shono
Advertisement

কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে কাঁটাচামচ দিয়ে চপ-মুড়ি ভক্ষণ বিদেশিদের

জীবনে এমন জিনিস চেখে কেন, চোখেও দেখেননি তাঁরা। The post কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে কাঁটাচামচ দিয়ে চপ-মুড়ি ভক্ষণ বিদেশিদের appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 11:22 AM Apr 17, 2020Updated: 11:32 AM Apr 17, 2020

তরুণকান্তি দাস: মুড়ি। মজা করে বলা হয় ‘ফ্রায়েড রাইস’। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, মায়ানমার বা ইন্দোনেশিয়ায় তারে কী কয়? তা কি কাঁটাচামচ দিয়ে খাওয়া যায়?

Advertisement

সান্ধ্য আড্ডায় বেগুনি, চপ, চানাচুর এবং চা সহযোগে বাঙালির প্রিয় খাদ্য মুড়ি। এমনকী, ঘুগনিও। কিন্তু তা নিয়েই একেবারে নাজেহাল দশা করোনার মুক্তিযুদ্ধে। হবে না? যাঁদের তা আদর করে পাতে দেওয়া হচ্ছে তাঁরা তো জীবনে এমন জিনিস চেখে কেন, চোখেও দেখেননি। তায় আবার তাঁদের কেউ না বোঝেন বাংলা, না হিন্দি। ইংরেজিতেও বিশেষ সড়গড় এমনটাও নয়। সব যে ভিনদেশি। দিল্লিতে নিজামুদ্দিনের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে দেশে ফেরার আগে কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে থাকা ভিসাধারীরা কি বোঝেন মুড়ি—মাহাত্ম্য? এ জিনিস খায় না কি মাথায় দেয়, সেটা বোঝাতেই যে প্রাণ ওষ্ঠাগত এখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী ও আধিকারিকদের। জামাতের যে সব কর্মী স্বেচ্ছায় এসে দাঁড়িয়েছেন কোয়ারেন্টাইন থাকা সংগঠন সদস্যের পাশে, তাঁরাই শেষে মুশকিল আসান করেছেন। বদলাতে হয়েছে সান্ধ্যকালীন মেনু।

[আরও পড়ুন: চাপে পড়ে সুর বদল, বাড়িতেই রমজান পালনের বার্তা বদরুদ্দিনের]

করোনা সংক্রমণ রুখতে নিজামুদ্দিন ফেরত ওই লোকগুলিকে রাখা হয়েছে রাজ্য সরকারের আতিথেয়তায় রাজারহাটের একটি কোয়ারান্টিন সেন্টারে। সেখানে বাংলা, দিল্লি, মহারাষ্ট্র, অসম, বিদেশ মিলিয়ে আছেন ৩০৩ জন। দেশের অনেকেই রয়েছেন। আছেন ভিনরাজ্যের লোকজনও। বিদেশিদের সংখ্যাটাও যে অনেক। তাঁরা ১০৮। ইন্দোনেশিয়ার ৩৩ জন। মালয়েশিয়ার ৯ জন। মায়ানমারের ২৬। থাইল্যান্ডের ২১। বাংলাদেশি ১৯। সকলেই কলকাতা বিমানবন্দর হয়ে বাড়ি দেশে ফেরার টিকিট কেটেছিলেন। এখন সেই বিমানবন্দরের অদূরে হজ হাউসে জায়গা হয়েছে তাঁদের। সরকারের তরফে সমস্ত বন্দোবস্ত করা হয়েছে। ডব্লুবিসিএস অফিসার মহম্মদ নকির তত্ত্বাবধানে তাঁরাও খুশি। কিন্তু সমস্যা ভাষার এবং খাওয়ার। একটা দেশ হলে না হয় দোভাষী নিয়ে কাজ চালানো যেত। এ যে খানচারেক দেশ। ভাষা আলাদা। চাহিদাতেও রকমফের। থাইল্যান্ড চায় চাওমিন। মায়ানমারও সেই দলে। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া যে কী চায় তা তো বোঝা দুষ্কর। কোনওক্রমে বোঝানো গিয়েছে, এই লকডাউনের বাজারে আর যাই হোক চর্ব চোষ্য লেহ্য ছাড়ুন, চাওমিন একপ্লেট মানে চাঁদ হাতে পাওয়া। বরং যা দেওয়া হচ্ছে সেটাই মুখে তুললে ভাল হয়। কিন্তু তার আগে ঘটে গিয়েছে অনেক নাটকীয় ঘটনা। ৩১ মার্চ সন্ধ্যায় হজ হাউসকে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরই এক এক করে নিজামুদ্দিন ফেরতদের এখানে রাখা হয়। রোজ স্বাস্থ্য পরীক্ষা চলছে।

এখনও একজনেরও করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসেনি। সবাই সুস্থ। সেটাই আশার। তার চেয়েও স্বস্তির কথা যে, মুড়ি নামক বস্তুটি যে খাদ্য তা বোঝানো গিয়েছে তাঁদের। জামাতের তরফে শেখ আবদুল গফফর বলেছেন, “ভাষাটা তো সমস্যা। প্রথমে বোঝানো যায়নি মুড়ি একটা খাবার। চপ, বেগুনি বা চানাচুর দিয়ে খাওয়া যায়। দু—একজন ইংরেজি জানেন সামান্য। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে বাকিদের বোঝানোর চেষ্টা করা হল। এর মধ্যে আমরাও মাঠে নামলাম। কিন্তু পরে মেনু বদলাতে হয়েছে। সপ্তাহে দিন তিনেক মুড়ি—ঘুগনি। বাকি দিনগুলোতে অন্য কিছু।” বাংলাদেশিরা অবশ্য মুড়ি—তেলেভাজায় বেশ মজে। কিন্তু অন্যরা? মহারাষ্ট্র বা দিল্লির মানুষও তো খুব একটা মুড়িপ্রিয় নন। বিদেশিরা কেউ কেউ তো প্রথম দিকে কাঁটাচামচ চেয়ে বসেছিলেন মুড়ির গ্রাস তুলতে।

তাই সবার কথা ভাবতে হয়েছে দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক মহম্মদ নকি সাহেবকে। বৃহস্পতিবার যেমন সকাল ও বিকাল লুচি, আলুর দমে মন মজেছিল বিদেশিদের। ঘুগনি এই কারণে যে, তা দিয়ে খেতে সুবিধা। অনেকক্ষণ ধরে মুড়ি চিবিয়ে চলা যে ওঁদের ক্ষেত্রে অনভ্যাসের ফোঁটা এবং তা চড়চড় করছে তা বুঝেই এই ব্যবস্থা। এবং নতুন মেনুতে খুশি ইন্দোনেশিয়ার ৭৮ বছরের টিনট এল উইন থেকে বিদেশি টিমের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য থাইল্যান্ডের ওয়ারিস খোনসান। আবার ভাঙা ইংরেজিতে এটাও তাঁরা বলতে পারছেন, নতুন একটা খাবার আবিষ্কার করলেন তাঁরা। সহজ উচ্চারণ বেরিয়ে এল গলা থেকে, “মুড়ি।”

[আরও পড়ুন: করোনার হামলায় মহা মন্দার ইঙ্গিত, ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হার নামবে ১.৯ শতাংশে]

The post কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে কাঁটাচামচ দিয়ে চপ-মুড়ি ভক্ষণ বিদেশিদের appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement