সৌরভ মাজি, বর্ধমান: করোনা ভাইরাস। নামটা শুনলেই শিহরণ জাগে। আষ্টেপৃষ্টে ধরে সংক্রমণের ভয়। কিন্তু সেই করোনা যে কোনওদিন ফ্যাশন স্টেটমেন্টও হয়ে উঠতে পারে, কেউ কখনও ভেবেছিল? উৎসবের মরশুমে সবই সম্ভব। অন্যান্যবার পুজোয় জনপ্রিয় সিরিয়াল কিংবা সিনেমার নায়িকাদের শাড়ির কদরই বেশি থাকে। কিন্তু এবার সকলকে পিছনে ফেলে চর্চার শীর্ষে নোভেল ভাইরাস। আর তাই সে ঢুকে পড়েছে ফ্যাশনের দুনিয়াতেও। তবে এই করোনা একেবারে সুরক্ষিত। গায়ে চাপালে হাজারো ভিড়ে হয়ে উঠবেন অনন্যা, কিন্তু সংক্রমণ ছড়াবে না একবিন্দুও। হ্যাঁ, এবার তাঁতের শাড়ির ডিজাইনে স্থান পেয়েছে COVID-19। পুজোর বাজারে রীতিমতো হিট করোনা শাড়ি!
একটা সময় এই করোনাই (Coronavirus) রোজগার কেড়েছিল। এবার তাকে হাতিয়ার করেই রোজগারের দিশা দেখছেন তাঁত শিল্পীরা। বিশেষ ডিজাইনের শাড়িগুলির দামও মধ্যবিত্তের নাগালে থাকায় চাহিদাও ভাল বলে জানাচ্ছেন শিল্পী ও বিক্রেতারা। এমনকী ভিনরাজ্যের বাঙালিরও মন জয় করছে কালনার এই তাঁতের শাড়ি।
[আরও পড়ুন: ক্যানসারকে হারাতে বাদ পড়ছে স্তন, নারীত্বের স্বাদ পেতে বিক্রি বাড়ছে মাসটেকটমি ব্রায়ের]
মূলত তিন ধরনের করোনা শাড়ি তৈরি হচ্ছে পূর্ব বর্ধমানের কালনার ধাত্রীগ্রামে। তাঁত শিল্পী সুবোধ বসাক, রাজীব বসাক, পিন্টু বসাকরা এখন এই শাড়ি তৈরি করছেন বেশি সংখ্যায়। তাঁরা জানালেন, তিনরকমের শাড়ির দাম শুরু হচ্ছে ৫০০ টাকা থেকে। প্রথম ধরনের শাড়ি তৈরি করা হচ্ছে ৬০ কাউন্ট সুতো দিয়ে কেরল প্রিন্টের উপর হ্যান্ড ফেব্রিকে। দ্বিতীয় ধরনের শাড়িতে থাকছে মার্চ লাইট সুতোয় কোটা সিল্ক বা বাম্পার সিল্কের উপর বুটিকের কাজ। আর তৃতীয় ধরনের শাড়ি হচ্ছে ১০০ শতাংশ কটন দিয়ে হাতে বোনা টাঙ্গাইল শাড়ি। তার সঙ্গে থাকছে লকশা ফিতে পাড়। তিনটি রঙের বুটিক ব্যবহার করা হচ্ছে এই শাড়িতে।
এবার নিশ্চয়ই শাড়িগুলির দাম জানতে ইচ্ছা করছে! প্রথম প্রকার শাড়ির দাম একটু কম। ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। দ্বিতীয় প্রকার শাড়িগুলির দাম রাখা হয়েছে ৮০০ টাকার মধ্যে। আর তৃতীয় ধরনের শাড়ির দাম করা হয়েছে ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা।
[আরও পড়ুন: এবার পুজোয় খাদির শাড়িতে হয়ে উঠুন আরও আকর্ষণীয়, রইল টিপস]
কেন স্পেশ্যাল এই করোনা শাড়ি?
তাঁতের ডিজাইনার রাজীব বসাক জানান, এই বছরটা করোনা গ্রাস করেছে সারা বিশ্বকে। অর্থনীতিকে ভেঙে দিয়েছে। তাঁত শিল্পীরা করোনা আক্রান্ত না হলেও এর শিকার হয়েছেন। রোজগার কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তাই করোনাকে হাতিয়ার করেই পুজোর আগে করোনা শাড়ি তৈরির ভাবনা। এই ধরনের প্রতিটি শাড়িতেই রাখা হচ্ছে করোনা ভাইরাসের কাল্পনিক ছবি। সঙ্গে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে দেশ বা বিশ্বকে কীভাবে এই শাড়ি ঘরবন্দি করে রেখেছিল তারও ছবি। এছাড়া অনেক শাড়িতেই করোনা সংক্রান্ত সচেতনতার বার্তাও থাকছে। ইতিমধ্যে কলকাতা, নদিয়ার শান্তিপুর ও বর্ধমান শহরের তাঁতের পাইকারি বাজারে তা বিক্রি করা হচ্ছে। রাজীববাবুরা জানালেন, এই হাটে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে করোনা শাড়ির। তাহলে আর দেরি কেন, আপনিও পছন্দসই একটি করোনা শাড়ি কিনে অন্তত ২০২০-র স্মৃতি হিসেবে রেখে দিতেই পারেন।