বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, গোয়ালিয়র: বাংলায় প্রচলিত প্রবাদ ‘নিজের নাক কেটে পরের যাত্রাভঙ্গ’। সে বস্তুটি ঠিক কেমনতর, তা বুঝতে গেলে আসতে হবে এবারের ভোটমুখী মধ্য প্রদেশে! সেই ২০০৫-এর নভেম্বর মাস থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় টানা ১৮ বছর মধ্য প্রদেশের তখতে রাজত্ব করছেন শিবরাজ সিং চৌহান ও তাঁর দল বিজেপি। ‘প্রায়’ বলতে হল, কারণ ২০১৮-এর ডিসেম্বর থেকে ২০২০-র মার্চ, এই ১৫ মাস মসনদের দখল নিয়েছিল কমল নাথের কংগ্রেস সরকার। রাজনীতির স্বাভাবিক নিয়মেই রাজ্যজুড়ে এখন প্রবল প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার ঝড় বইছে। ভোট যত কাছে আসছে, শিবরাজ সরকারের পতনের পদধ্বনি ততই স্পষ্ট হচ্ছে। ভোট পূর্ববর্তী জনমত সমীক্ষাতেও তেমনটাই ইঙ্গিত।
কিন্তু বিজেপি বিদায়ের আবহসঙ্গীত বলে যাকে মনে হচ্ছে, সে তো স্রেফ পাটিগণিতের হিসাব মেনে। রাজনীতির অঙ্ক তো আদতে শুভঙ্করী ধাঁধা! জটিল সেই হেঁয়ালির তল পাওয়া ভার। যেমন ধরুন বিজেপি বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের দুই অন্যতম শরিক, ঘোর বিজেপি বিরোধী অখিলেশপ্রতাপ সিংয়ের সমাজবাদী পার্টি ও অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টির চলন বলন। ঘরের ভিতরকার কোন্দল আর বাইরের প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়ায় গেরুয়া শিবির যখন জেরবার, তখন ২৩০ আসন বিশিষ্ট মধ্যপ্রদেশ বিধানসভায় অখিলেশের সমাজবাদী পার্টি ২২৮ আসনে প্রার্থী দিয়ে বসে আছে।
[আরও পড়ুন: ‘গাজা দখল বা শাসন উদ্দেশ্য নয়’, দাবি করেও সংঘর্ষবিরতির প্রস্তাব খারিজ নেতানিয়াহুর!]
কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি প্রার্থী দিয়েছে ৭০ আসনে। এবং আছে কুমারী মায়াবতীর বিএসপিও। তারা প্রার্থী দিয়েছে আপের দ্বিগুণ, ১৪৪ আসনে। তাও আবার তিন দলই প্রার্থী দিয়েছে বিশেষ করে কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত গোয়ালিয়র ও চম্বলে। সঙ্গে মেহগাঁও, টিমনি, মুরেনা, ভিতখার জেলায় প্রায় প্রত্যেক আসনে। এছাড়াও উত্তরপ্রদেশ লাগোয়া ভিন্ড জেলা, যেখানে বিএসপি ও এসপির প্রভাব রয়েছে, সেখানে প্রার্থীদের জেতাতে প্রতিদিনই ঘাম ঝরাচ্ছেন অখিলেশ ও মায়াবতী। এই রাজ্যে খাতা খুলতে মরিয়া কেজরিওয়ালও। পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগমন্ত সিং মানকে কার্যত বগলদাবা করে দৌড়ে বেড়াচ্ছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী।
মধ্যপ্রদেশের উত্তর অংশ মূলত কৃষিনির্ভর। এবার সেখানে কার্যত খরা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় ভোট প্রচারে কংগ্রেস ও বিজেপিকে একযোগে কাঠগড়ায় তুলেছে এসপি ও বিএসপি, দু’পক্ষই। স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি ভালভাবে নেয়নি কংগ্রেস। ভোট প্রচারের সময় খুল্লামখুল্লা ‘ভোট কাটুয়া’ বলে কটাক্ষ করে অখিলেশ ও মায়াবতীকে এক হাত নিচ্ছেন কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী কমলনাথ। তাঁর অভিযোগ, রাজ্যে ওঠা প্রবল সরকার বিরোধী হাওয়াকে ব্যার্থ করে গেরুয়া শিবিরকে ফের ক্ষমতায় ফেরার রসদ জোগান দিচ্ছেন অখিলেশ যাদব, মায়াবতী, কেজরিওয়ালরা।
[আরও পড়ুন: ল্যামিনেশন পেপার কেনারও পয়সা নেই পাকিস্তানের! মিলছে না পাসপোর্ট]
তবে নিজেদের পক্ষে পালটা যুক্তিও যথেষ্ট জোরালো অখিলেশদের। ২০১৮ সালে বিধানসভা ভোটে ১১৩টি আসন জেতা কংগ্রেসকে সমর্থন জানিয়েছিল মায়াবতীর বিএসপি দলের দু’জন ও অখিলেশের এসপি-র এক বিধায়ক। সেই সমর্থনের জোরে সরকার গড়ে মুখ্যমন্ত্রী হন কমলনাথ। কিন্তু সিন্ধিয়া রাজপুরুষ রাহুল গান্ধীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার বিদ্রোহে সেই সরকার ১৫ মাসের বেশি স্থায়ী হয়নি। সেসময় সিন্ধিয়ার ঘনিষ্ঠ বিধায়করা দলত্যাগ করে গেরুয়া শিবিরে নাম লেখানোয় কমল নাথ সরকারের পতন হয়।
এবারও ভোট ঘোষণার আগেই কংগ্রেসের দিকে জোটের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন অখিলেশ। হাইকম্যান্ড সেই জোট প্রস্তাবে উৎসাহী হলেও কমল নাথের চাপে শেষপর্যন্ত পিছিয়ে যায়। তাঁর বাড়ানো হাত প্রত্যাখ্যান করে জোট না হওয়ার কথা রাহুল গান্ধী ঘোষণা করার পরই প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন অখিলেশ।