সুপর্ণা মজুমদার: “ইটের পাঁজরে, লোহার খাঁচায়” কান পেতে কখনও শুনেছেন এই “শহরের ইতিকথা”। শুনতে জানলে বুঝতে পারবেন সেই “দারুণ মর্মব্যথা”। করোনা (CoronaVirus) কালে শীতের কলকাতায় ভিড় এবার তেমন নেই। ভিক্টোরিয়া কিংবা ময়দানের চেনা মাথার জোয়ার নেই। নেই রোজগার। তবুও সেজেগুজে দাঁড়াতেই হয়। অভাবের তাড়নায় পেটের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠলেও মুখের কোনে হাসিটাকে জোর করে লাগিয়ে রাখতে হয়। আর পাঁচজনের তো বড়দিনের মরশুম (Christmas 2020)! হাল ছাড়লে চলবে না। সুদিন ফেরার অপেক্ষা করতেই হবে কৃষ্ণ বৈরাগীদের।
কে কৃষ্ণ বৈরাগী? আসল নামটা প্রশ্ন করেই জানা গেল। অথচ এই শহরেই দুই দশক ধরে নানা চরিত্র হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বাংলার এই বহুরূপী। কখনও রামকৃষ্ণ, কখনও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কখনও আবার চার্লি চাপলিন। বছরের এই সময়টা লাল পোশাক গায়ে চড়িয়ে হয়ে যান সান্তা ক্লজ (Santa Claus)। রক্তমাংসের সান্তাকে দেখেই ছুট্টে আসে কচিকাঁচার দল। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মুগ্ধ হয়ে যায় লাল পোশাক আর সাদা দাড়ির মায়া মাখানো মুখের হাসিতে। সান্তাও আপন করে নেন প্রত্যেককে। হাতে তুলে দেন চকোলেট।
[আরও পড়ুন: করোনার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় রোগীর গায়ে কালশিটে দাগ! অবাক চিকিৎসক-পরিজন]
কিন্তু মুখের এই নির্মল হাসির আড়ালেই লুকিয়ে আছে অভাবের যন্ত্রণা। করোনা (COVID-19) পরিস্থিতিতে প্রায় ন’মাস ধরে তেমন কোনও কাজ নেই। যেটুকু সঞ্চয় ছিল তা তো কবেই শেষ হয়ে গিয়েছে। অন্যান্যবার বছরশেষের এই সময়ে কাজের চোটে দম ফেলা দায় হয়। সান্তা সেজে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয় কৃষ্ণ বৈরাগীকে। ছোটদের বড় বড় আবদার রক্ষা করতে হয়। কিন্তু এবার তা নেই। বিয়ে বাড়ির ডাক নেই, খেলার মাঠের ভিড় নেই, নেই জন্মদিনের আবদার। গতবারও বাগুইআটিতে ১০ দিনের মেলা হয়েছিল। ছিল দমদমের মেলা। কিন্তু এবারে কিছু নেই। ২২, ২৩ তারিখে একটি কোম্পানির বুকিং আছে। একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানের মৌখিক কথাও হয়েছে। কিন্তু আর কিছুই নেই। আছে শুধু দুই দশকেরও বেশি সময়ের সংগ্রাম, আর আগামীর আশা। মানুষ যদি একটু সচেতন হন নতুন বছরেই সুদিন ফিরবে, আবার স্বাভাবিক হবে জীবন।
ছবি ও ভিডিও: পিন্টু প্রধান