অমিত সিং দেও, মানবাজার: সিলেবাসের বিপুল চাপ। আর সেই মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পেতে ‘কিছু একটা অঘটন’ ঘটানোর পরিকল্পনা । আর তা করতে পারলেই এই লেখাপড়া, পাঠক্রম, সর্বোপরি হস্টেল জীবনের ‘বন্দি দশা’ থেকে মুক্তি। তাই স্কুলের এক শিশু পড়ুয়াকে পাথর দিয়ে থেঁতলে খুন অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়ার ! পুরুলিয়ার (Purulia) মানবাজার থানার ঘাসতোড়িয়া সারদা শিশু মন্দির শান্তিবনে আবাসিক স্কুলে পড়ুয়ার অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশি তদন্তে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এলো। নাবালক পড়ুয়ার এমন অপরাধপ্রবণতায় হতভম্ব এই ঘটনার তদন্তে থাকা পুলিশ কর্তারা। আপাতত পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে, পুকুরে পড়ে গিয়ে নয়, বছর ছয়ের ওই স্কুল পড়ুয়াকে থেঁতলে খুন করা হয়েছে।
আর এই তথ্যের ভিত্তিতে ঘাসতোড়িয়া সারদা শিশু মন্দির শান্তিবনের অষ্টম শ্রেণির এক পড়ুয়াকে সোমবার আটক করেছে পুরুলিয়ার মানবাজার থানার পুলিশ। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত তদন্তে যা পাওয়া গিয়েছে তাতে এটি একটি পরিকল্পিত খুনের ঘটনা। এই ঘটনায় যে জড়িত রয়েছে তাকে আটক করা হয়েছে।’’ সোমবার দুপুরে আটক ছাত্রকে পুরুলিয়ার শিমুলিয়া আনন্দ মঠ জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের কাছে হাজির করা হয়। সেখান থেকে ওই কিশোরকে হুগলির কল্যাণ ভারতী হোমে পাঠানো হয়েছে। মানবাজার থানার পুলিশ জানিয়েছে, ওই পড়ুয়া কিছু একটা অঘটন ঘটিয়ে দিলেই এই হোস্টেল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটি পাবে। আর সে বাড়ি ফিরতে পারবে। সেই কারণেই এই ঘটনা ঘটায় ওই অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। আটক ছেলেটির বয়স ১৪। ১০ থেকে ১২ দিন আগে ছেলেটি এই আবাসিক স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল। যে ছেলেটি মারা গিয়েছে সে ওখানে সাড়ে তিন বছর ধরে পড়ত। তার বাবা পুরুলিয়ার কেন্দা থানার সিভিক ভলান্টিয়ার।
দেখুন ভিডিও:
এই ঘটনার দু’তিন দিন আগে স্কুলের পেছনে থাকা পুকুরে আরেকটি আবাসিক পড়ুয়াকেও ওই ছাত্র ধাক্কা মেরে জলে ফেলে দিয়েছিল বলে পুলিশি তদন্তে উঠে আসে। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানতে পেরে ছাত্রটিকে উদ্ধার করে। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, ঘটনার দিন গত মঙ্গলবার চতুর্থ পিরিয়ডের পর মৃত সুদীপ মাহাতোকে আর দেখা যায়নি। সেই সঙ্গে অভিযুক্ত ছেলেটিকেও সেদিন ওই সময়ের পরে আর দেখা যায়নি। ফলে খুব স্বাভাবিকভাবে ক্লাস রুমেও তাকে দেখা যায়নি। আর এখান থেকে সন্দেহ হয় পুলিশের। ঘটনার দিন অভিযুক্ত পড়ুয়াকে যে দিকে স্কুলের পুকুর সেদিক থেকেই আসতে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু পুলিশ হতবাক যে পঞ্চম ও ষষ্ঠ পিরিয়ডের পরে সপ্তম পিরিয়ডে অভিযুক্ত আবার ক্লাস করেছে।
[আরও পড়ুন: মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বন্ধ স্কুল, পড়ুয়াদের পড়াতে বোর্ড হাতে এলাকায় ঘুরছেন শিক্ষকরা]
পুলিশ সূত্রে খবর, আবাসিক স্কুলে ভর্তির পর থেকেই ওই পড়ুয়ার মন বসছিল না। সেটা ছেলেটি পুলিশকে জানায়। পুলিশ ওই অভিযুক্ত কিশোরকে আটক করার পরেই তার বাবাকে ডাকে। তাদের বাড়ি বান্দোয়ান থানা এলাকায়। অতীতে ওই আটক ছাত্র বান্দোয়ানের একটি আবাসিক স্কুলে পড়ত। তখনও সে বাড়িতে চলে যাওয়ার জন্য বায়না ধরত। পরিবারের সদস্যদের ঘনঘন ফোন করত বলে পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে। এদিকে পুলিশের হাতে উঠে আসা তথ্যগুলো তার বাবাকে বললে তা বিশ্বাস করতে চাননি তিনি ও তার পরিবার।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত সোমবার বিকালে ঘাসতোড়িয়া সারদা শিশু মন্দির শান্তিবনের আবাসিক প্রথম শ্রেণির সুদীপ মাহাতোকে (৬) স্কুলের অদূরে একটি পুকুরে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে স্কুলের অন্যান্য পড়ুয়ারা। পরে স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে উদ্ধার করে প্রথমে মানবাজার ও পরে পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক ওই বালককে মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় মঙ্গলবার পুরুলিয়া সদর থানার পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা করে। বৃহস্পতিবার ছেলের মৃত্যুতে স্কুল কর্তৃপক্ষের গাফিলতির অভিযোগ তুলে মানবাজার থানার একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন কেন্দা থানার কেশ্যা গ্রামের বাসিন্দা মহানন্দ মাহাতো। এরপরেই এদিন ওই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির আবাসিক ওই পড়ুয়াকে আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পেরেছে, ঘটনার দিন দুপুরে টিফিনের ছুটিতে চকোলেট দেওয়ার নাম করে ওই পড়ুয়াকে পুকুর পাড়ে নিয়ে গিয়ে পাথর দিয়ে ওই বালকের মাথায় বারে বারে আঘাত করা হয়। সেখানেই লুটিয়ে পড়ে বালক।