বক্তা যিনি, তাঁকে গত নিলাম থেকে ২৩.৭৫ কোটি টাকা দিয়ে কিনেছে কেকেআর। সেই ভেঙ্কটেশ আইয়ার দিন কয়েক আগে শহরে এসেছিলেন 'ট্রেলরেজার্স ৩.০ উপলক্ষ্যে। এবং সেই অনুষ্ঠানে এসে 'সংবাদ প্রতিদিন'-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে যা যা বলেছেন নাইট সহ-অধিনায়ক, অবিকল তুলে দেওয়া হল। শুনলেন রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়।

প্রশ্ন: ভেঙ্কটেশ, নিলামের দিনে ফিরে যাচ্ছি। আরসিবির সঙ্গে প্রবল যুদ্ধ শেষে কেকেআর যখন আপনাকে বিশাল ২৩.৭৫ কোটি টাকা দিয়ে তুলে নিল, ভেতরে ভেতরে কী চলছিল আপনার?
ভেঙ্কটেশ: আমি সে সময় মধ্যপ্রদেশ সতীর্থদের সঙ্গে ছিলাম। রজত (পাতিদার) আর আভেশের (খান) সঙ্গে বসে নিলাম দেখছিলাম। ভালো লাগছিল দেখে যে, কেকেআর আমার জন্য নিলামে এতটা যাচ্ছে। একই সঙ্গে বুঝেছিলাম, কেকেআর আমার উপর কতটা ভরসা করে। স্পেশাল দিন ছিল বলতে পারেন।
প্রশ্ন: শুনেছি, নিলামের পর আপনার মা নাকি বলেছিলেন যে, বিপুল অর্থের সঙ্গে বিশাল দায়িত্বও আসে। সেদিন পরিবারের প্রতিক্রিয়াটা একটু বলবেন?
ভেঙ্কটেশ: অসম্ভব খুশি হয়েছিল সবাই। সম্প্রতি আমার বিয়ে হয়েছে। আমার স্ত্রীও অত্যন্ত খুশি হয়েছিল। বলতে পারেন, লেডি লাক হ্যাজ ওয়ার্কড ফর মি (হাসি)। আসলে জীবনে মাঝে মাঝে পরিবারকে আনন্দ দেওয়ার সুযোগ পাওয়া যায়। সেই আনন্দের জোগান দিতে পেরে ভালো লেগেছিল। আমার মা বলেছিলেন, দিনটা তুমি উপভোগ করো। কিন্তু মনে রেখো, সৈয়দ মুস্তাক আলি টি-টোয়েন্টি চলছে। সেখানে তোমাকে অবদান রাখতে হবে। আর বলেছিলেন যে, কেকেআর তোমার উপর এতটা ভরসা দেখিয়েছে। তার প্রতিদান দিও।
প্রশ্ন: একটা কথা বলুন। আইপিএলে বড় অঙ্কের সঙ্গে বড় চাপও আসে। গতবার সবাই দেখেছে, মিচেল স্টার্কের সঙ্গে কী হয়েছিল। প্রায় পঁচিশ কোটি টাকা দিয়ে স্টার্ককে নিলাম থেকে নিয়েছিল কেকেআর। কিন্তু আম সমর্থক থেকে সাংবাদিক, প্রতি পদে অস্ট্রেলীয় পেসারকে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর দাম কতটা। তাঁর বল পিছু দামের হিসেবও বার করে ফেলা হয়েছিল। এবার কিন্তু আপনাকে নিয়ে এক জিনিস হবে। আপনি তৈরি?
