বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত: আঞ্চলিক দলের সঙ্গে জোট করেও শেষ রক্ষা হয়নি। হাতছাড়া হয়েছে একের পর রাজ্য। দখল নিয়েছে পদ্মশিবির। অভিজ্ঞতা তিক্ত। অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আগে প্রদেশ নেতাদের গোষ্ঠীকোন্দল মেটানোর পাশাপাশি ইতিবাচক রাজ্যে সংগঠনে ব্যাপক রদবদলের সিদ্ধান্ত নিল কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রতিদিনই কোনও না কোনও রাজ্যে নেতৃত্ব বদলের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী (Sonia Gandhi)। এর মধ্যে অন্যতম কর্ণাটক। রদবদলের মধ্যে রয়েছে গুজরাট ও ত্রিপুরাও। যদিও উদয়পুরের চিন্তন শিবিরের সিদ্ধান্ত মেনেই নেতৃত্বে রদবদল বলে এআইসিসির (AICC) তরফে জানান হয়েছে।
কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ, শেষে মহারাষ্ট্র। এককভাবে হোক বা জোট। কোনও সরকারই মেয়াদ শেষ করতে পারেনি। হাতছাড়া হয়েছে কংগ্রেসের। বিধায়কদের দলবদল করিয়ে সরকার ছিনিয়ে নিতে সফল হয়েছে গেরুয়া শিবির। কারণ একাধিক। প্রথমত, রাজ্যে রাজ্যে কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠীকোন্দল। দ্বিতীয়ত, জোট করে সরকারে থাকা রাজ্যে আঞ্চলিক দলের সঙ্গে মতপার্থক্য ডুবিয়েছে কংগ্রেসকে। ফসল ঘরে তুলেছে বিজেপি। অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার তাই প্রথম থেকেই সতর্ক হয়ে পদক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত হাইকম্যান্ডের।
[আরও পড়ুন: আগামী বছরই জনসংখ্যার নিরিখে চিনকে টপকে যাবে ভারত, দাবি রাষ্ট্রসংঘের রিপোর্টে]
চলতি বছরের শেষে বা আগামী বছরের প্রথমে যে’কটি রাজ্যে ভোট আছে, সেই রাজ্যগুলিতে সংগঠন শক্ত জমির ওপর দাঁড় করাতে মরিয়া সোনিয়া ও রাহুল গান্ধীরা। যেমন কর্ণাটকে গোষ্ঠীকোন্দল মেটাতে রাজ্যের দুই হেভিওয়েট নেতা প্রদেশ সভাপতি ডিকে শিবকুমার ও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার সঙ্গে দফায় বৈঠক করেন রাহুল (Rahul Gandhi) ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী (Priyanka Gandhi)। দিল্লিতে একটি বৈঠকে সোনিয়া নিজেই হাজির থেকে কোন্দল মেটাতে উদ্যোগী হন। দু’পক্ষকে সন্তুষ্ট করতে প্রদেশের সংগঠনেও ব্যাপক রদবদল করা হচ্ছে। আবার পাঁচজন এআইসিসি সম্পাদককে কর্ণাটকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার কর্ণাটকে দলের আর্থিক দায়িত্বে নতুন দু’জনকে এনেছেন সোনিয়া। কয়েকদিন আগেই রাজ্যে তৈরি করা হয়েছে ‘ওয়ার রুম’। দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে শশীকান্ত সেনথিলকে। বিধানসভা ভোটের চিন্তাভাবনা করে প্রতিদিনকার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড দেখাশোনার জন্য গঠন করা হয়েছে একটি পৃথক কমিটি।
শুধু কর্ণাটক নয়। গুজরাটেও দলে রদবদলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সোনিয়া গান্ধী। পাটিদার নেতা হার্দিক প্যাটেল হাত ছেড়ে পদ্মশিবিরে নাম লিখিয়েছেন। ক্ষত মেরামত করতে পাটিদার সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্ঠা চলছে বলে জানান এআইসিসির এক সাধারণ সম্পাদক। ৭ জুলাই গুজরাট প্রদেশ কংগ্রেসে পাঁচ বিধায়ক-সহ সাতজনকে কার্যকরী সভাপতি নিয়োগ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন জিগনেশ মেবানিও। রয়েছেন পাটিদার সম্প্রদায়ের বিধায়ক হেমন্ত প্যাটেল। একই চিত্র ত্রিপুরাতেও। আগামী বছর সেখানে বিধানসভার ভোট। তার আগেই রাজ্যের প্রায় সব জেলার সভাপতি পদে রদবদল করেছে এআইসিসি (AICC)।
[আরও পড়ুন: ভাইয়ের মৃতদেহ নিয়ে রাস্তায় বসে ৮ বছরের শিশু, মর্মান্তিক ছবি মধ্যপ্রদেশে]
কেবলমাত্র এই তিন রাজ্য নয়। গোটা দেশেই নতুন নেতৃত্ব সামনে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় চিন্তন শিবিরে। মোদি সরকার ও বিজেপির বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে এআইসিসি (AICC) সূত্রে খবর। সেইসঙ্গে আঞ্চলিক দলের নেতৃত্বের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চলতে প্রদেশ নেতৃত্বগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দলে আরও রদবদল হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন সাংসদ রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা।