শেখর চন্দ্র, আসানসোল: ১৪ দিনের হেফাজত চাইলেও নিরাশই হতে হল সিআইডিকে। 'গ্যাংস্টার' সুবোধ সিংকে হেফাজতে পেলেন না তদন্তকারীরা। ন্যায় সংহিতা লাগুর প্রতিবাদে সোমবার আসানসোল আদালতে আইনজীবীদের একাংশের কর্মবিরতি চলায় মামলার শুনানি হল না। ছিলেন না সরকারি আইনজীবীও। আপাতত জেল হেফাজতেই থাকবেন সুবোধ সিং। আগামী ৩ জুলাই আদালতের কাজকর্ম স্বাভাবিক হলে ফের আদালতে হাজির করতে হবে সুবোধকে। সোমবার আদালতে ঢোকা ও বেরনোর সময় সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নে সুবোধ সিং বলেন, অর্জুন সিংকে তিনি চেনেন না। বাংলার অপরাধের সঙ্গে তাঁর কোনও যোগ নেই।
‘গ্যাংস্টার’, ‘জুয়েল থিফ’, ‘তোলাবাজ’ সুবোধ সিংকে বিহারের বেউর জেল থেকে ট্রানজিট রিমান্ডে রবিবার আনা হয় আসানসোলে। একদিনের জেল হেফাজতের পর সোমবার আদালতে তোলা হয় 'গ্যাংস্টার' সুবোধ সিংকে। সিআইডি ১৪ দিন নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার ভাবনাচিন্তা করে। ন্যায় সংহিতা লাগুর প্রতিবাদে সোমবার আসানসোল আদালতে আইনজীবীদের কর্মবিরতি চলায় মামলার শুনানি হয়নি। তাই তাকে হেফাজতে পেল না সিআইডি। আপাতত জেলেই থাকবেন সুবোধ।
[আরও পড়ুন: ‘স্বদেশি হল বিচারব্যবস্থা’, ভারতীয় ন্যায় সংহিতা কার্যকর করে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা শাহর]
'গোল্ডেন ডাকু' সুবোধ সিংকে তোলার সময় কড়া নিরাপত্তার চাদরে ঘিরে ফেলা হয় গোটা আদালত চত্বর। সুবোধ গ্যাংয়ের নামে আসানসোলে একাধিক হাই প্রোফাইল মামলা রয়েছে। ২০১৭ সালে আসানসোলের হীরাপুর ও দুর্গাপুরে স্বর্ণঋণ প্রদানকারী সংস্থায় ডাকাতি এবং ২০১৯ সালে আসানসোলে বিখ্যাত সোনার দোকানের শোরুমে ডাকাতি, ২০২২ সালে রানিগঞ্জের স্বর্ণ ব্যবসায়ী সুন্দর ভালোটিয়ার বাড়িতে ডাকাতি, এলোপাথাড়ি গুলি ও ব্যবসায়ীকে অপহরণের চেষ্টায় নাম জড়ায় সুবোধের। চলতি বছরের গত ৯ জুন, আসানসোলের রানিগঞ্জে বিখ্যাত সোনার দোকানে ডাকাতির ঘটনায় 'লোকাল সোর্স'- সহ মোট ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সূত্রের খবর, ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে সুবোধের যোগসাজশ পাওয়া গিয়েছে।
এছাড়াও রাজ্যজুড়ে সুবোধের নামে আরও অনেক মামলা রয়েছে। অভিযোগ, বেউর জেলের সেক্টর-৩’এর ওয়ার্ড নম্বর ২২’এর ঘাঁটিতে বসে বারাকপুর শিল্পাঞ্চলের ব্যবসায়ীদের কাছে ‘তোলা’ চেয়ে ফোন করেছেন সুবোধ সিং। বিহারের নম্বরের সিমকার্ড ব্যবহার করলেও, হুমকি ফোনের ক্ষেত্রে সুবোধ সিং ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রোটোকল (ভিওআইপি) পদ্ধতিই ব্যবহার করছেন। কয়েকদিন আগে সেরকমই এক ভিওআইপি কলের (সাইপ্রাসের সার্ভার ব্যবহার করে) মাধ্যমে বারাকপুরের এক প্রতিষ্ঠিত বিরিয়ানি ব্যবসায়ীর পুত্র তথা তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যকে হুমকি দিয়ে ২০ লক্ষ টাকা তোলা চাওয়ার অভিযোগও উঠেছে 'গ্যাংস্টার' সুবোধের বিরুদ্ধে। এছাড়াও বেলঘরিয়া শুটআউট, ডোমজুড়ে ডাকাতি, টিটাগড়ের বিজেপি নেতা মণীশ শুক্লা খুনের মামলায় যোগ রয়েছে সুবোধের। যদিও রবিবার আদালত থেকে বেরিয়ে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেন সুবোধ। দাবি, "৬ বছর ধরে জেলে আছি। আমাকে মিথ্যা ফাঁসাচ্ছে। বাংলার পুলিশ অপদার্থ। নিজেরা অপরাধমূলক কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। তাই আমার উপর সব চাপিয়ে দিচ্ছে।"