ভেঙ্কটেশ: দেখুন, এর থেকে তো পালিয়ে যেতে পারব না। ইট ইজ হোয়াট ইট ইজ। যদি বলি কোনও চাপ থাকবে না, ভুল বলা হবে। চাপ থাকবে। আর সেই চাপ শুধুমাত্র প্রাইস ট্যাগের নয়। আইপিএলে আরও দশ রকমের চাপ থাকে। কিন্তু একবার আইপিএল শুরু হয়ে গেলে আমি ঠিক সে সমস্ত কাজই করব, যা কুড়ি লক্ষের প্লেয়ার থাকাকালীন করতাম। সেই কাজটা কী? না, টিমে অবদান রাখা। টিমের জন্য একশো দশ শতাংশ দেওয়া। টিমের যা যা প্রয়োজন, তার জন্য সর্বাত্মক ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়া। সেটা তো বদলাবে না। এ সমস্ত আমি আগেও করতাম, আজ ২৩.৭৫ কোটির প্লেয়ার হওয়ার পরেও করব। চাপ থাকবে, জানি। কিন্তু সেই চাপকে শুষে নেওয়ার সুযোগও আমার সামনে থাকবে।
প্রশ্ন: কিন্তু মনে হয় না, নিলামে প্রাইস ট্যাগের ভিত্তিতে প্লেয়ারের গুরুত্ব বা মূল্য বিচার করা বন্ধ হওয়া দরকার?
ভেঙ্কটেশ: এটুকু বলতে পারি, প্লেয়ার বলে না আমাকে অমুক দামে কেনো। এটা হওয়াটা ঠিকও নয়। আসলে ভারতে কী হয় জানেন? লোকে ভাবে যে, তারা নিজেরা টাকা দিচ্ছে (হাসি)। মুশকিল হল, এটা থামানো যাবে না। সম্ভব নয়। তার চেয়ে ভালো হল, এসবকে সম্পূর্ণ ইগনোর করা। আমল না দেওয়া। মনটাকে রাখা উচিত নিজের কাজে। যা তোমার হাতে রয়েছে, তার উপর। আর সেটা কী? না, কেকেআরের হয়ে ভালো ক্রিকেট খেলা। আমি ঠিক সেটাই করব।
প্রশ্ন: কেকেআরে ফিরছি। এবারের টিম যথেষ্ট ভালো। কিন্তু গতবারের টিমে বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এবার নেই। নীতীশ রানা। শ্রেয়স আইয়ার। মিচেল স্টার্ক। ফিল সল্ট। এটা জানি যে, আপনি নেতা হওয়ার জন্য অধিনায়কত্বে বিশ্বাস করেন না। কিন্তু লিডার হিসেবে আপনার দায়-দায়িত্ব এবার কতটা বাড়বে?
ভেঙ্কটেশ: আমি বলব, 'লাইক টু লাইক' রিপ্লেসমেন্ট পেয়েছি আমরা। আমাদের গুরবাজ আছে। গতবার ও দু'টো ম্যাচে খেলার সুযোগ পেয়ে পারফর্ম করেছিল। কুইন্টন ডি'কক রয়েছে। যে প্রমাণিত টি-টোয়েন্টি ওপেনার ও উইকেটকিপার। স্পেনসর জনসন আছে। আনরিক নখিয়া আছে। অজিঙ্ক রাহানের মতো দারুণ অধিনায়ক রয়েছে। টিমের সহ-অধিনায়ক হিসেবে আমার ভূমিকা হবে, অজিঙ্ককে সমর্থন করা। আর মাঠে নামলে, পুরোটাই ব্যাট-বলের স্কিলের ব্যাপার। যা কথা বলার, আপনার ব্যাটিং বা বোলিং বলবে। টিমকে কিন্তু দারুণ দেখাচ্ছে। কম্বিনেশনও দুর্দান্ত। বিশ্বাস করি, এ বছরও আমরা স্পেশাল কিছু করে দেখাতে পারব।
প্রশ্ন: গৌতম গম্ভীরও তো নেই। গতবার যিনি আপনাদের মেন্টর ছিলেন।
ভেঙ্কটেশ: জিজি স্যরকে (গম্ভীরকে যে নামে ডাকা হয়) মিস করব আমি। অভিষেক নায়ার সারকেও করব। তবে টিমে ডিজে ব্র্যাভো (ডোয়েন ব্র্যাভো) এসেছে মেন্টর হিসেবে। যে যথেষ্ট যোগ্য। একটা তথ্য দিই। ব্র্যাভো কিন্তু সবচেয়ে অভিজ্ঞ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটার। ছ'শোর উপর টি-টোয়েন্টি খেলেছে ও। ব্র্যাভো আসায় অনেক সুবিধেও হবে। কারণ, ও আমারই মতো ডায়নামিক। এ ছাড়াও চান্দু স্যর (চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত) রয়েছেন। দেশজ ক্রিকেটে যিনি অসম্ভব সম্মাননীয় চরিত্র। দেখুন, সাপোর্ট স্টাফরা মোটামুটি একই। আসল হল, কোচদের সঙ্গে সঠিক ভাবে 'কানেক্ট' করা।
প্রশ্ন: আপনি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিশাল ভক্ত শুনেছি। একজন লিডার হিসেবে সৌরভের থেকে অনুপ্রেরণা নেন?
