'দ্য একেন: বেনারসে বিভীষিকা' মুক্তির আগে ছবি এবং জীবন নিয়ে অন্তরঙ্গ আড্ডায় অনির্বাণ চক্রবর্তী। শুনলেন বিদিশা চট্টোপাধ্যায়।
একেনের আটটা সিরিজ এবং ‘দ্য একেন: বেনারসে বিভীষিকা’ নিয়ে তিনটে ছবির পর দর্শক না হয় নতুন গল্পের খোঁজে একেন দেখে, আপনার কাছে কীসের খোঁজ থাকে?
- হ্যাঁ, এটা ঠিক যে একটা ফ্র্যাঞ্চাইজি ছবিতে এতবার অভিনয় করার পর চরিত্রটাকে জ্যান্ত রাখা একটা চ্যালেঞ্জ। মোনোটোনাস লাগলে সেটা পর্দায় বোঝা যাবে। আমার এগারোবার করার পরেও সেই ক্লান্তি আসেনি। একদম প্রথমে চরিত্রটাকে ভালো চিনতাম না। যেমন একেনকে সহজ-সরল, ছেলেমানুষ মনে হত। প্রতিবার অভিনয় করার সময় তাঁর সম্পর্কে নতুন কিছু আবিষ্কার করেছি। অভিনয় করতে করতে বুঝলাম লোকটা সেয়ানা। এবং নিজের সারল্য ব্যবহার করে, বাইরের লোকের সামনে একটা বর্ম হিসেবে। কাজ করতে গিয়ে চেষ্টা থাকে একেন পুরোপুরি পাল্টেও যাবে না, আবার নতুন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যও যোগ হবে।
প্রথম একেনের সেই হাসি, গদগদ ভাব সে সব ছেঁটে ফেলে এখন একেন অনেক সংযত, মাপ মতো!
- হ্যাঁ, মানে ধীরে ধীরে সেই পরিবর্তনটা এনেছি।
একেন দেখলেই মনে হয় ‘লালমোহনবাবু’কে নিয়ে গোয়েন্দা সিরিজ করলে এইরকম হত। একদিকে দর্শকের চাহিদা, অন্যদিকে অভিনেতা অনির্বাণের অ্যাসপিরেশন। আপনি কি লালমোহনের আদলে একেনের চরিত্রায়ণ থেকে সরে আসতে চেয়েছেন?
- ঠিকই, একেবারেই তাই। লালমোহনবাবু যদি গোয়েন্দা হত সেটাই একেন- সিজন ওয়ানের শুরুতে সেই ব্রিফটাই ছিল। সুজন দাশগুপ্তের লেখা একেনের সঙ্গে পর্দায় একেনের মিল কম। পর্দার একেন জটায়ুর কথা ভেবেই করা হয়েছিল। এখন সাজপোশাক, বডি ল্যাঙ্গোয়েজ বদলেছে। জিনস পরে, জ্যাকেট পরে, গলায় মাফলার নেই, মাংকি ক্যাপ পরে না। শরীরী ভাষাও বদলেছি। এখন একেন অ্যাকশন দৃশ্যও করে, বেশ শার্প। তা ছাড়া আমি তো জটায়ুর চরিত্রেও অভিনয় করি। আমার কাছে দুটো মানুষ আলাদা। লালমোহন একজন লেখক, খুবই ভালোমানুষ, ভিতরে-বাইরে এক। নিজের ভিতর কিছু লুকিয়ে রাখতে পারে না। একেন মানুষটা ভালো হলেও, অত সহজ-সরল নয়, তার মধ্যে লেয়ার আছে, সেয়ানাগিরি আছে, নিজেকে লুকোতে জানে। তাই অভিনয়টা আলাদা হয়ে যায়।
ছবি ফাইল
২০১৮ থেকে ২০২৫-এর মধ্যে এতটা সাফল্য। ইন্ডাস্ট্রিতে অন্যদের ঈর্ষা টের পান?
- না, আমি কোনওদিন ঈর্ষা টের পাইনি। আমার কো-অ্যাক্টর বা ইন্ডাস্ট্রির যারা পরিচিত তাদের থেকে ভালো ব্যবহারই পেয়েছি। আর আমার মধ্যেও ঈর্ষা ব্যাপারটা নেই। হয়তো কারও ভালো কাজ দেখে মনে হল আমিও যদি চরিত্রটা একবার করতে পারতাম! এই পর্যন্তই।
তেমন কোনও চরিত্র আছে যা করতে ইচ্ছে করে?
-একেন বাদ দিলে আমি এখনও পর্যন্ত যে ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেছি সেখানে কিছু থ্রিলারের পার্ট, গ্রে চরিত্র, কমিক বা ভিলেন এইটুকুই। কিন্তু খুব ইমোশনাল, লেয়ার্ড চরিত্র করতে ইচ্ছে করে।
আপনি কি রোমান্টিক চরিত্রের কথা বলছেন?
- (হাসি) হ্যাঁ, আমি অনেকবার অনেককে বলেছি যে মধ্যবয়সি মানুষের প্রেমের গল্প নিয়ে কেন ছবি হয় না! এমন একটা চরিত্র যে হোপলেসলি ইন লাভ– তেমন চরিত্র কীভাবে সামলাব, সেটা আমি নিজেও জানতে চাই! (হাসি)
আপনি কিন্তু একেনের মতোই রহস্যময়। এই যে একটা বর্ম তৈরি করে রাখেন সেটা কি ইন্ডাস্ট্রিতে আসার পর?
