বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত: অতিরিক্ত তৃণমূল বিরোধিতার জন্য দলের অন্দরে তিনি বেশ চাপে। রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পর দিল্লি তথা এআইসিসির (AICC) নেতাদের গঞ্জনা শুনতে হয়েছে প্রকাশ্যেই। দলের অন্দরে অনেকেই তাঁর পদত্যাগের দাবি তুলছেন। আর এই সার্বিক চাপের মধ্যেই একেবারে অপ্রত্যাশিত সুর শোনা গেল প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর (Adhir Ranjan Chowdhury) গলায়। উপনির্বাচনে মমতার বিরুদ্ধে প্রার্থী না দিয়ে সম্মান জানানোর কথা বললেন তিনি। যা ২৪-এর আগে নতুন কোনও সমীকরণের ইঙ্গিত কিনা খোঁজ করছেন রাজনীতির কারবারিরা।
রাজ্য রাজনীতিতে প্রবল মমতা বিরোধী হিসেবে পরিচিত অধীর রাজ্যের আসন্ন উপনির্বাচনে ভবানীপুর কেন্দ্রে কোনও প্রার্থী দিতে চান না। ওই কেন্দ্র থেকে শাসকদলের তরফে লড়াই করবেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। কংগ্রেস সূত্রের খবর, রাজ্যে বিপুল জয়ের পর মমতাকে সম্মান জানাতেই ওই কেন্দ্রটিতে প্রার্থী দিতে চাইছেন না প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। অধীরের বক্তব্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফিরেছে। আর মুখ্যমন্ত্রী নিজে প্রার্থী হচ্ছেন। ওই কেন্দ্রে কংগ্রেসের জয়ের তেমন সম্ভাবনাও নেই। তাই মমতার সম্মানেই কংগ্রেস (Congress) ভবানীপুরে প্রার্থী দিতে চায় না। অধীরবাবু এআইসিসির নেতাদের জানিয়েছেন,”মুখ্যমন্ত্রী নিজে ভোটে দাঁড়িয়েছেন। এই অবস্থায় আমরা যা ভোট পাই না কেন, আমার মনে হয় আমাদের প্রার্থী দেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই।” যদিও, এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে এআইসিসি। আর এআইসিসির তরফে এখনও এ নিয়ে কিছু বলা হয়নি।
[আরও পড়ুন: আলাপন বিতর্কের জের! অবসরের পর আমলাদের পুনর্নিয়োগ নিয়ে কড়া হচ্ছে কেন্দ্র]
কিন্তু, প্রশ্ন হচ্ছে অধীরের হঠাৎ মমতার প্রতি এত ‘সম্মান’ কেন? ভোটের আগে তো তিনিই মুখ্যমন্ত্রীকে সবরকমভাবে কোণঠাসা করার চেষ্টা করছিলেন? অনেকে মনে করছেন, এর পিছনে রয়েছে এআইসিসি নেতাদের চাপ। আসলে বাংলায় বিজেপির বিপুল চেষ্টাকে প্রতিহত করে মমতা যেভাবে বিজেপিকে রুখে দিয়েছে, তাতে জাতীয় রাজনীতিতে তাঁর গুরুত্ব এবং কদর দুটিই বেড়েছে। দিল্লির কংগ্রেস নেতারা চাইছেন, কেন্দ্রে বিজেপি (BJP) বিরোধী লড়াইয়ে মমতাকে কাছে পেতে। তাছাড়া, বাংলার বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের আগেই প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে অধীরের প্রবল মমতা বিরোধী অবস্থান পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে ২৪-এ অধীরবাবুর নিজের লোকসভা কেন্দ্রটি বাঁচানোই চ্যালেঞ্জের হয়ে দাঁড়াবে। সম্ভবত সেকারণেই বহরমপুরের সাংসদ মমতার উদ্দেশে একটি বার্তা দিয়ে রাখতে চাইছেন। তাছাড়া, ইদানিং মমতার প্রতি একাধিক ইস্যুতেই একটু নরম হতে শোনা গিয়েছে তাঁকে। রাজনৈতিক কারবারিদের প্রশ্ন, তাহলে কি আগামী লোকসভায় (Lok Sabha) নতুন কোনও সমীকরণ অপেক্ষা করে আছে? অধীরবাবু অবশ্য বলছেন, “তেমন কোনও ব্যাপার নয়। এটা কোনও নির্বাচনী আঁতাত নয়। প্রতীকী একটা সিদ্ধান্ত হতে পারে। মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রার্থী না দিলেও অন্য আসনগুলিতে আমরা লড়ব।’’