সুলয়া সিংহ: দুর্গাপুজো মানে তো শুধুই সব ভুলে উৎসবে মেতে ওঠা নয়। দুর্গাপুজো মানে অচেনাকে আপন করে নেওয়া। ভালবাসার হাত বাড়িয়ে দেওয়া। দরিদ্রের ঘরে অন্নসংস্থান, সর্বহারাদের মুখে হাজার ওয়াটের হাসি ফোটানো। এই সব নিয়েই তো কলকাতার দুর্গাপুজো। মাতৃবন্দনার মন্ত্রোচ্চারণেই তো দূর হয় সব জ্বালা-যন্ত্রণা। তাই তো এ উৎসব একার নয়, সবার। আর সেই মানসিকতা নিয়েই অতিমারী আবহে দুর্গাপুজোকে সর্বান্তকরণে সফল করতে অভূতপূর্ব উদ্যোগ নিল চোরবাগান সর্বজনীন (Chorbagan Sarbojonin) দুর্গোৎসব সমিতি।
করোনা (Corona Virus) মহামারীর অভিশাপে বিধ্বস্ত জনজীবন। কেউ হারিয়েছেন চাকরি, তো কারও ব্যবসা লাটে উঠেছে। সংসার চালাতে হিমশিম অবস্থা সাধারণের। পুজো আয়োজনেও পড়েছিল তার প্রভাব। গত বছর আড়ম্বরে বিস্তর কাটছাঁট করেই হয়েছিল পুজো। তবে করোনা কালে শুধু দুর্গাপুজো আয়োজনের মধ্যেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখেননি উদ্যোক্তারা। নানা সমাজসেবামূলক কাজেও এগিয়ে এসেছেন। এমনিতেই পুজো (Durga Puja) কমিটিগুলি সারাবছর সমাজসেবার কাজে যুক্ত থাকে। তবে একের পর এক বিপর্যয়ে এবার আরও অ্যাকটিভ হতে হয়েছে কমিটির সদস্যদের। চোরবাগান সর্বজনীন যার মধ্যে অন্যতম। ঘূর্ণিঝড় যশ (Yaas) বা ইয়াসের সময় যেমন ঝড়ে বিধ্বস্ত এলাকাগুলিতে তারা পাঠিয়েছে ত্রাণ সামগ্রী, তেমনই আবার স্থানীয়দের জন্য বিনামূল্যে করোনা টিকাকরণের ব্যবস্থাও করেছে। তাদের সঙ্গে যাতে অন্যান্য ক্লাবও পুজোর আনন্দে মেতে উঠতে পারে, সেই উদ্যোগই নেওয়া হল। এবার ১০টি ক্লাবের প্রতিমা তৈরির দায়িত্ব নিল চোরবাগান সর্বজনীন।
[আরও পড়ুন: শর্তসাপেক্ষে ভক্তদের জন্য খুলছে কেরলের শবরীমালা মন্দির]
চোরবাগানের পুজো প্রাঙ্গনেই তৈরি হবে ১০টি প্রতিমা। যার তত্ত্বাবধানে থাকবেন খোদ শিল্পী বিমল সামন্ত। যিনি এবারও চোরবাগানের মণ্ডপসজ্জার দায়িত্ব নিয়েছেন। পুজো কমিটির তরফে জয়ন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলছিলেন, “মহামারীর জন্য এবার অনেক মৃৎশিল্পী এবং পুজোর সঙ্গে জড়িত লোকেরা কাজ পাচ্ছেন না। প্রত্যন্ত গ্রামের সেই সব মানুষদের কথা ভেবেই আমাদের এই উদ্যোগ। তাঁরাই শিল্পী বিমল সামন্তের তত্ত্বাবধানে ১০টি প্রতিমা গড়বেন। তাঁদের টিকাকরণের ব্যবস্থাও করবে চোরবাগানই। যে সব ক্লাব চাইবে, আমরা তাদের পাশে দাঁড়াই, তাদের জন্য প্রতিমা তৈরি হবে ক্লাব প্রাঙ্গনেই। আবেদনপত্রের মধ্যে থেকে ১০টি ক্লাবকে বেছে নেব, যাদের সত্যিই আর্থিক অনটন রয়েছে।”
শুধু কলকাতাই নয়, মফস্বলের ক্লাবও চোরবাগান সর্বজনীনের কাছে আবেদন জানাতে পারবে। বায়না ও প্রতিমা গড়ার জন্য ১০১ টাকা করে দিতে হবে প্রতিটি ক্লাবকে। কীভাবে আবেদন করতে হবে? তা ক্রমশ প্রকাশ্য।
মহামারীর অশান্ত সময়ে বাঙালির সেরা উৎসবকে নিরাপদে আয়োজনের জন্য ক্লাবের প্রতিটি সদস্য, পুরোহিত, শিল্পী, কারিগর, ইলেক্ট্রিশিয়ান, মাইক ম্যান, নিরাপত্তারক্ষী থেকে শুরু করে মুর্শিদাবাদের যে ঢাকি ভাইয়েরা পুজোর সময় আসবেন, তাঁদের সবার টিকাকরণের দায়িত্ব নিয়েছে ক্লাবই। একসঙ্গে উৎসবের রঙে রঙিন হয়ে উঠতে পারলেই তো সার্থক হবে দুর্গাপুজো।