সংবাদ প্রতিদিনি ডিজিটাল ডেস্ক: পুজোর (Durga Puja) সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জনসংযোগকে একেবারে অন্য মাত্রায় নিয়ে যান। বিভিন্ন পুজো প্যান্ডেলে উদ্বোধনের পাশাপাশি নানা জায়গায় জনতা ও পুজো উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলাদাভাবে কথাবার্তা বলেন তিনি। প্রতি বছর পুজোয় তাঁর আরও একটি বাঁধা রুটিন আছে। চতুর্থীর সন্ধেটা মুখ্যমন্ত্রী কাটান চেতলা (Chetla) ‘নবনীড়’ বৃদ্ধাবাসের আবাসিকদের সঙ্গে। বয়স্কদের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন। শারদীয়ার শুভেচ্ছা জানিয়ে আশীর্বাদ গ্রহণ করেন। এবছরও তার ব্যতিক্রম হল না। বৃহস্পতিবার সন্ধেবেলা ফিরহাদ হাকিম, ইন্দ্রনীল সেনকে সঙ্গে নিয়ে তিনি গেলেন নবনীড়ে। গানে, গল্পে, আড্ডায় প্রবীণদের সঙ্গে কিছুক্ষণ কাটালেন ফুরফুরে মেজাজে।
মাকে হারিয়েছেন অনেকদিন। সেই টান থেকেই নবনীড়ের বৃদ্ধ আবাসিকদের সাহচর্য চান। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (CM Mamata Banerjee) কোনও পুজোর উদ্বোধন ছিল না। বিকেলে তাই সোজা চলে গেলেন বৃদ্ধাবাসে। সঙ্গী ফিরহাদ হাকিম, ইন্দ্রনীল সেন। মাতৃসম বাসিন্দাদের সঙ্গে গানে, আড্ডায় মাতলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁদের মাঝেই খুঁজলেন নিজের মাকে। অন্যান্যবার থাকে মুখ্যমন্ত্রীর লেখা, সুর করা নতুন গানের উপহার। মন্ত্রী সংগীতশিল্পী ইন্দ্রনীল সেন সেসব কিছুটা গেয়েও শোনান। এবারের চমক একেবারে উলটো। মুখ্যমন্ত্রীরই পুরনো দু’টি গান গেয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে শোনান নবনীড়ের আবাসিকরা।
‘এই পৃথিবীর একই মাটি/একই আকাশ-বাতাস’ দিয়ে অভ্যর্থনা। পরে আবার ‘মাগো তুমি সর্বজনীন/ আছো হৃদয়জুড়ে’। গান শুরুর সঙ্গে সঙ্গে মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim) মুখ্যমন্ত্রীকে জানান, ‘‘এর জন্য তিন-চারদিনের রিহার্সালও চলেছে।’’ স্বভাবতই নিজের গান এমনভাবে উপহার পেয়ে চমকে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীও। মাকে হারিয়েছেন আরেক মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন এবং ফিরহাদ হাকিমও। তাঁদের কথা তুলেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এ জায়গাটা না এলে পুজোর চতুর্থী সম্পন্ন হয় না। পুজোর আবাহন সংগীত সম্পন্ন হয় না। আমরা তিনজনই মাকে হারিয়েছি। আমাদের ঘরের মা আজ আপনারাই।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আপনাদের দেখে আমরা আমাদের মায়ের মুখ মনে করি। পুজোর আগে তাই আপনাদের দেখতে আসা। আপনারা সকলে সুস্থ থাকুন। প্রতিবারই একটা আশা নিয়ে আসি। এসেই সকলের মুখটা দেখেনি। কবে কে আমরা হারিয়ে যাব! কে কোথায় হারিয়ে গিয়েছে জানি না। পরিচিত মুখগুলো আছে কিনা জানি না। দেখতে না পেলে চিন্তা হয়।’’ সদ্য একডালিয়া এভারগ্রিনের পুজোয় গিয়ে সে পুজোর প্রাণ সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের কথা বলতে গিয়ে নস্ট্যালজিক হয়ে পড়েছিলেন।
