অভিরূপ দাস: ওয়ার্ডের দীর্ঘদিনের কাউন্সিলর দাপুটে নেতা দেবাশিস কুমারের বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়িয়েছে ঘরের ছেলে! রাগে, ক্ষোভে তাঁকে বাড়িছাড়া করলেন পরিবার-পরিজন।
৮৫ নম্বর ওয়ার্ড একাধিকবার পেয়েছে পুরসভার পরিচ্ছন্নতম ওয়ার্ডের তকমা। “এত কাজ করেছেন উনি। তার পরেও যদি তুই ওঁর বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছিস, এই বাড়িতে ঠাঁই পাবি না।” সোজাসাপটা জানিয়ে দেন বাড়ির লোকেরা।
অগত্যা বাক্সপ্যাঁটরা নিয়ে পার্টি অফিসে এসে উঠেছেন কংগ্রেস প্রার্থী জয়দেব ভৌমিক। ৮৫ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী বলছেন, “থাক বাড়ি ঘরদোর। ভোটে আমি লড়বই।” ১৭/১ পণ্ডিতিয়া রোডের বাড়ি ছেড়ে আপাতত জয়দেবের ঠিকানা ঝুরঝুরে পার্টি অফিস। রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ে ঝাঁ চকচকে এক বস্ত্র বিপণির গা ঘেঁষা গলি দিয়ে ঢুকেই সেই মান্ধাতার আমলের হাতচিহ্নের কার্যালয়। মরচে ধরা লোহার ঘোরানো সিঁড়ি। টিমটিম করছে হলদে আলো। এক চিলতে ঘরে কোনওরকমে দিন কাটাচ্ছেন জয়দেব। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ, ১১ বছরের ছেলেকে নিয়ে স্ত্রীও চলে গিয়েছে শ্বশুরবাড়ি। জয়দেববাবুর কথায়, “পরিবারের কথা আমি শুনব না। কংগ্রেস দলটাকে আমি ভালবাসি।”
[আরও পড়ুন: শীতে ভিজছে বঙ্গ, শক্তি খোয়ালেও ‘জাওয়াদে’র প্রভাবে ৪০ বছরের মধ্যে রেকর্ড বৃষ্টি]
ওয়ার্ডে মোড়ে মোড়ে LED লাইট। বুস্টার পাম্পিং স্টেশনের সাহায্যে ওয়ার্ডের বস্তিতেও ২৪ ঘণ্টা জল। এমন এক ওয়ার্ডে শুধুমুধু বিরোধিতা কেন? সাফ জানিয়েছে জয়দেববাবুর পরিবার। মা-বাবা নেই। ছোট থেকে মামাবাড়িতে মানুষ জয়দেব। অবিবাহিত মাসিরাই ছোট থেকে তাঁকে মানুষ করেছেন। জয়দেবের কথায়, “মাসিরা আমায় বলেছিলেন, ভোটে দাঁড়াস না বাবা। কিন্তু আমি একটা গানে বিশ্বাস করি, যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে।”
কংগ্রেস প্রার্থীর দাবি, “পকেট থেকে তো এক টাকাও খরচ করছি না। কংগ্রেস নেতা তুলসী মুখোপাধ্যায় আমার সমস্ত খরচ দিচ্ছেন। কেন দাঁড়াব না বলুন তো?” একাই ইলেকট্রিক কেটলিতে চা বানিয়ে খাচ্ছেন। কখনও খিদে পেলে চলে যাচ্ছেন রাস্তার কচুরির দোকানে। কোনও রাতে আধপেটা খেয়েই কাটছে। এ খবর কানে গিয়েছে তৃণমূল প্রার্থী দেবাশিস কুমারের। তাঁর কথায়, “বিষয়টা আমি শুনেছি। ওঁর কোনও অসুবিধে হলে আমি পাশে দাঁড়াব।”