শুভঙ্কর বসু: করোনার রক্তচক্ষুর মাঝে গঙ্গাসাগর মেলা (Gangasagar Mela) বন্ধ হোক। এক জনস্বার্থ মামলার পরিপ্রেক্ষিতে মেলা নিয়ে রাজ্য সরকারের মতামত জানতে চেয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট (Calcutta HC)। বৃহস্পতিবার সেই সংক্রান্ত শুনানিতে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (AG) সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় জানালেন, কোভিড পরিস্থিতির দাপটে বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। সেসব মেনেই গঙ্গাসাগর মেলা হোক, এটাই চায় রাজ্য। সাগর এলাকায় অধিকাংশ বাসিন্দার টিকাকরণ (Vaccination)হয়ে গিয়েছে। ফলে মেলায় যোগদান নিরাপদ বলেই মনে করা হচ্ছে। এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট জেনারেল টিকাকরণের হার নিয়ে পরিসংখ্যানও হাই কোর্টে পেশ করেছেন।
গত সোমবার হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে ওই চিকিৎসক গঙ্গাসাগর মেলা বন্ধ করার আবেদন জানান। তাঁর দাবি, রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়েছিল, এই মেলায় বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ একত্রিত হয়ে থাকেন। ৩০ লক্ষের বেশি জনসমাগম হয়ে থাকে। ফলে এমন জনসমুদ্রে দূরত্ববিধি-সহ অন্যান্য কোভিড (COVID-19) প্রোটোকল মানা সম্ভব নয়। এবারও একই পরিমাণ ভিড় হলে আরও বাড়বে গোষ্ঠী সংক্রমণের আশঙ্কা। ফলে ভেঙে পড়তে পারে চিকিৎসা পরিষেবা। তাঁর আবেদনের ভিত্তিতে বুধবার বিচারপতি মেলা আয়োজন নিয়ে রাজ্যের অবস্থান জানতে চান। রাজ্যের তরফে আইনজীবীকে প্রশ্ন করেন, মেলা আয়োজনের জন্য কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে? কত ভিড় হবে?
[আরও পড়ুন: আগামিকাল থেকে বন্ধ পার্ক স্ট্রিট উড়ালপুল, জেনে নিন কোন পথে চলবে গাড়ি]
বৃহস্পতিবার এ নিয়ে শুনানি ছিল। প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে মামলাটির শুনানি ছিল। সেখানে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কয়েকটি বিধিনিষেধের তালিকা পেশ করেন। তাঁর সওয়াল, গত বছরও এত বিধিনিষেধের মাঝে গঙ্গাসাগর মেলা বন্ধ হয়নি, তা ভালভাবেই চলেছিল। এবারও সেই বিধিনিষেধ জারি থাকছে। জোর দেওয়া হচ্ছে অনলাইনে পুজো দেওয়া, প্রসাদ বিলিতে। এছাড়া দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ৭০ শতাংশের বেশি মানুষের টিকাকরণ হয়ে গিয়েছে। তাই ঝুঁকির কিছু নেই বলেই মনে করছে রাজ্য সরকার।
[আরও পড়ুন: কোভিড আক্রান্ত রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তরের দুই শীর্ষ অধিকর্তা, সংক্রমিত জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের ডিরেক্টরও]
মেলার মধ্যে কীভাবে স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখা হবে, এ নিয়ে কী পদক্ষেপ নিয়েছে রাজ্য সরকার? তাও এদিন আদালতে জানিয়েছেন AG। তিনি বলেন, ই-দর্শন,ই-স্নানের ব্যবস্থা থাকছে। পুণ্যস্নানের সময়ে লাইভ স্ট্রিমিংয়ে অনেকে বাড়ি থেকেই অংশ নিতে পারেন। এছাড়া যাঁরা মেলায় যাচ্ছেন, তাঁদের সকলকে একসঙ্গে স্নানে নামতে দেওয়া হবে না। দফায় দফায় কয়েকটি গ্রুপে ভেঙে স্নানের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। এজি-র বক্তব্যের পর পালটা সওয়াল করেন মামলাকারীরা। তাঁদের প্রশ্ন, ”যদি কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব স্থগিত হতে পারে, তাহলে এই মেলা বন্ধ নয় কেন? ”। দু’পক্ষের সওয়াল-জবাবের পর আজ গঙ্গাসাগর মেলার ভবিষ্যৎ নিয়ে রায়দান স্থগিত রাখেন বিচারপতিরা।