[আরও পডুন: এবার গাড়িতে থাকতেই হবে অন্তত ৬টি এয়ারব্যাগ, আগামী বছরের অক্টোবর থেকেই চালু নয়া নিয়ম]
দেড় হাজার পুজোর উদ্বোধন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী এবার। শুধু উদ্বোধন নয়, বক্তৃতা দিতে হয় তাঁকে। তার জন্য গলায় একটু চোট। চণ্ডীপাঠ করতে গিয়ে সে কথা নিজেই জানালেন। তার সঙ্গেই বৃদ্ধাশ্রমের প্রত্যেককে আমন্ত্রণ জানিয়ে রাখলেন বাড়ির কালীপুজোয়। ২০২০, অর্থাৎ, করোনার বছর থেকেই পুজোর অষ্টমীতে এই আবাসিকদের সুরক্ষার কথা ভেবে আর বাইরে ঠাকুর দেখতে নিয়ে যাওয়া হয় না। এখানেই পুজোর আয়োজন হয়। মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘‘এখন তো এখানেই পুজো করেন। এটাই সব থেকে ভাল।’’
তবে চমক আরও বাকি ছিল। অন্যান্যবারের মতো এবারও ইন্দ্রনীল নতুন বছরের মমতার গান গেয়ে শোনান। তার মধ্যে ‘টাক ডুম টাক ডুম’ আর ‘কাশ ফুল কাশ ফুল’ গান দু’টি গেয়ে শোনান। ‘টাক ডুম টাক ডুম’ গান শুনে একেবারে আনন্দে আত্মহারা আবাসিকরা। বলেই বসলেন এ একেবারে নাচের গান। পাল্টা ইন্দ্রনীল বললেন, ‘‘পরেরবার নাচ শিখতে হবে কিন্তু!’’ সঙ্গে সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জুড়লেন ‘‘ঢাকও লাগবে!’’ আগেরদিনই মুখ্যমন্ত্রীর ঢাক বাজানোর ছবি-ভিডিও সকলের হাতে হাতে ভাইরাল। আবাসিকরাও সেসব দেখেছেন। তাঁরা প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীকে।
[আরও পডুন: ববিতা সরকারের পর প্রিয়াঙ্কা সাউ, SSC মামলায় হাই কোর্টের নির্দেশে চাকরি পেলেন যোগ্য প্রার্থী]
এর সঙ্গে পেয়েছেন পুজোর উপহার। তার সঙ্গে প্রত্যেককে দলীয় মুখপত্র ‘জাগো বাংলা’র উৎসব সংখ্যা। রয়েছে এবারের নতুন আটটি গানের সিডি। তার সঙ্গে আরও একটি উপহার ইন্দ্রনীলকে দিতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ২৫ সেপ্টেম্বর নজরুল মঞ্চে যে উৎসব সংখ্যার প্রকাশ অনুষ্ঠান হয়েছে, সেখানে দুর্দান্ত সব পারফরম্যান্সও ছিল। ইন্দ্রনীলকে তাঁর নির্দেশ, দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষকে বলে যেন সেই অনুষ্ঠানের পূর্ণাঙ্গ ভিডিও এখানকার আবাসিকদের দেওয়া হয়। এর মধ্যেই আরও একটি উপহার ‘মহিষাসুরমর্দিনী’র বিখ্যাত গান ‘জাগো তুমি জাগো’-য় ইন্দ্রনীলের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর ডুয়েট। সব শেষে চণ্ডীপাঠ। যা করতে গিয়েই গলায় চোটের কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘‘একটু চণ্ডীপাঠ শোনাই। বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে উদ্বোধন করে চণ্ডীপাঠ করেছি। দেড় হাজারের বেশি উদ্বোধন করেছি। গলা আমার একদম চোট। তা সত্ত্বেও একটু বলি।’’ যা দেখে-শুনে একেবারে আপ্লুত হয়ে পড়েন আবাসিকরা।