কিংশুক প্রামাণিক,বিশাখাপত্তনম: একটা কিছু বড় ঘোষণা থাকবে, জানাই ছিল। প্রথম প্রচার সভা বলে কথা। সরাসরি এবার প্রধানমন্ত্রীকে মুখোমুখি বিতর্কে বসার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
[আরও পড়ুন: দেশের সম্পদ রক্ষা করাই আমার কাজ, ‘চৌকিদার’ মহাসম্মেলনে বললেন মোদি]
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি পৌনে সাতটা। তখনও দেখা নেই সভার আয়োজক চন্দ্রবাবু নায়ডুর। আরও দুই মুখ্যমন্ত্রী মমতা ও অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে সঙ্গে করে নিয়ে আসবেন। আর একটু অপেক্ষা। মিটিং তো চলবে রাত নটা-দশটা পর্যন্ত। এটাই নাকি তেলুগুভূমের কালচার। পাহাড় আর সমুদ্রে ঘেরা বন্দর-বাণিজ্য নগরী এই বিশাখাপত্তনম, বাঙালি যাকে ভাইজাগ বলতে বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করে। সেই শহরের ইন্দিরা প্রিয়দর্শিনী স্টেডিয়ামের মাঠ বিকেল গড়াতেই কানায় কানায় পূর্ণ। সত্তর শতাংশ মহিলা। চারিদিকে হলুদ রং। ভরা চৈত্রের সঙ্গে বেশ মানানসই। ওটাই প্রবাদপ্রতিম এনটি রামারাও প্রতিষ্ঠিত (দল গঠনের দেড় বছরের মধ্যে অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন তেলুগু ছবির উত্তমকুমার) পার্টির পতাকার রং। প্রতীক মুলায়ম সিং যাদবের সমাজবাদী পার্টির মতোই সাইকেল। নেতারা নাই আসুন, সেই কখন থেকে অবিরাম বক্তৃতা দিয়ে চলেছেন টিডিপি নেতারা। যাঁদের অনেকেই লোকসভা ও বিধানসভা ভোটের প্রার্থী। হঠাৎ করে তেলেগু ভাষা বোঝার চেষ্টা করলে মাথা খারাপ হয়ে যাবে। কিন্তু মানুষের অভিব্যক্তি থেকেই বোঝা যায় মুখের ভাষা। তেলুগু জাতির এই অভিনব নির্বাচনী সভা দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, কী বিচিত্র দেশ ভারত! একই সাগর উপচে পড়ে উপকূলে। কোথায় বাংলা, কোথায় অন্ধ্র। তবু সব একাকার।
সাতটা বারো। অবশেষে তাঁরা আসছেন। বাজছে ব্যান্ড। ফাটছে বাজি। পুরো ফিল্মি ধামাকার মতো। এটাই নাকি অতিথি বরণের রেওয়াজ। দেখলাম মমতাকেই আগে মঞ্চের দিকে এগিয়ে দিলেন নায়ডু-কেজরি। জনতার অভিবাদনের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মালা দিলেন এনটি আরের মূর্তিতে। তারপর একে একে সবাই।
প্রথমে কেজরির ভাষণ। তারপর মমতা। ঝাড়া পঁচিশ মিনিট। প্রচারের শুরুর দিনটা ভিনরাজের মাটিতে ঝড় বইয়ে দিলেন তিনি। মোদি হারলে তিরুপতিতে পুজো দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ থেকে তেলুগু ভাষায় কথা বলে স্থানীয় মানুষের আবেগ উসকে দিলেন। নানা ভাবে বোঝালেন, তাঁর লক্ষ্য একজনই এবং লক্ষ্য একই। তিনি নরেন্দ্র মোদি। তাঁকে ক্ষমতায় আসতে না দেওয়া।
