ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: সনাতন ধর্মের সঙ্গে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার তুলনা করে বিতর্কে জড়িয়েছেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিনের পুত্র উদয়নিধি স্ট্যালিন (Udhayanidhi Stalin)। এবার এনিয়ে মুখ খুললেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উদয়নিধির মন্তব্যকে সরাসরি ধিক্কার না জানিয়ে উলটে আরও সহানুভূতিশীল হওয়ার বার্তা দিলেন তিনি।
স্ট্যালিনপুত্রের কোন মন্তব্য নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক? সম্প্রতি ‘সনাতন অ্যাবলিশন কনফারেন্সে’ যোগ দিয়েছিলেন উদয়নিধি। সেখানেই তিনি বলেন, ”কিছু জিনিসের প্রতিবাদ করা যায় না। সেগুলির অবলুপ্তি ঘটানো দরকার। আমরা ডেঙ্গু, মশা, ম্যালেরিয়া কিংবা করোনার বিরোধিতা করি না। আমরা সেটা নির্মূল করি। ঠিক সেভাবেই আমাদের সনাতন ধর্মকে (Sanatana dharma) অবলুপ্ত করতে হবে। ‘সনাতন’ শব্দটা এসেছে সংস্কৃত থেকে। এটা সামাজিক ন্যায় ও সাম্যের বিরুদ্ধে।” আর এরপরই বিতর্ক চরমে পৌঁছে যায়।
[আরও পড়ুন: চার্জশিটে নাম থাকা সত্ত্বেও কেন ব্যবস্থা নয়? নবম-দশম নিয়োগ মামলায় ফের ভর্ৎসনার মুখে CBI]
বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য তাঁর এই কথার তীব্র বিরোধিতা করে দাবি করে বলেন, তামিলনাড়ুর ক্রীড়া ও যুব উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়নিধি যা বলেছেন, তা ৮০ শতাংশ জনগণকে হত্যার প্ররোচনা ছাড়া কিছু নয়। পাশাপাশি বিরোধী ইন্ডিয়া জোটে ডিএমকের শরিক হওয়াকেও খোঁচা দেন অমিত মালব্য। গেরুয়া শিবিরের তীব্র কটাক্ষের মাঝে এবার মুখ খুললেন মমতা।
সোমবার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি মনে করি প্রত্যেকটি মানুষের নিজস্ব ধর্মীয় ভাবাবেগ রয়েছে। আমরা তাই সবসময় বলি ভারত ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। বিভিন্ন ধর্মের মানুষের বাস এখানে। বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যই এর গর্ব। আমি সনাতন ধর্মকে সম্মান করি। পুরোহিতরা তো বেদ মেনেই পুজো করেন। আমরা মন্দির, মসজিদ, গির্জা, সব জায়গাতেই যায়। তাই আমাদের এমন কোনও মন্তব্য করা উচিত নয়, যা কারও ভাবাবেগে আঘাত করে।” এরপরই যোগ করেন, “উনি কোন পরিপ্রেক্ষিতে এই মন্তব্য করেছেন জানি না। কিন্তু মনে হয় প্রত্যেক ধর্মের সম্মান করা উচিত।” সরাসরি স্ট্যালিনপুত্রের মন্তব্যের বিরুদ্ধে তোপ না দেগে বরং খানিকটা সুর নরম করেই মমতা বলেন, “সকলের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ, মানুষকে আঘাত করে, এমন কোনও মন্তব্য করবেন না।”
ইন্ডিয়া জোটের শরিক ডিএমকে। তাই কড়া ভাষায় যেমন উদয়নিধির নিন্দা করা কঠিন, তেমনই সনাতন ধর্ম নিয়ে বিতর্কে মুখ না খুললে, বিজেপির তোপের মুখে পড়তে হবে তৃণমূলকে। উভয়দিক রক্ষা করে কার্যত নরম সুরেই নিজের অবস্থান স্পষ্ট করলেন মমতা বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
তবে বিতর্কের মুখেও মাথানত করবে নারাজ উদয়ানিধি। তাঁর দাবি, তিনি মোটেই গণহত্যার ডাক দেননি। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল, প্রান্তিক জনজাতির হয়ে কথা বলা। তিনি সনাতন ধর্মের দ্বারা আক্রান্ত। আবারও এমন মন্তব্য করতে পিছু পা হবেন না তিনি বলেও সাফ জানান।