শুভঙ্কর বসু: দিনভর উষ্ণ গরম জল। অন্তত ৩০ মিনিট যোগ আসন ও প্রাণায়াম। খাদ্যাভ্যাসে হলুদ, জিরে, রসুন, ধনিয়া ও গোল মরিচের মত মশলার ব্যবহার। আর দিনে অন্তত দুবার তুলসী কারা এবং হলদি দুধ সেবন। করোনা নিয়ন্ত্রণে এবার সুপ্রাচীন ভারতীয় আয়ুর্বেদ শাস্ত্রেই ভরসা রাখল কলকাতা হাইকোর্ট। কেন্দ্রীয় সরকারের আয়ুশ প্রোটোকলকে মান্যতা দিয়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এমনই দাওয়াই দিয়েছে হাইকোর্ট।
করোনা নামক মারণ ভাইরাসে কাবু গোটা বিশ্ব। প্রতিনিয়ত চরিত্র বদলাচ্ছে ভয়ংকরতম এই ভাইরাস। কোন পথে এর চিকিৎসা সম্ভব তা এখনও ঠাওরে ওঠা যাচ্ছে না। উপায় খুঁজতে প্রতিনিয়ত ঘোল খাচ্ছে আধুনিক চিকিৎসা শাস্ত্র। এই পরিস্থিতিতে সুপ্রাচীন ভারতীয় আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের বিভিন্ন সামগ্রীর প্রত্যহ ব্যবহারের মাধ্যমেই নিজের শরীরকে ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব বলেই মনে করছে হাইকোর্ট। কিন্তু কোন ঘটনা প্রসঙ্গে হাইকোর্টের এমন দাওয়াই?
[আরও পড়ুন: ২০২০-র ২০ মে, পাশাপাশি তিন বিশে ধ্বংসের সর্বকালীন রেকর্ড গড়ল তিলোতমা]
করোনার প্রকোপ বাড়তেই রাজ্যের চাইল্ড কেয়ার হোমগুলিতে ছোঁয়াচ এড়াতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মতো স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করেছিল হাই কোর্ট। এরপর হোমের শিশু ও আবাসিকদের সুরক্ষায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানতে রাজ্যের কাছে রিপোর্ট তলব করেছিল ডিভিশন বেঞ্চ। পাশাপাশি সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিটি জেলা আদালতের প্রধান বিচারক, জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ড, চাইল্ড ওয়েল ফেয়ার কমিটি ও হোম সুপারদের কাছ থেকেও রিপোর্ট চেয়ে পাঠায় বেঞ্চ। এছাড়াও এই মামলার সূত্রেই রাজ্যের বিভিন্ন ক্যাম্পে আটকে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের শিশুদের স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি জানতে চায় বিচারপতি সৌমেন সেন ও বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডনের ডিভিশন বেঞ্চ। রিপোর্টে রাজ্য মহিলা ও শিশু কল্যাণ দপ্তরের তরফে জানানো হয়, গোটা রাজ্যে বিভিন্ন ক্যাম্পে আপাতত মোট ৩০৫২ জন শিশু রয়েছে। ক্যাম্পগুলিতে শিশুদের পর্যাপ্ত খাবার, চিকিৎসা-সহ যাবতীয় ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কিন্তু রিপোর্টে বর্তমানে ওই শিশুদের শারীরিক পরিস্থিতি কেমন রয়েছে তা জানানো হয়নি। কোনও শিশুর শরীরে জ্বর সর্দি কাশির মতো উপসর্গ রয়েছে কি না তা উল্লেখ করা হয়নি রিপোর্টে। এর প্রেক্ষিতে ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যের প্রতিটি জেলার শাসককে সংশ্লিষ্ট জেলার পরিযায়ী শ্রমিকদের শিশুদের তালিকা পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছে।
পাশাপাশি রাজ্য মহিলা ও শিশু কল্যাণ দপ্তর এবং রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরকে শিশুদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এই প্রসঙ্গেই করোনা প্রতিরোধে দেহের রোগ ক্ষমতা বৃদ্ধি বা ইমিউনিটি বুস্টার হিসেবে আয়ুশ প্রোটোকল অনুযায়ী প্রাচীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের বিধির নিদান দিয়েছে হাইকোর্ট। ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, করোনা নিয়ন্ত্রণে এখনও যেহেতু কোনও ওষুধ নেই, সে ক্ষেত্রে ব্যাধি প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলাই করোনা মোকাবিলার শ্রেষ্ঠ উপায়। এই পরিস্থিতিতে তাই প্রতিদিন উষ্ণ জল সেবনের পাশাপাশি যোগাসন ও প্রাণায়ম করতে হবে। রান্নায় রসুন, হলুদ, জিরে, ধনিয়ার মতো মশলার ব্যবহার করতে হবে। প্রতিদিন সকালে চবনপ্রাস খেতে হবে। দিনে অন্তত দুবার তুলসী, দারুচিনি, গোলমরিচ ও শুকনো আদা মিশ্রিত কারা বা মিশ্রণ পান করতে হবে।
এছাড়াও পান করতে হবে হলুদ মিশ্রিত দুধ। প্রতিদিন নাকে তিল, সরষে কিংবা নারকেল তেলের ব্যবহার করতে হবে। পাশাপাশি সর্দি কাশির মতো উপসর্গ থাকলে পুদিনা পাতা ও জোয়ান মিশ্রিত ফুটন্ত জলের ভেপার ইনহেল করতে হবে। গলা ব্যাথার মতো উপসর্গ থাকলে লবঙ্গ পাউডারের সঙ্গে মধু সেবন করারও নিদান দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। শুধু পরিযায়ী শিশুদের ক্ষেত্রেই নয়, সাধারণ মানুষকেও এই সমস্ত উপকরণ ব্যবহারের কথা বলেছে আদালত। এ প্রসঙ্গে ডিভিশন বেঞ্চের মন্তব্য, করোনা নামক ভাইরাস থেকে নিজেকে বাঁচাতে সকলকে এই প্রোটোকল মেনে চলতে হবে। তাহলেই রোগ প্রতিরোধ অনেকাংশে সম্ভব হবে।
আদালতের এমন রায় প্রসঙ্গে নবীন আয়ুর্বেদ চিকিৎসক সুস্মিতা বেরা বলেন, “আয়ুর্বেদ তাই প্রথম থেকেই বডি-মাইন্ড-সোল এই তিনের উন্নতির উপর জোর দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ছাড়া কোনও উপায় নেই। এবং সেটা না করতে পারলে উত্তোরোত্তর এই ভাইরাস আরও প্রকট হবে। এখন থেকেই তাই ব্যাধি প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে হবে। বাস্তবিকভাবেই তাই এমন রায় দিয়েছে হাইকোর্ট।”
The post করোনা প্রতিরোধে এবার প্রাচীন ভারতীয় আয়ুর্বেদ শাস্ত্রেই মান্যতা দিল কলকাতা হাই কোর্ট appeared first on Sangbad Pratidin.