রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: গণলাইন সঠিকভাবে কার্যকর হচ্ছে না। গণলাইন কার্যকর করার জন্য পার্টির সমস্ত স্তরের কাজের পদ্ধতির ব্যাপক পরিবর্তন প্রয়োজন বলে মনে করছে বঙ্গ সিপিএম (CPIM)। জনগণের সঙ্গে সংযোগ রক্ষায় ত্রুটি রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। দলের আভ্যন্তরীণ সমীক্ষায় পার্টি চিঠিতে এমনই উদ্বেগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
রাজ্যে ক্ষমতা হারানোর পর জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ কমেছে পার্টি কমরেডদের। জনগণের বড় অংশই মুখ ফিরিয়ে রয়েছে। লোকসভা নির্বাচনের আগে সেই ত্রুটির কথা মেনে নিল আলিমুদ্দিন। পার্টি চিঠির পাঁচ নম্বর পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, গণলাইন কার্যকর করার জন্য পার্টির সমস্ত স্তরের কাজের পদ্ধতির ব্যাপক পরিবর্তন প্রয়োজন। পার্টি ও গণফ্রন্টের দপ্তরে প্রয়োজন মতো বসতে হবে, আলোচনা করতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। তার পর জনগণের বিভিন্ন অংশের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে হবে। জনগণের সঙ্গে সহজ-সরলভাবে সম্পর্ক স্থাপনের কথা ও জনগণের থেকে শেখার মানসিকতা থাকতে হবে বলে পার্টি সদস্যদের উদ্দেশে বলা হয়েছে চিঠিতে।
[আরও পড়ুন: অরণ্যভবন তল্লাশিতে ইডির হাতে বালুর বিপুল সম্পত্তি! উদ্ধার আরও ১০ কোটির বিমার নথি]
একইসঙ্গে পার্টি সদস্যদের ত্রুটি সংশোধনের কথা বলা হয়েছে। নিচুস্তরে সাংগঠনিক ব্যর্থতা রয়েছে, মানুষকে সংগঠিত করার কাজেও সেভাবে সাফল্য আসেনি বলে বিভিন্ন জেলা থেকে আলোচনায় এমনই রিপোর্ট উঠে এসেছিল গত নভেম্বরে সিপিএম রাজ্য কমিটির বর্ধিত অধিবেশনেও। রাজ্য থেকে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর পার্টির রক্তক্ষরণ এখনও বন্ধ হয়নি। বিজেপি প্রধান বিরোধীর জায়গা দখল করে নিয়েছে। বামের ভোট রামে চলে যাচ্ছে। কিন্তু কেন ভোট বাক্সে আশানুরূপ সাফল্য আসছে না? কেন মানুষের আস্থা সেভাবে অর্জন করা যাচ্ছে না? উনিশের লোকসভা (Lok Sabha Election) থেকে একুশের বিধানসভায় (Assembly Elections) পার্টি শূন্য হয়ে গিয়েছে। এইসব প্রশ্নের উত্তর ও সমাধানের পত হাতড়ে বেড়াতে হচ্ছে সিপিএম নেতাদের।
[আরও পড়ুন: নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় পার্থ-ঘনিষ্ঠ কাউন্সিলরকে তলব ইডির, আজই হাজিরার নির্দেশ]
রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, ৩৪ বছরের বাম সরকারের (Left Front) নেতিবাচক দিকগুলি মানুষ এখনও ভুলতে পারছে না, পাশাপাশি তৃণমূল সরকারের সাফল্য, জনপ্রিয় সামাজিক প্রকল্পের উপর মানুষ আস্থা রেখেছে। ফলে মানুষের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে পার্টি। আর একারণেই পার্টির গণলাইন সঠিকভাবে কার্যকর করার কথা বলা হল পার্টি চিঠিতে। পার্টি নেতাদের স্থানীয় ইস্যু চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে পার্টি চিঠিতে। কারণ, নিচুতলায় স্থানীয় ইস্যু নিয়ে আন্দোলন করলে তবেই জনগণের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয়। কিন্তু সেক্ষেত্রে দুর্বলতা রয়েছে। একই সঙ্গে বলা হয়েছে, দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষেত্রগুলির প্রতি আরও বেশি নজর ও যত্নবান হওয়ার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। পার্টির একাংশ মনে করছে, চব্বিশের লোকসভা ভোট দরজায় কড়া নাড়ছে। তার আগে ত্রুটি সংশোধন কতটা কার্যকরী হবে তা নিয়ে সন্দেহ থাকছে।