রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়: শাকিব আল হাসান বনাম বাংলাদেশ সরকারের সংঘাত তো কমছেই না, বরং যত দিন যাচ্ছে গণ্ডগোলের মাত্রা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। কখনও পদ্মাপারের প্রখ্যাত অলরাউন্ডারের দেশের মাটিতে শেষ টেস্ট খেলার বাসনা ধূলিসাৎ করে দেওয়া হচ্ছে। তাঁকে শেষ মুহূর্তে জানানো হচ্ছে, আপনি দেশে ফিরবেন না। বিদায়ী টেস্টে নিরাপত্তা দেওয়া আপনাকে সম্ভব নয়। কখনও আবার বাংলাদেশে তাঁর সমস্ত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দেওয়া হচ্ছে!
দ্বিতীয়টা ঘটল এবার। এবং তার প্রতিবাদে শাকিব আল হাসানও যুদ্ধং দেহি মনোভাব নিয়ে ফেললেন। এখানে বলে রাখা যাক, বুধবার থেকে শুরু হতে চলা বাংলাদেশ বনাম আফগানিস্তান সিরিজে খেলার কথা ছিল শাকিবের। পরবর্তীতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজেও খেলার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে সমস্ত হিসেব আবার ঘুরে গিয়েছে। আফগানিস্তান সিরিজে যে তিনি খেলবেন না, জানিয়ে দিয়েছেন শাকিব। পরিস্থিতি যা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজেও তিনি ঘোর অনিশ্চিত। শুধু তাই নয়, আগামী বছর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও শাকিব খেলবেন কিনা এখনই নিশ্চিত করে লেখা যাচ্ছে না। যে টুর্নামেন্ট তাঁর ওয়ানডে অবসরের সম্ভাব্য মঞ্চ ছিল। মাসখানেক আগে ভারতে খেলতে এসে তিনি তেমনই বলে গিয়েছিলেন।
কিন্তু কী এমন হল যে সব কিছু আবার ওলটপালট হয়ে গেল? সূত্রের খবর, শাকিবের ক্ষোভের মূল কারণ বাংলাদেশ সরকারের তাঁর প্রতি আচরণ। দেশে তাঁর সমস্ত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দেওয়া। যেখানে কোটি কোটি টাকা গচ্ছিত রয়েছে পদ্মাপার অলরাউন্ডারের। বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ সরকারের তার কৃতী ক্রিকেট সন্তানের প্রতি এমন চরমপন্থী অবস্থানের কারণ একটাই। তিনি দেশ থেকে 'বিতাড়িত' শেখ হাসিনার দল আওয়ামি লিগের সাংসদ ছিলেন। শাকিব ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য হল, বাংলাদেশ অলরাউন্ডার সাংসদ হয়েছিলেন হাসিনার সরকারের পতনের মাত্র সাত মাস আগে। তাই বাংলাদেশের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে শাকিবের যে টাকা গচ্ছিত রয়েছে তা মোটেও সাংসদ পদের প্রভাব খাটিয়ে উপার্জিত নয়। পুরোটাই তাঁর ক্রিকেট খেলে উপার্জন করা। যে অর্থের উপরে শাকিব বাদে আর কারোওরই কোনও অধিকার নেই। তাহলে কোন যুক্তিতে তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়? এটাও বলা হল, দেশের মাটিতে শেষ টেস্ট খেলতে চেয়ে কম অপমানিত হননি শাকিব। কিন্তু তার পরেও তিনি সদর্থক কিছুর আশায় বসেছিলেন।
অবসর ঘোষণার পরে তাঁর কাছে মধ্যপ্রাচ্যের দুটো দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার প্রস্তাব ছিল। কিন্তু শাকিব পত্রপাঠ সে প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। জানিয়ে দেন, বাংলাদেশ বাদে অন্য কোনও দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার কথা তিনি ভাবতেই পারেন না। শাকিব ঘনিষ্ঠরা বলছিলেন, সেই দায়বদ্ধতার কী অসামান্য প্রতিদানই না পেলেন দেশের সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার! এঁদের মনে হচ্ছে, শাকিব ক্ষুব্ধ হয়ে আফগানিস্তান সিরিজ থেকে যেভাবে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন তা মোটেও অন্যায় নয়। মানুষের সহ্যের একটা সীমা আছে। এবং খবর যা, অচলাবস্থা যদি এরকমই থাকে, যদি শাকিবের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এভাবেই ফ্রিজ করে রেখে দেওয়া হয় তাহলে আসন্ন সিরিজগুলোতেও তাঁকে দেশের হয়ে খেলতে দেখা যাবে না। আর সংঘাতের সুদূরপ্রসারী প্রভাব যদি আগামী বছরের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে গিয়েও পড়ে তাহলেও শাকিবের স্টান্স বদলাবে না। তাতে যদি টেস্টের মতো ওয়ানডে থেকেও অকাল অবসর নিতে হয়, হোক।