সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রীর মসনদেই শুধু দশটা বছর নয়, ৯২ বছরের জীবতকালে অজস্র গুরুদায়িত্ব সামলেছেন মনমোহন সিং। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন অতি সাদাসিধে জীবনের মালিক। মাথার আকাশি নীল দস্তার হোক, বা প্রেমের জীবনেও ছিল তার-ই ছাপ। সাড়ে ছয় দশকের দাম্পত্য জীবনেও তারই ছাপ পড়েছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে গুরশরণ কৌরের মাথায় তেমনই নানা রঙিন কিংবা ধূসর স্মৃতির ভিড়।
গুরশরণ কৌরের জন্মও অবিভক্ত ভারতের বর্তমান পাকিস্তানে। দেশভাগের সময় তাঁর পরিবার ভারতে পালিয়ে চলে আসে। কেমব্রিজ ফেরত মেধাবী ছাত্র মনমোহনের পাণিপ্রার্থনা করতে কৌরের পরিবারই প্রথম মনমোহনের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে। আসলে মনমোহনকে দেখে এবং তাঁর মেধা আর গুণপনায় গুরশরণ তাঁকে পছন্দ করে ফেলেন। অন্যদিকে মনমোহনও শিক্ষিত স্কুলশিক্ষিকা কৌরের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েন।
তবে সম্বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর দুজনে একে অপরের সঙ্গে দেখাও করেছিলেন, যা সেই সময়ে নিরিখে অনেকটাই সাহসের বিষয়। সাদা সালোয়ার-কুর্তা পরে মনমোহনের সঙ্গে দেখা করেছিলেন গুরশরণ। পরিচয়ের পরেই দুজনে বাড়িতে জানিয়ে দেন, তাঁরা বিয়েতে রাজি। হবু স্ত্রীর সঙ্গে আলাপচারিতা জমাতে মনমোহন তাঁকে একদিন প্রাতরাশের নিমন্ত্রণ করেছিলেন এবং গুরশরণকে ডিম-টোস্ট খাইয়েছিলেন। তাঁদের বিয়ে হয়েছিল ১৯৫৮ সালে।
ইতিহাসের অধ্যাপিকা গুরশরণকে খুব একটা প্রধানমন্ত্রী মনমোহনের সঙ্গে দেখা যেত না। খুব ঘনিষ্ঠ কারও আমন্ত্রণ কিংবা সরকারি বাধ্যতামূলক অনুষ্ঠান ছাড়া ক্যামেরার সামনে দেখা যায়নি তাঁদের। কিন্তু, তিনিই ছিলেন মনমোহনের নেপথ্য শক্তি। যিনি সর্বদা পরামর্শ ও ভালোবাসা দিয়ে স্বামীকে শক্তি জুগিয়ে গিয়েছেন। মনমোহন নিজেও তাঁর জীবনে স্ত্রীর ভূমিকা নিয়ে একবার বলেছিলেন, “আমি দুজনের কাছ থেকে পরামর্শে খুবই উপকৃত হয়েছি। একজন সোনিয়া গান্ধী, অন্যজন আমার স্ত্রী। দুজনেই বিভিন্ন বিষয়ে তৎপর ও দক্ষ।”
সিং সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার পর তাঁরা দিল্লিতে ছিমছাম জীবন কাটাতেন। ২০১৯ সালে মনমোহনের ওপেন হার্ট সার্জারির সময়ে কৌরকে গুরুদ্বারে বসে ভজন-প্রার্থনা করতে দেখা গিয়েছে। হাসপাতালে থাকাকালীন স্বামীর জন্য রোজ দুপুরে খাবার রান্না করে গুছিয়ে নিয়ে যেতেন গুরশরণ। কিন্তু, এবার সেই সুযোগ না দিয়ে দুজনের ৬৬ বছরের দাম্পত্য ছিন্ন হল।