- খুব আনঅ্যাপ্রোচেবল লাগে কি?
না, সেটা না তবে খুব বেশি এগনো যায় না!
- আসলে আমি খুবই ইন্ট্রোভার্ট। অনেকে সেটাকে অহংকার বলেও মনে করেন। আগ বাড়িয়ে অপরিচিত লোকের সঙ্গে কথা বলতে পারি না। কারও পার্সোনাল স্পেসে ঢুকে পড়ছি কি না সেটা নিয়ে খুব অ্যালার্ট থাকি! তবে যারা আমার কাছের, যাদের কাছে আমার কোনও গার্ড নেই, তারা আমাকে চেনে।
তারা কি সবাই ইন্ডাস্ট্রির বাইরের?
- হ্যাঁ, সকলেই বাইরের। তবে ইন্ডাস্ট্রির কারও সঙ্গে আমার কোনও বিবাদ নেই, সকলের সঙ্গেই ভালো সম্পর্ক।
যার কারও সঙ্গে ঝগড়া নেই, তাকে তো সন্দেহ হয়!
- হাহাহাহা... না তবে কাউকে অপছন্দ হলে সেটা কটু কথা না বলেও বোঝানো যায়। সেটা আমি করিও।
আপনার পুরনো সাক্ষাৎকারে বলেছেন– ম্যানেজার রাখতে চান না, মনখারাপ হলে আগে নিজে সামলাতে চান, কেউ আপনাকে খুব গভীরে ডিস্টার্ব করতে পারে না, একা থাকা পছন্দ করেন। শুনে মনে হয় মানুষের সংস্পর্শ ছেঁটে ফেলেছেন ইচ্ছে করে!
- একেবারেই তাই, মানুষের ভিড় আমি এড়িয়ে চলি। এটা করা আমার কাছে খুব জরুরি। আমি যে আমিই রয়েছি এই কারণেই। এবং খুব সচেতনভাবে অনেকদিন ধরে এই জায়গাটা তৈরি করেছি।
পূর্বে পাওয়া কোনও আঘাতের কারণেই কি বাড়তি সাবধানতা?
- আমি অনেক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গিয়েছি- কিছু নিজের, কিছু আমি ঘটতে দেখেছি। যখন আমি টিনএজার ছিলাম বা কলেজে তখনকার মানুষটা এখন আর নেই। সময়ের সঙ্গে যে মানুষে আমি পরিণত হয়েছি সেটা জরুরি ছিল, না হলে এখন যে পরিবেশ, সময়ের মধ্যে আছি আগের সফ্ট, ভালনারেবল অনির্বাণ সামলাতে পারত না।
বেনারসে শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা কেমন? এখানকার ভিড়ে কিন্তু একা হওয়া যায়! আবার ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’-এর নস্টালজিয়াও আছে।
- বেনারস আমার খুবই পছন্দের শহর। শীতকালে বহুবার বেনারস এসেছি। এখানে এলে সবাই নিজের মতো কিছু খুঁজে পায়। আমি ধার্মিক নই, কিন্তু পৃথিবীর অন্যতম পুরনো শহরে এসে এত মানুষের বসবাস, কালচারের সংমিশ্রণ অবজার্ভ করে শান্তি পাই। আর হ্যাঁ, এই একেনে ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’-এর অনুষঙ্গও থাকবে। রাজস্থানে যখন শুট করেছি তখনও সোনার কেল্লার প্রতিও ট্রিবিউট ছিল।
এবারে তো বিশাল স্টারকাস্ট?
- ইশা, গৌরব, বিশ্বনাথের সঙ্গে আগে কাজ করেছি। অপুদার (শাশ্বত) সঙ্গে এই প্রথম কাজ করলাম। সেটা একটা অভিজ্ঞতা। আর এবারের একেনে, গল্প বলার প্যাটার্নে একটা পরিবর্তন আছে। গল্পের শুরুতেই দর্শক বুঝে যাবে ভিলেন কে কিন্তু তার সঙ্গে দেখা যাবে যে মাল্টিপল ক্রাইম আছে এবং সেগুলো কীভাবে মূল প্লটের সঙ্গে থাকবে সেটাই দেখার।
একেনের কাছের মানুষ ‘খুকু’কে দেখা যায় না। আপনি যদি ভবিষ্যতে কারও প্রেমে পড়েন, সেটাও কি আড়াল করবেন?
- ব্যক্তিগত জীবন পাবলিকের জন্য নয়। আর বলতেই হবে এমন জোর আমাকে কেউ করতে পারে না। বলার মতন কিছু নেইও। কাজ করি বাড়ি ফিরে আসি। এবং ভবিষ্যতে কোনও সম্পর্কে জড়াব কি না তাই নিয়ে আমার নিজের যথেষ্ট সন্দেহ আছে। আমি খুব সতর্কভাবেই কোনও রকম প্রেমের সম্পর্ক থেকে এড়িয়ে রয়েছি। নিজেকে নিয়ে দিব্যি থাকি। মনে আছে কোভিডের সময় ৮২ দিন একা ছিলাম। এমনকী, বাড়ির বারান্দায় পর্যন্ত বেরোইনি। একা থাকতে অসুবিধা হয় না।