যা বললেন তা এরকম, এক, এতদিন সাধারণ মানুষের কাছে আহ্বান জানাচ্ছিলেন। এদিন বিজেপির সহযোগী সংগঠনগুলির কাছেও (নাম করেননি আর এস এস, ভিএইচপি, বজরং দলের) আবেদন, “যদি সত্যি তারা দেশভক্ত হন, তা হলে মোদিকে ক্ষমতায় আসতে দেবেন না। কারণ তিনি আবার এলে দেশের ক্ষতি করে দেবেন নিজের স্বার্থে। দেশে আর ভোট হবে না।” এর পরই পুলওয়ামা কাণ্ডের প্রসঙ্গ তোলেন। এবং সেটা নিয়ে বিরোধী দল হিসাবে তাঁর দায়িত্ব কর্তব্য কী তা তুলে ধরেন। কেন্দ্রের সরকারকে আক্রমণ করে বলেন, বিজেপির আমলে সবচেয়ে বেশি সন্ত্রাসবাদী হামলা হয়েছে। বহু জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে। সরকার ব্যর্থ। ৪৫ বছরে সবচেয়ে খারাপ জায়গায় এসেছে দেশ। নোটবন্দি, জিএসটি, কৃষক হত্যা, গণহত্যার মতো একাধিক ঘটনা ঘটেছে। দেশবাসীর উদ্দেশে এর পরই মমতা বলেন, “মানুষকে বলব এটা স্পেশাল ইলেকশন। খুব ভেবেচিন্তে ভোট দেবেন।” মমতা তথ্য দিয়ে দাবি করেন যে, ১২৫ ক্রশ করলে খুব ভাল হবে।
দুই, মোদি কেন পাঁচ বছরে কখনও সাংবাদিকদের মুখোমুখি হননি। কেন কোনও প্রশ্ন ফেস করেন না। তিনি একবার বিরোধীদের সঙ্গে বিতর্কে বসুন। মমতা বলেন, “উনি তো টেলিপ্রম্পটারে কথা বলেন। বসুন আমার সঙ্গে।
মোদিজি, আপনার সঙ্গে ডিবেট করতে আই অ্যাম রেডি টু ফাইট। উনি প্রশ্ন করবেন, আমি উত্তর দেব। আমি করলে ওঁকে জবাব দিতে হবে।” তিন, বিষয় চৌকিদার ও ছাপ্পান্ন ইঞ্চি ছাতি। বলেছেন, “মোদি ঝুটের চৌকিদার, লুঠের চোকিদার। উনি দেশের মানুষকে মিথ্যা বলার চৌকিদার। মিথ্যে বলতে আমাদের লজ্জা করে। কিন্তু ওঁর কিছু যায় আসে না। শুধু মিথ্যা বলেন। উনি সবাইকে ভয় দেখাচ্ছেন। ৫৬ ইঞ্চি ছাতির লোকটা গোটা দিনে ৫৬০ ইঞ্চি মিথ্যা কথা বলেন।” চার, প্রসঙ্গ বিরোধীদের কে প্রধানমন্ত্রী? মমতার কথায়, কে হবেন সেটা ভাবতে হবে না মোদিকে। দেশের নেতা কেন, উনি ব্লকের নেতা হতে পারবেন না। হিন্দুস্তানকে বাঁচাতে গেলে মোদি ও তাঁর বন্ধুকে সরাতে হবে। দেশে এবার হবে জনতার সরকার। প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, সেটা ভোটের পর বসে আমরা ঠিক করব। নায়ডু হোক বা কেজরি, অথবা তিনি, অথবা বিরোধী দলের আঞ্চলিক নেতৃত্ব, যাদের রাজ্যে রাজ্যে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। যে কেউ দেশের নেতৃত্ব দেবেন। এই পর্বেই কেজরিওয়ালের দাবিকে সমর্থন করেন মমতা। বলেন, দিল্লির স্বতন্ত্র অধিকার চাই।
[ আরও পড়ুন: নামের আগে চৌকিদার কেন? নেটিজেনকে মোক্ষম জবাব সুষমার]
The post মোদিকে মুখোমুখি বিতর্কে বসার চ্যালেঞ্জ মমতার appeared first on Sangbad Pratidin.