সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পহেলগাঁও হামলার (Pahalgam Attack) পর যুদ্ধের মেঘ ঘনিয়েছে ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে। এই নারকীয় ঘটনায় দিল্লির অভিযোগের তির পড়শি দেশের দিকে। ইতিমধ্যেই ইসলামাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করেছে মোদি সরকার। পালটা দিয়েছে পাক সরকারও। উত্তপ্ত সীমান্ত। মাঝে মধ্যেই গুলির লড়াইয়ে কেঁপে উঠছে উপত্যকা। এই পরিস্থিতিতে ফের একবার সমস্ত অভিযোগ নস্যাৎ করে পহেলগাঁও কাণ্ডে আন্তর্জাতিক তদন্ত চাইল পাকিস্তান। ভারতের উপর পালটা চাপ বাড়াতেই কি এহেন পদক্ষেপ চায় ইসলামাদ? আমেরিকা-চিনের মতো শক্তিগুলোকেও জড়াতে চায় তারা? উঠছে এমনই প্রশ্ন।
গতকাল শুক্রবার নিউ ইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী খোয়াজা মহম্মদ আসিফ বলেন, "পহেলগাঁওয়ের ঘটনা নিয়ে যে কোনও আন্তর্জাতিক তদন্তকে স্বাগত জানাবে পাকিস্তান। আমরা চাই এই ঘটনার আন্তর্জাতিক তদন্তই হোক। আমর সব রকমভাবে তদন্তে সাহায্য করবে। ভারত সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে এবং নিজেদের গোয়েন্দা ব্যর্থতা ঢাকতে পাকিস্তানকে দোষারোপ করছে। ওরা কোনও প্রমাণ, কোনও তদন্ত ছাড়াই আমাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করেছে। আমরা চাই না যুদ্ধ বাঁধুক। এই সংঘাত আরও তীব্র হোক। কারণ যুদ্ধের আগুন জ্বলে উঠলে তা আঞ্চলিকভাবে ধ্বংস ডেকে আনবে।"
পহেলগাঁওয়ে ২৫ পর্যটক ও এক স্থানীয়ের রক্ত লেগে রয়েছে যে জঙ্গিদের হাতে, তারা পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই-তইবার ছায়া সংগঠন দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট বা টিআরএফের সদস্য। যারা হামলার কিছুক্ষণের মধ্যেই দায় স্বীকার করে। এই জেহাদিদের ছবি ও পরিচয় প্রকাশ্যে এনেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ। সেখান থেকেই জানা গিয়েছে, হামলাকারীর মধ্যে দু'জন ভারতীয় ও বাকি সকলেই পাকিস্তানি। এনিয়ে প্রশ্ন করা হলে আসিফ দাবি করেন, "পাকিস্তানে লস্কর এখন নিষ্ক্রিয়। পাক অধিকৃত অঞ্চল থেকে কোনও হামলার পরিকল্পনা বা পরিচালনার শক্তি তাদের আর নেই। পাকিস্তানে ওদের কোনও সংগঠনই নেই। লস্করের সঙ্গে একসময়ে যারা যুক্ত ছিল, তাদের যে ক’জন এখনও পাকিস্তানে আছেন, তারা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণাধীন। কেউ কেউ গৃহবন্দি। কেউ আছে জেলে। ওরা একেবারেই সক্রিয় নন।"
পহেলগাঁও হামলার (Pahalgam Attack) সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রথম থেকেই অস্বীকার করেছে পাকিস্তান। কিন্তু ঘটনার প্রতিবাদে সিন্ধু জলচুক্তি বাতিল করছে ভারত। এছাড়াও অবিলম্বে বন্ধ করা হবে ওয়াঘা-আটারি সীমান্ত। পাকিস্তানিদের ভিসা বাতিল করা হবে এবং বর্তমানে যেসব পাকিস্তানিরা ভারতে রয়েছেন তাঁদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভারত ছাড়তে হবে। এছাড়াও ভারত এবং পাকিস্তান-দুই দেশের হাই কমিশন থেকেই সরিয়ে নেওয়া হবে সামরিক পরামর্শদাতাদের। যার পালটা হিসাবে ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ, ভারতীয়দের জন্য় পাক ভিসা বাতিল, হাইকমিশনের কর্মী প্রত্যাহারের মতো সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছে ইসলামাদ। তবে ভারত থেকে পাকিস্তানে যাওয়া শিখ পুণ্যার্থীদের ছাড় দেওয়া হবে। কিন্তু শিমলা চুক্তি-সহ অন্যান্য বাণিজ্যিক চুক্তিও বাতিল করে দিয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই শিমলা চুক্তির অন্যতম অংশই ছিল ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যা সমস্যা হবে তা নিজেরাই সমাধান করবে। কোনও তৃতীয় ব্যক্তি হস্তক্ষেপ করবে না বা হস্তক্ষেপ চাওয়া হবে না। ভারতের বিদেশনীতিও তাই। আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারত সব সময় স্পষ্ট করে দিয়েছে চিন-পাকিস্তানের মতো পড়শি দেশের সঙ্গে যা সমস্যা তা দিল্লি নিজেই সমাধান করবে। নিজেদের বিষয় কোনও তৃতীয়পক্ষের নাক গলানো মেনে নেওয়া হবে না। কিন্তু শিমলা চুক্তি বাতিল করে 'যুদ্ধের ইঙ্গিত' দিয়ে দিয়েছে পাকিস্তান। এখন আন্তর্জাতিক তদন্ত চেয়ে বিভিন্ন দেশকে এই বিষয়ে জড়াতে চাইছে। বিশেষ করে তাদের উদ্দেশ্য কোনওভাবে চিনকে এর মধ্যে টানা। কারণ ভারতের সঙ্গে বেজিংয়ের সম্পর্ক খুব একটা ভালো নয়। আগামী দিনে যুদ্ধ লাগলে চিনকে পাশে পেতে পারে পাকিস্তান। পাশাপাশি মুসলিম বিশ্বকেও কাছে টানতে পারবে তারা।
