বাঙালির পয়লা বৈশাখ মানেই নস্ট্যালজিয়া। পোশাক থেকে খাবার, আড্ডা থেকে হালখাতা, সবেতেই থাকে বাঙালিয়ানার ছাপ। তবে আজকের বাঙালি কি ততটাই উন্মুখ থাকে নববর্ষ নিয়ে? অতীত স্মৃতিচারণা এবং এবারের নববর্ষের পরিকল্পনা নিয়ে ‘সংবাদ প্রতিদিন' ডিজিটালে লিখলেন প্রশ্মিতা পাল।

পয়লা বৈশাখ বলতেই আমার ছোটবেলার স্মৃতি ভেসে ওঠে। বাড়িতে পোলাও আর মাংস হত। মা রান্না করতেন। নতুন জামাও কেনা হত। এখন যেমন কাজের সূত্রে সারা বছরই কেনাকাটা চলতে থাকে। আর মায়ের হাতের রান্না তো বাড়িতে গেলেই খাই। এবারের পয়লা বৈশাখ আমার কাজের মধ্যে দিয়েই কাটবে। কারণ বছরভরই আমাদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকে। বছরের পয়লা দিনও তার ব্যতিক্রম নয়। আমাদের উৎসব-অনুষ্ঠানগুলো আসলে এভাবেই কেটে যায়। এবারও তাই। গানে গানে নববর্ষ যাপন করব আমরা। ছোটবেলাতেও আমাদের পাড়ায় রবীন্দ্রজয়ন্তী উদযাপন হত খুব বড় করে। আর সেই অনুষ্ঠানের রিহার্সাল শুরু হয়ে যেত পয়লা বৈশাখ থেকেই। সেসময়ে আমাদের কাছে দুয়ারে নববর্ষ কড়া নাড়া মানেই, পঁচিশে বৈশাখের অনুষ্ঠানের জন্য প্রস্তুতির তোড়জোর শুরু। ব্যাপারটা খানিক এরকমই ছিল। কোনটা গান গাইব, কোন নাটক হবে... এসব আলোচনা চলত।
ইংরেজি নতুন বছর আর নববর্ষের তুলনা টানার একটা প্রবণতা রয়েছে। এই দুটোর তুলনা টানতে আমি নারাজ। নিউ ইয়ার যেমন সারা বিশ্বজুড়ে উদযাপন করা হয়। বন্ধুবান্ধব, স্বজনদের নিয়ে পার্টিতে মেতে ওঠেন মানুষ। হইহুল্লোড় করেন। সেই উদযাপনের পরিসর নিঃসন্দেহে অনেকটা বেশি। অনেক বেশি মানুষকে ছুঁয়ে যায়। তবে আমাদের বাঙালিদের পয়লা বৈশাখ যাপন একটু অন্যরকম। একটু কবিতা, গান, নাচ, সাহিত্য চর্চা... নিয়ে থাকি আমরা। এই দিনটিতে আমাদের বাঙালি সংস্কৃতি উদযাপনে মেতে উঠি।
নববর্ষে খাওয়াদাওয়ার সঙ্গে নতুন পোশাক মাস্ট! প্রথম যখন আয় করা শুরু করি, সেবছর নববর্ষে শুধু মা-বাবা নয়, মামা, মাসি-পিসি, যাঁরা আমাকে খুব স্নেহে-যত্নে আমাকে বড় করেছেন, তাঁদের সকলকে উপহার দিয়েছিলাম। তার পর থেকে পুজোতে সকলের জন্য জামাকাপড় কেনা হলেও পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে সকলের জন্য কেনাকাটি করা হয় না। তবে শপিং করতে ভীষণ ভালোবাসি। শুধু জামাকাপড় নয়, বাড়ির কোনও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিংবা ঘর সাজানোর জিনিসও সারাবছর কিনি। বিশেষ করে গড়িয়াহাটের সেরামিকসের কালেকশন দেখলে মনে হয়, সবগুলি কিনে ফেলি। আসলে আমার বড় হওয়া গড়িয়াহাট চত্বরে। বালিগঞ্জ ফাঁড়িতে আমার বাড়ি। চৈত্র সেলের বাজারে উপচে পড়া ভিড়। সে কী উন্মাদনা সকলের, দেখতাম। তবে আমার যেহেতু বাড়ি কাছাকাছি ছিল, সেক্ষেত্রে খানিক মজা করে বলতে গেল, হাতের নাগালে থাকা জিনিসের মূল্য কম। শুধু তাই নয়, কাউকে ছোট না করেই বলতে চাই, আসলে ওই গরমের মধ্যে চৈত্র সেলের বাজারে যাওয়ার বিষয়টা ছোট থেকেই এড়িয়ে চলি। তাছাড়া সারাবছরই তো গড়িয়াহাটে সাধ্যের মধ্যে সবরকম জিনিস পাওয়া যায়। তাই চৈত্র সেল আলাদা করে কখনও আমায় টানেনি।