ভেঙ্কটেশ: অবশ্যই। ভারতের 'ওজি' লিডারদের তালিকা যদি তৈরি করতে হয়, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম একদম উপরে থাকবে মহেন্দ্র সিং ধোনির সঙ্গে। আমি তো বলব, ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য দাদা যা করে গিয়েছেন, আর কেউ করতে পারবে না। ব্যাটিং, অধিনায়কত্ব, আগ্রাসন- সমস্ত দিক থেকেই দাদা আমার আদর্শ। তবে আমার লিডারশিপের ধরনটা আলাদা। আমার স্টাইল হল, টিমের সবাইকে বোঝানো যে এটা তাদের টিম। লিডাররা তো তাই করে। কারণ, দিনের শেষে যে সমস্ত ব্যক্তি মিলেজুলে একটা টিম তৈরি হয়।
প্রশ্ন: নিজের ব্যাটিং পজিশন নিয়ে কিছু ভেবেছেন? কেকেআরে এক থেকে সাত নম্বর, নানা পজিশনে আপনার খেলা হয়ে গিয়েছে।
ভেঙ্কটেশ: আমার ব্যাটিং পজিশন সব সময় 'ফ্লোটার' হিসেবেই থেকেছে। আর আমার সেটাই ভালো লাগে। বিভিন্ন পজিশনে ব্যাটিং করলে নতুন সমস্ত দায়িত্ব নেওয়া যায়। আমার মনে আছে, আরসিবির বিরুদ্ধে একবার আমি নেমে হাফসেঞ্চুরি করেছিলাম। আবার পরের ম্যাচে নেমে খেলেছিলাম মাত্র একটা বল, ইনিংসের শেষ বল। ক্রিকেটে এটাই হয়। আসল হল, তোমার কাছে টিম যা চাইছে, তা তুমি করতে পারছো কি না?
প্রশ্ন: টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে রজত পাতিদারের আরসিবির বিরুদ্ধে নামবেন আপনি। যিনি আপনার মধ্যপ্রদেশ সতীর্থ। যাঁর সঙ্গে বসে আপনি নিলাম দেখেছিলেন। কোনও বার্তা দেবেন নাকি বন্ধুকে?
ভেঙ্কটেশ: রজতের জন্য সত্যি ভালো লাগছে। ওর ক্রিকেটীয় উত্থান চোখের সামনে আমি দেখেছি। আমার অত্যন্ত প্রিয় ব্যাটার রজত। আমরা দু'জনেই ইন্দোরের ছেলে। আর তাই রজতের আরসিবি-র নেতৃত্ব দেওয়া, ইন্দোরের জন্য গর্বের মুহূর্ত। এটুকু বলব, রজতের আরসিবির বিরুদ্ধে লড়াইটা জমবে। আইপিএলের শুরুটা দারুণ হবে।