সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সংসদের আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনেও নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল পেশ করা নিয়ে সংশয় তৈরি হল। যৌথ সংসদীয় কমিটি (জেপিসি) নাগরিকত্ব বিল চূড়ান্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে। মঙ্গলবার দীর্ঘ তিন ঘণ্টার বৈঠক সত্ত্বেও কমিটি ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। জেপিসি-র পরবর্তী বৈঠকের দিনও স্থির করা যায়নি। ১৫ ডিসেম্বর থেকে শীতকালীন অধিবেশন শুরু হবে। চলবে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। ফলে বিরোধী সদস্যরা মনে করছেন, নাগরিকত্ব বিল নিয়ে শাসক দল বিজেপি আপাতত পিছু হটল।
[কড়া নিরাপত্তায় মধ্যপ্রদেশে শুরু ভোটগ্রহণ, সাতসকালে মন্দিরে কং-বিজেপি]
সংশ্লিষ্ট জেপিসি-তে লোকসভার ২০ জন এবং রাজ্যসভার দশ জন সাংসদ সদস্য হিসাবে রয়েছেন। গত মঙ্গলবার বৈঠক হলেও সেভাবে কোনও আলোচনা হয়নি। জমা পড়েনি কোনও সংশোধনীও। ওই বৈঠকে স্থির হয়েছিল, ২২ তারিখের মধ্যে সংশোধনী এবং বক্তব্য জমা পড়বে। এবং সেগুলির ভিত্তিতে আলোচনা করে ২৭ তারিখের বৈঠকে নাগরিকত্ব বিল চূড়ান্ত করা হবে। সংসদের আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনে বিলটি পাস করাতে বিজেপি উঠেপড়ে লেগেছিল।
কিন্তু নাগরিকত্ব বিল নিয়ে বিজেপি এখন শাঁখের করাতের মুখে। শুধু বিরোধী দল নয়, কয়েকটি শরিক দলও বিলে তাদের আপত্তি জানিয়েছে। অসমে এনডিএ-র শরিক দল অসম গণ পরিষদ (অগপ) জোট ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়ে রেখেছে। অসমে আন্দোলন চলছে বিলটির বিরুদ্ধে। সীমান্তবর্তী কয়েকটি রাজ্যেও বিল নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। তার উপর একই সঙ্গে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে অসমের বিজেপি সরকারের মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মাকে স্বাধিকারভঙ্গের নোটিস পাঠাচ্ছে জেপিসি।
কী আছে নাগরিকত্ব বিলে? কেন্দ্র প্রস্তাবিত বিলে বলেছে, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে যে সমস্ত সংখ্যালঘু মানুষ অত্যাচারিত হয়ে ভারতে আসবেন, তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। কিন্তু এই দেশগুলির সংখ্যাগুরু মানুষ, অর্থাৎ মুসলমানরা এ দেশে চলে এলে তাঁদের অনুপ্রবেশকারী হিসাবে চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট দেশে ফেরত পাঠানো (পুশ ব্যাক) হবে। নানা পক্ষের আপত্তিতে বিলটি নিয়ে আরও চিন্তাভাবনা করার জন্য যৌথ সংসদীয় কমিটি গঠিত হয়। বারবার বৈঠক সত্ত্বেও সদস্যরা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেননি।
মঙ্গলবারের বৈঠকে কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, সিপিএম, সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি, ডিএমকে সদস্যরা বিলটির বিরোধিতা করেন। ফলে বিলটির প্রতিটি ধারা নিয়ে আলাদাভাবে আলোচনা করা সম্ভব হয়নি। সূত্রের খবর, অনেক সদস্যই বিলটি নিয়ে ‘ধীরে চলো’ নীতি গ্রহণের কথা বলেছেন। এমনকী, বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ বিনয় সহস্রবুদ্ধেও বৈঠকে বলেন, বিলটি নিয়ে তাড়াহুড়ো না করাই ভাল। বিস্ময়ের বিষয়, অসমের দুই বিজেপি সদস্য বিল নিয়ে নিজেদের মতামত জানাননি। যদিও দিল্লির বিজেপি নেত্রী মীনাক্ষি লেখি অবিলম্বে বিলটি পাশ করা উচিত বলে মন্তব্য করেন। সংসদীয় নিয়ম মেনে বৈঠকের কথা প্রকাশ্যে বলতে পারেননি। তাই ‘হাসি মুখের’ ইমোজি দিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন কমিটির সদস্য তথা রাজ্যসভায় তৃণমূলের দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন।
মঙ্গলবারের বৈঠকে বিরোধীদের দেওয়া সংশোধনী নিয়েও আলোচনা সম্ভব হয়নি। তাদের অন্যতম প্রস্তাব ছিল, প্রতিবেশী কোনও দেশের নাম উল্লেখ করা চলবে না। উল্লেখ করা যাবে না শরণার্থীদের ধর্মীয় পরিচয়ও। শুধু বলা হোক, প্রতিবেশী দেশ থেকে অত্যাচারিত হয়ে যাঁরাই ভারতে আসবেন, তাঁদের সকলকেই নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। স্বাভাবিকভাবেই এই প্রস্তাব বিজেপির পক্ষে মেনে নেওয়া কঠিন। আবার লোকসভা ভোটের আগে শরিকদের পুরোপুরি উপেক্ষা করাও সম্ভব হচ্ছে না। তাই তাড়াহুড়ো না করে ঐকমত গড়ে তোলার উপর জোর দিচ্ছে বিজেপি।
[টিএমসিপির হুজ্জুতিতে বন্ধ কলেজের বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান, রাস্তায় বসে বিক্ষোভ অধ্যাপকদের]
The post হিন্দু শরণার্থীদের উদ্বেগ বাড়িয়ে ঠান্ডা ঘরে নাগরিকত্ব বিল appeared first on Sangbad Pratidin.