বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত: আরামকেদারায় শুয়ে বাকতাল্লা অনেক হয়েছে কমরেড! এবার পথে আসুন।
অবশেষে জেলা নেতৃত্বের উদ্দেশে সোজাসাপটা ফরমান পাঠাল আলিমুদ্দিন। রাজ্যে ক্ষমতায় থাকাকালীন দলীয় সংগঠনে মেদ জমার ভুরি ভুরি অভিযোগ উঠেছিল সিপিএমের (CPM) অন্দর মহলে। রাইটার্স বিল্ডিং থেকে উৎখাত হওয়ার পর দশক ঘুরতে চললেও সেই মেদ কমেনি শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষের দলের। বরং ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হওয়া সংগঠনে পার্টি অফিসে বসে মার্কস-লেনিন নিয়ে তত্ত্বের ফুলঝুরি আওড়ানোর রাজনীতির আরও যেন রমরমা হয়েছে। এসব দেখে ক্ষুব্ধ সিপিএম শীর্ষ নেতৃত্ব। এবার তাই শীর্ষস্তর থেকে নিচুতলার সাফ নির্দেশ পাঠানো হল, পথে নেমে আন্দোলন করতে হবে।
[আরও পড়ুন: লকডাউনেই বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষা, গন্তব্যে পৌঁছতে নাজেহাল পড়ুয়ারা]
আলিমুদ্দিন স্ট্রিট সূত্রে খবর, দলের উপরতলার কর্তারা জেলা নেতাদের যা বলতে চেয়েছেন, তা সহজ ভাষায় এরকমই, ‘পার্টি অফিসের চেয়ার দখল করে মার্কস-লেনিন নিয়ে তত্ত্বের ফুলঝুরি অনেক শুনলাম। ঘরে বসে মহামারী চর্চাও অনেক হল। এবার পথে নেমে পড়ুন। নয়তো চেয়ার ছেড়ে মানে মানে কেটে পড়ুন।’ সিপিএম রাজ্য নেতৃত্বের স্পষ্ট ফরমান, এখন থেকে সংগঠনে কোনও দায়সারা মনোভাব আর সহ্য করা হবে না। প্রত্যেক পদাধিকারী তথা নেতার মূল্যায়ণ করা হবে। সেই পরীক্ষায় পাশ করতে না পারলে নেতা হওয়ার স্বপ্ন ত্যাগ করতে হবে। স্রেফ পার্টি দরদী হয়েই কাটাতে হবে বাকি জীবনটা। কঠিন এই ফতোয়া পার্টি অফিসগুলোয় পৌঁছতেই থরহরিকম্প দশা জেলার নেতাদের।
ভোট প্রাপ্তি নেমে এসেছে ৭ শতাংশে। লোকসভায় সদস্য সংখ্যা শূন্য। রাজ্যসভায় সবেধন নীলমনি বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। বিধানসভায় ছিল ২৬। মেয়াদ শেষে সংখ্যাটা আরও কমেছে। গোটা সাংগঠনিক কাঠামোর প্রতিটি স্তরেই রক্তক্ষরণ অব্যাহত। কমছে সদস্য সংখ্যাও। যে ছাত্র-যুবরা পার্টির ভবিষ্যত, তাঁদের এগিয়ে দিতে অনীহা নেতৃত্বের। কলেবরে ছোট হচ্ছে পার্টি। ফলে প্রয়োজন নেতৃত্বের কাজের মূল্যায়ন প্রয়োজন বলে মনে করছে আলিমুদ্দিন। শীর্ষ কমরেডদের যুক্তি, গত বছর পুনর্নবীকরণের সময়ে রাজ্যে পার্টির শাখার সংখ্যা ছিল ১৭,৪৭১। বর্তমানে কমে হয়েছে ১৫,৪২৫। পার্টি সদস্য সংখ্যা কমে যাওয়ায় শাখার সংখ্যাও হ্রাস পেয়েছে। একই হারে কমে গিয়েছে এরিয়া কমিটিও। জেলা কমিটির মোট সদস্য সংখ্যা বর্তমানে ১২৬১। এরিয়া কমিটির সদস্য সংখ্যা ১০,৩২৮। এই সংখ্যাকে যদি কাজে আনা যায়, পার্টির গতি নিশ্চিতভাবে বৃদ্ধি পাবে বলেই ধারণা বিমান বসু-সূর্যকান্ত মিশ্রদের। তবে পার্টির মধ্যবর্তী এই নেতৃত্বকে সচল ও সক্রিয় করার দায়িত্ব রাজ্য কমিটিরই।
[আরও পড়ুন: ‘NEET-JEE নিয়ে মোদি সরকারের সিদ্ধান্তে আপনি চুপ কেন?’, ধনকড়কে খোঁচা নুসরতের]
সামনে পুরসভা ও বিধানসভা ভোট। পার্টির প্রাপ্ত ভোট বাড়ানোই মূল লক্ষ্য। নইলে বিধানসভাতেও অপ্রাসঙ্গিক হবে পার্টি। এই সব ভেবে মধ্যবর্তী নেতৃত্বকে সক্রিয় করার উদ্যোগ নিলেন আলিমুদ্দিনের ম্যানেজাররা। এখনই সক্রিয় না হলে নেতাদের উপর নেমে আসবে শাস্তির খাঁড়া। জেলা কমিটির সদস্যসহ নেতৃত্বের কমরেডদের কাজের মূল্যায়ণ প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। এই মূল্যায়ন প্রক্রিয়া শুধু জেলা কমিটির সদস্যদের নয়, এরিয়া কমিটি সদস্যদের ক্ষেত্রেও গ্রহণ করা প্রয়োজন। জানতে চাওয়া হয়েছে, নিচের তলায় গিয়ে নেতৃত্ব কতখানি সাংগঠনিক কাজ করছেন এটা মূল্যায়ণের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য জানাচ্ছেন, “করোনাকে ঢাল করে অনেকে নেতাই বাড়িতে মুখ লুখিয়েছেন বলে আলিমুদ্দিনের কাছে খবর।” তাই এই কঠোর পদক্ষেপ।”