পুজো এসে গেল। আজকাল সাজ পোশাকের সঙ্গে সঙ্গে সঠিক ডিওডোর্যান্ট বা পারফিউম না হলে পুজোর কেনাকাটা পূর্ণ হয় না। কোন কোন সুগন্ধে মনের কোন বাঁশি বাজবে সেটা জেনে নেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তারই ভালমন্দ খুঁজে দেখলেন সুমিত রায়।
জেনে অবাক হবেন যে, হিন্দু ধর্মের বেদের কালের আগে থেকে ভারতে এই সুগন্ধের ব্যবহার প্রচলিত ছিল। লখনউয়ের আতরের কথা কে না জানে। কিন্তু গত দুই শতকে এই সুগন্ধি ডিওডোর্যান্ট এবং পারফিউমের রূপে ভারতবর্ষের ঘরে ঘরে ঢুকে গিয়েছে। সুগন্ধ মূলত নিষ্কাশিত হয় ফল, ফুল, পাতা, গাছের ডাল, গাছের ছাল, শিকড়, গাছের গুঁড়ি এবং সিন্থেটিক কিছু দ্রব্য থেকে।
[ পুজোর বাজার তো করছেন, ফ্যাশনে ইন কোন শাড়ি জানেন? ]
কখন কোনটা?
খুব নামী-দামি সুগন্ধিতে তিনরকমের গন্ধ থাকে।
টপ নোট
যেটা প্রথম গায়ে সুগন্ধি মাখলে বেরোয়, এটা একটু তীব্র গন্ধ হয়। এটা কয়েক মিনিট থেকে এক ঘণ্টা অবধি থাকে।
হার্ট নোট
এটা একটু হাল্কা গন্ধ হয়, যেটা খুব চট করে সামনের মানুষ কাছাকাছি এলে পায়। এটা ৪-৬ ঘণ্টা অবধি থাকে।
বেস নোট
এটা প্রকাশ্যে আসে সুগন্ধি মাখার কয়েক ঘণ্টা পর, এবং এটাতে একটা আকর্ষণের প্রভাব থাকে। এটা অনেকক্ষণ গায়ে থাকে।
যদিও বেশিরভাগ যে ডিওডোর্যান্ট বা পারফিউম ব্যবহার হয় তাতে এতরকম ফারাক থাকে না, তাও এটা জেনে নেওয়া ভাল যে, কোন গন্ধ কখন মাখবেন।
সাধারণ নিয়ম হল, হাল্কা গন্ধ দিনের আর ভারী গন্ধ রাতের। দিনে তরতাজা লাগার প্রয়োজন আর রাত হল একটু মিষ্টি রহস্যের। আবার গরমকালে দিনে রোদ আর ঘাম, সেটার জন্য চাই একটু বেশি গাঢ় তেজের সুগন্ধ আর রাতটা হল মন মাতানোর সুগন্ধ। গরমকালে দিনের সুগন্ধের জন্য লেবু, লিলি, ভ্যানিলা, কমলালেবু, ডালিম, নাশপাতি, পিয়োনি, ম্যাগনোলিয়া, জলপদ্ম, গোলাপ এবং পিচ আর শীতকালের দিনের সুগন্ধের জন্য আছে আদা, পাচৌলি, ইউক্যালিপটাস এবং দারচিনি। গরমকালে রাতের সুগন্ধের জন্য আছে বেলফুল, জুঁই, কামরাঙা, তরমুজ, বেরি/জ্যাম জাতীয় ফল, গোলাপ আর শীতের রাতের সুগন্ধির জন্য ল্যাভেন্ডার, কস্তুরী, অম্বর, চন্দন আর র্যাসবেরি, গোলমরিচ, তামাক, চকোলেট, আপেল, চামড়া, চা, কফি এবং জিনও ব্যবহার হয় সুগন্ধিতে।
তবে হ্যাঁ এই নিয়ম ভাঙার মজাই আলাদা। যদি না সেটা আশপাশের লোককে অস্বস্তিতে ফেলে।
কোনটা কার
মহিলাদের জন্য
- অফিসে- জুঁই, গোলাপ,
- পিয়োনি, লিলি
- ক্যাজুয়াল- ভ্যানিলা, পিচ, আপেল
- রাতে- কস্তুরি, চন্দন, পাচৌলি, অ্যাম্বার, অপূর্বচম্পক, ল্যাভেন্ডার
পুরুষদের জন্য
- অফিসে- লেবু, কমলালেবু, বারগামোট, গ্রিন টি, তামাক
- ক্যাজুয়াল- আদা, দারচিনি, গোলমরিচ
- রাতে- অ্যাম্বার, কস্তুরী, লেদার, তুলসী, জিন
[ ভিড়ের মাঝে আলাদা হতে চান? পায়ে থাকুক অন্যরকম জুতো ]
গন্ধে প্রভাব
কঙ্গওয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, কোরিয়াতে গবেষণা করে দেখা গিয়েছে যে, বেশিরভাগ সুগন্ধি আমাদের মনের মধ্যে পরিবর্তন আনে কারণ সেগুলির আমাদের মস্তিষ্কের উপর একটা প্রভাব আছে। কয়েকটা সুগন্ধির প্রভাব–
- কমলালেবু- দুশ্চিন্তা কমায়, মন শান্ত করে
- গোলাপ, ল্যাভেন্ডার ও জুঁই- মাংসপেশিকে রিল্যাক্স করে ব্লাডপ্রেশার কমায়।
- ল্যাভেন্ডার- মানসিক চাপ কমায় এবং আনন্দ ও উত্তেজনা সৃষ্টি করে, ব্যথা লাগা কমায়।
- পিপারমেন্ট- শারীরিক যোগ ব্যায়ামের জন্য জোগান বাড়ায়, ফ্যাট কমায়, মুড ভাল করে, দিনের বেলা ঘুমানোর প্রবণতা কমায়, স্মৃতিশক্তি বাড়ায়।
- গোলাপ আর পাচৌলি- হার্ট রেট বেড়ে গেয়ে থাকলে সেটা কমায়
- জুঁই এবং ল্যাভেন্ডার- ইতিবাচক চিন্তাভাবনা বাড়ায়।
- অপূর্বচম্পক- স্মৃতিশক্তি কমায় (কোনও ট্রমা ঘটে থাকলে এটা খুব কার্যকর)।
- ইউক্যালিপটাস- ব্যথার অনুভব কমায়।
The post কোন গন্ধে রোমাঞ্চিত হয় মন, কোনটায় শরীরে শিহরণ… appeared first on Sangbad Pratidin.