সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গত সপ্তাহে পাকিস্তানে আত্মঘাতী জঙ্গি হামলায় মৃত্যু হয়েছিল ৫ চিনা নাগরিকের। এবার সেই ঘটনার তদন্তে নামল বেজিং। ইতিমধ্যেই চিনের একটি তদন্তকারী দল পৌঁছে গিয়েছে ইসলামাবাদে। এর আগেও একাধিকবার পাকভূমে জেহাদিদের টার্গেট হয়েছেন চিনারা। প্রশ্ন উঠেছে সেদেশে কর্মরত চিনা নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে। গত বছর তাঁদের বাড়তি সুরক্ষা দেওয়া নিয়ে পদক্ষপে করেছিল পাক সরকার। কিন্তু তার পরেও বিপদের মুখে পড়তে হয়েছে চিনাদের। কেন বারবার আক্রান্ত হচ্ছেন তাঁরা? সেই উত্তরই এবার খুঁজবে চিন।
গত ২৬ মার্চ পাকিস্তানের উত্তর পশ্চিমে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে ঘটনাটি ঘটে। ৫ চিনা ইঞ্জিনিয়ার গাড়িতে চেপে ইসলামাবাদ থেকে খাইবার পাখতুনখোয়ার দাসুতে যাচ্ছিলেন। সেখানে চিনের সহযোগিতায় একটি বাঁধ তৈরির কাজ চলছে। সেই কাজের তদারকি করতেই দাসুতে যাচ্ছিলেন তাঁরা। পথেই এক ফিদায়েঁ জঙ্গি বিস্ফোরক বোঝাই গাড়ি নিয়ে ধাক্কা মারে তাঁদের কনভয়তে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ৫ চিনা নাগরিক ও ওই গাড়ির চালকের। তবে এখনও পর্যন্ত কোনও জঙ্গি সংগঠন এই হামলায় দায় স্বীকার করেছি। ঘটনার তদন্ত করছে পাক সরকার। এবার তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন চিনের তদন্তকারীরা। কেন পাকিস্তানের মাটিতে বারবার বিপদের সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাদের দেশের মানুষদের সেটাও খতিয়ে দেখবে বেজিং বলে খবর।
[আরও পড়ুন: মুখে শান্তির কথা বললেও ইজরায়েলকে হাজার হাজার বোমা, যুদ্ধজাহাজ পাঠাচ্ছে আমেরিকা]
এএনআই সূত্রে খবর, চিনের তদন্তকারী দলটির সঙ্গে দেখা করেছেন পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকভি। তাঁদের মধ্যে বৈঠকও হয়েছে। সেখানে কর্মরত চিনা নাগরিকদের সম্পূর্ণ সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিয়েও আলোচনা করেছেন তাঁরা। এখনও পর্যন্ত তদন্ত কতদূর এগিয়েছে সেনিয়ে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন নাকভি। তবে নানা মহলেই প্রশ্ন উঠছে কেন বারবার আক্রান্ত হচ্ছে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের দেশের মানুষ? এর মূলে কি চিনের বিতর্কিত ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্প?
২০১৫-তে স্বাক্ষর হওয়া মউয়ের ভিত্তিতে চিন-পাকিস্তানের মধ্যে অর্থনৈতিক করিডর বা সিপিইসি নির্মাণকার্য শুরু হয়েছে। চিনের প্রস্তাবিত ‘ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড’ নীতির উপর ভিত্তি করে, তাদের অর্থ সাহায্যেই এই করিডর তৈরি হচ্ছে। পাকিস্তানের গদর পোর্ট থেকে চিনের শিনজিয়াং প্রদেশ পর্যন্ত মোট ৩,০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পথটি তৈরি করা হয়েছে৷ এই করিডর নিয়ে প্রথম থেকেই বিক্ষোভ প্রদর্শন করে আসছেন বালোচিস্তান-সহ গিলগিট-বালতিস্তান ও পিওকে-র নাগরিকরা৷
অভিযোগ, পেশিশক্তির জোরে তাঁদের বাসভূমি কেড়ে নিয়ে এই করিডর তৈরি করেছে পাকিস্তান৷ যাতে পূর্ণ মদত দিয়েছে চিন৷ এই অভিযোগে দীর্ঘদিন ধরেই স্বাধীনতার দাবিতে পাক প্রশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছে বিদ্রোহী সংগঠন ‘বালোচ লিবারেশন আর্মি’। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই করিডর তৈরি নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন বালোচরা। পাকিস্তানের জঙ্গিদের রোষ গিয়ে পড়ছে পাকিস্তানে কর্মরত চিনাদের উপর। আর বারবার এই ধরনের ঘটনায় বেজিংয়ের ক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে ইসলামাবাদকেও।