অর্ণব আইচ: চিনা (China) জালিয়াতদের শতাধিক ভুয়ো সংস্থার হদিশ পেলেন গোয়েন্দারা। এসব বেআইনি লেনদেনের মাথায় ছিল মালদহ (Maldah) থেকে ধৃত চিনা ‘চর’ হান জুনেই। ভারত থেকে বিটকয়েনের সাহায্যে তারা চিনে অর্থ পাঠাত বলে জানা গিয়েছে। এছাড়াও হানকে জেরা করে চলছে হাওয়ালা চক্রের সন্ধান। মালদহ থেকে ধৃত হানকে নিজেদের হেফাজতে পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার তাকে কলকাতায় নিয়ে আসেন রাজ্যের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের (STF) আধিকারিকরা। গোটা চক্রের নেটওয়ার্ক জানতে তাকে জেরা শুরু করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, হান ও তার সঙ্গীরা যে জালিয়াতি চক্র চালাত, তা নিশ্চিত। চিনে বসে বিভিন্ন পদ্ধতিতে জালিয়াতি চালাতে শুরু করে হান ও তার সঙ্গীদের চক্র। ওই জালিয়াতির টাকা ভারতবিরোধী কোনও কার্যকলাপে কাজে লাগানো হত, এমন সম্ভাবনা গোয়েন্দারা উড়িয়ে দিচ্ছেন না। এই ক্ষেত্রে পাকিস্তানের চর সংস্থা আইএসআইয়ের (ISI) সঙ্গে হানের যোগাযোগের বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে যে, জালিয়াতির জন্য কয়েকটি চিনা অ্যাপ ব্যবহার করত জালিয়াতরা। ওই অ্যাপের সার্ভার রয়েছে চিনে। সেই অ্যাপগুলির সাহায্যেই ভুয়ো লগ্নিকারী সংস্থা বলে পরিচয় দেওয়া হত। মেল করে অথবা মোবাইলে মেসেজ পাঠিয়ে ভুয়ো সংস্থায় টাকা বিনিয়োগের টোপ দেওয়া হত। মোটা সুদ পাওয়ার লোভে অনেকেই টাকা রাখতেন সংস্থায়। আর সেই টাকাই হাতিয়ে নিত চিনা জালিয়াতরা।
[আরও পড়ুন: গণনায় কারচুপির অভিযোগ, নন্দীগ্রামে ভোটের ফলকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাই কোর্টে মমতা]
প্রাথমিক তদন্তে অন্তত ১১০টি ভুয়ো সংস্থার সন্ধান মিলেছে। এর আগে লখনউয়ের গোয়েন্দারা ওই ভুয়ো সংস্থার এক ভারতীয় কর্তাকেও গ্রেফতার করেন। পুলিশের ধারণা, আরও কিছু ভুয়ো সংস্থার নাম করে টাকা তোলা হত। সেই সংস্থাগুলির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। ভারত থেকে অন্তর্বাসের মধ্যে করে পাচার হওয়া ১৩০০ সিমকার্ডের সাহায্যে জালিয়াতি করে তারা। যেহেতু ভারতীয়দের জালিয়াতি করা হত, তাই প্রথমে ওই ভুয়ো সংস্থাগুলির সাহায্যে ভারতীয় মুদ্রা হাতিয়ে নিত তারা। এরপর বিটকয়েন বা ক্রিপটোকারেন্সিতে পরিবর্তন করে ওই টাকা পাঠানো হত চিনে। এভাবে বেশ কয়েক কোটি টাকা হাতিয়েছে চিনা জালিয়াতরা। হোটেল ব্যবসার আড়ালে চলত ওই জালিয়াতি।
[আরও পড়ুন: কলকাতায় বেপরোয়া গাড়ির নম্বরপ্লেটের ছবি তুলতে বসছে আরও CCTV ক্যামেরা]
বাংলাদেশ বা মায়ানমার হয়েও ওই টাকা লেনদেন করা হত, এমন সন্দেহ রয়েছে গোয়েন্দাদের। তাঁদের ধারণা, তার জন্য হাওয়ালা চক্রের সাহায্য নিত তারা। ভারত থেকে বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুর হয়ে ওই টাকা চিনে যেত কি না, তা জানার চেষ্টা হচ্ছে। সাইবার বিশেষজ্ঞ হান ও তার চিনা সঙ্গীরা ভারতে কোনও সাইবার হানার চেষ্টা করছিল কি না, তা জানতে চায় পুলিশ। এদিকে, হান ল্যাপটপের পাসওয়ার্ড নিয়েও বিভিন্ন সময় গোয়েন্দাদের বিভ্রান্ত করে চলেছে বলে অভিযোগ। চিনের মান্দারিন ভাষায় রয়েছে ওই পাসওয়ার্ড। যদিও সে ভুল পাসওয়ার্ড দিয়ে চলেছে বলে অভিযোগ গোয়েন্দাদের। এবার কলকাতায় সেই ল্যাপটপগুলি নিয়ে এসে সেগুলি সাইবার ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হচ্ছে। এথিক্যাল হ্যাকার বা সাইবার বিশেষজ্ঞদের সাহায্যে হান জুনেইয়ের ল্যাপটপ ও মোবাইল খোলার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।