেন না পুলিশ-অভিভাবকরা। মনোবিদের কথায়, মোবাইলের প্রতি এই নেশা ‘বিহেভিয়ারাল অ্যাডিকশন।’
[আরও পড়ুন: বাড়ির ১০০ মিটারের মধ্যে অভিষেকের সভা, হেনস্তার আশঙ্কায় আদালতে শুভেন্দু]
জয়রঞ্জন রাম জানিয়েছেন, এটা সত্যিই মোবাইলের মধ্যে সবকিছু পাওয়া যায়। যে কোনও গান শোনা যায়। কেনাকাটা করা যায়। সিনেমা দেখা যায়। গল্পের বই পড়া যায়। শিশুকে মোবাইল আসক্তি ছাড়াতে গেলে সবার আগে মোবাইলের পরিবর্ত খুঁজে দিতে হবে। বেড়াতে নিয়ে যাওয়া, উপহার দেওয়াটা কোনও সমাধান নয়। মনোবিদের মতে, পরিবারের মধ্যে গল্পের বই পড়া, গান শোনা, একসঙ্গে বসে ইনডোর গেম খেলা এই ধরণের অভ্যেস ছোট থেকে গড়ে তুলতে হবে। আচমকা মোবাইল কেড়ে নিতে গেলে হীতে বিপরীত হবে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত মহিলা পুলিশদের প্রতি চিকিৎসকের পরামর্শ, শিশুর সামনে বসে সারাদিন মোবাইল ঘাঁটবেন না। বরং বাড়িতে সবার জন্য এক নিয়ম চালু করুন। রবিবার দিন দুপুর বারোটা থেকে ছ’টা কেউ মোবাইল করবেন না। করলেই শাস্তি। শিশু যখন দেখবে মা-বাবাও মোবাইলে হাত দিচ্ছে না। সেও সড়ে আসবে।
প্রত্যন্ত গ্রামে গার্হস্থ্য হিংসা ঠেকাতে নতুন পদক্ষেপ নিল নারী শিশু ও সমাজকল্যাণ দপ্তর। বাংলার প্রতিটি জেলায় ওয়ান স্টপ সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে। কলকাতায় আরজিকর মেডিক্যাল কলেজেও তৈরি হয়েছে সেই সেন্টার। কি কাজ করবে এই সেন্টার? নারী শিশু সমাজ কল্যাণ দফতরের সচিব সঙ্ঘমিত্রা ঘোষ জানিয়েছেন, যাঁরা গার্হস্থ্য হিংসার শিকার তাঁদের সমস্ত রকম সাহায্য দেবে এই সেন্টার। থাকবে থাকার ব্যবস্থাও। চিকিৎসা সংক্রান্ত সুবিধা ছাড়াও, আইনি সাহায্য, কাউন্সেলিং দেওয়া হবে। আক্রান্ত মহিলাদের পুলিশে অভিযোগ করতেও সাহায্য করবে এই সেন্টার। ইতিমধ্যেই বাইশটা জেলায় খুলেছে এই সেন্টার। কোনও মহিলা গার্হস্থ্য হিংসার শিকার হলে তাঁকে নিকটবর্তী জেলা হাসপাতালে আসার আবেদন জানানো হয়েছে।